ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

মিথ্যাচারের রাজনীতি

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মিথ্যাচারের রাজনীতি

রাজনীতিবিদরা সর্বদাই মিথ্যাচার করে এসেছেন। এ জাতীয় অসাধুতা নতুন কিছু নয়। কিন্তু কিছু কিছু রাজনীতিক এখন যেভাবে মিথ্যাচার করছেন এবং সে মিথ্যাচারের পরিণতিতে যেসব বিপর্যয় ঘটছে সেটাই উদ্বেগের বিষয়। মিডিয়ার বিবর্তন ওই মিথ্যাচারে সহায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংবাদের উৎস বা সূত্রগুলো ভাঙতে ভাঙতে আজ এমন এক জগত গড়ে উঠেছে যেখানে মিথ্যাচার ও গুজব ভয়াবহ গতিতে বিস্তার লাভ করে এবং অতিদ্রুত সত্যের রূপ ধারণ করে বসে। এ এমন এক জগত যেখানে মিথ্যাচারের চাতুরির শিকার হয়ে মানুষের মধ্যে সত্য বা বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা পেয়ে বসে। এ যে কী সর্বনাশা পরিণতি ডেকে আনতে পারে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা দিয়েই শুরু করা যাক। তিনি সমানে মিথ্যাচার করে গেছেন এবং করছেন। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রতিষ্ঠাতা এবং হিলারি ক্লিনটন সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তার এ উক্তি শুনে ট্রাম্পের নিজের সমর্থকদের অনেকে হতবাক হয়েছেন এবং ভেবেছেন, নিশ্চয়ই তিনি আক্ষরিক অর্থে সেটা বোঝাননি। হিউজ হেউইট নামে এক রক্ষণশীল রেডিও হোস্ট মন্তব্য করেছেন, সম্ভবত ট্রাম্প বলতে চেয়েছেন, ওবামা প্রশাসন যেরূপ তড়িঘড়ি করে ইরাক থেকে সৈন্য সরিয়ে নিয়েছিল তাতে একটা শূন্যতার সৃষ্টি হয় এবং সন্ত্রাসবাদীরা তখন ওই শূন্যতা পূরণ করে দিয়েছে। কিন্তু না, ট্রাম্প তার বক্তব্য থেকে একচুল নড়তে নারাজ। হেউইটকে তিনি বলেন, ‘না, না, আমি বলতে চেয়েছি ওবামাই আইসিসের প্রতিষ্ঠাতা। তিনিই ছিলেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কুশীলব। হিলারি ক্লিনটনও তাই।’ তার এ কথার যৌক্তিকতা না মেনে হেউইট পাল্টা বলেছিলেন, ‘কিন্তু ওবামা তো ওদের প্রতি সহানুভূতিশীল নন। উনি তাদের ঘৃণা করেন। তাদের মেরে ফেলার চেষ্টা করছেন। ওতেও ট্রাম্প নিজের অবস্থান থেকে এক ইঞ্চি টলেননি। বরং বলেন, ‘কী করেছেন তাতে কিছু আসে যায় না। তিনিই আইসিসের প্রতিষ্ঠাতা। ঠিক আছে?’ অনেক পর্যাবেক্ষকের মনে হয়েছে দু’জনের এ কথোপকথনই আরেক প্রমাণ যে, বিশ্ব মিথ্যাচারের রাজনীতির এমন এক যুগে প্রবেশ করেছে যেখানে ট্রাম্পের মতো ব্যক্তিরা যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের উক্তিগুলো ভোটারদের মনে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে ততক্ষণ বাস্তবতার সঙ্গে তাদের বক্তব্যের কোন সম্পৃক্ততা আছে কি-না তা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামান না। এভাবে তিনি বাস্তবতা বিবর্জিত এক মিথ্যাচারের জগতে দিব্যি বলে বসতে পারেন যে, ওবামার জন্মের সার্টিফিকেটটি ছিল জাল। বলতে পারেন যে, ক্লিনটন দম্পতি ছিলেন খুনী। বলতে পারেন, জন কেনেডিকে গুলি করার আগে লী হার্ভে অসওয়াল্ডের সঙ্গে ছিলেন কেনেডির এক প্রতিদ্বন্দ্বীর বাবা। বাস্তব তথ্য-পরিসংখ্যানের তোয়াক্কা না করেই তিনি অবলীলায় বলতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শহর-নগরে অপরাধ রেকর্ডমাত্রায় পৌঁছেছে। বাস্তবে যার ভিত্তি নেই তেমন কিছুকে সত্য বলে ধরে জোরালো উক্তি করার ওপর নির্ভরশীলতাই হলো মিথ্যাচারের রাজনীতি। ট্রাম্প হলেন এ নতুন রাজনীতির প্রবক্তা। অথচ এ নির্লজ্জ মিথ্যাচার বা বেহায়াপনার জন্য তার শাস্তি হয় না বরং এলিট শক্তির মোকাবেলায় তার আগ্রহের পরিচয় বলে ধরা হয়। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প একা নন, পোল্যান্ড সরকারের সদস্যরা জোর গলায় বলে থাকেন যে, বিমান দুর্ঘটনায় নিহত পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টকে হত্যা করেছে রাশিয়া। গত জুনে ব্রিটেনবাসী ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিল ভ্রান্ত তথ্যের প্রচারাভিযানের ভিত্তিতে, যার মধ্যে একটি মিথ্যা তথ্য ছিল এই যে, ইইউর সদস্যপদের জন্য ব্রিটেনের সপ্তাহে ৩৫ কোটি পাউন্ড স্টার্লিং ব্যয় হয়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা তো পার্লামেন্ট ও সংবাদপত্রের কাছে কত মিথ্যাচার করেছেন, যেমনটি করেছিলেন এন্থনি ইডেন সুভারজ সঙ্কটের সময়। লিন্ডন জনসন টনকিন উপসাগরের ঘটনা সম্পর্কে মার্কিন জনগণকে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে আমেরিকাকে ভিয়েতনাম যুদ্ধে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে রোনাল্ড রিগ্যান জোর দিয়ে বলেছিলেন, তার প্রশাসন জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে ইরানকে অস্ত্র দেয়নি। কয়েক মাস পর স্বীকার করেছিলেন এই বলে : ‘আমার অন্তর বলে সেটাই সত্য কিন্তু বাস্তবতা ও তথ্যপ্রমাণ বলে সেটা সত্য নয়।’ অবশ্য মিথ্যাচারের রাজনীতির চরিত্র যে কত বদলে গেছে রিগ্যানের এ শেষের উক্তি তার প্রমাণ। ১৯৫০-এর দশকে মার্কিন সিনেটর জোসেফ ম্যাকার্থী মার্কিনবিরোধী তৎপরতার মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে বহু নামীদামী ব্যক্তির বিরুদ্ধে উইচ হান্টিং চালিয়েছিলেন। তুরস্কে ২০১৩ সালের বিক্ষোভ ও সাম্প্রতিক ব্যর্থ অভ্যুত্থান নিয়েও নানা ধরনের মিথ্যাচার হয়েছে রাজনীতিক মহলে। প্রথমটির ব্যাপারে বলা হয়েছিল, জার্মান এয়ারলাইন লুফথানসা তার ব্যবসায়িক স্বার্থে ওই বিক্ষোভে অর্থ যুগিয়েছিল। আর দ্বিতীয়টির ব্যাপারে বলা হয়েছে, এর পেছনে সিআইয়ের হাত আছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন নির্দ্বিধায় টেলিভিশনে বলেছেন, ইউক্রেনে কোন রুশ সৈন্য নেই। অথচ যথেষ্ট প্রমাণ আছে যে, তারা আছে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত রুশ টিভি ভুয়া প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাতকার প্রচার করে ইউক্রেনী সৈন্যদের নারকীয়তার লোমহর্ষক কাহিনী প্রচার করছে। তার মধ্যে এমন ঘটনাও নাকি আছে যে, সেখানে এক শিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে মারা হয়েছে। এক সাংবাদিক তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ‘পুতিনের রাশিয়ায় কোনকিছুই সত্য নয় এবং সবকিছুই সম্ভব।’ ইনস্টিটিউট অব মডার্ন রাশিয়া নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সোভিয়েত আমল সম্পর্কে বলেছে, নেতারা যদি তখন মিথ্যা কথা বলতেন তারা এটা প্রমাণ করার জন্য যতœবান থাকতেন যে, তারা যা বলছেন তা সত্য। এখন কেউ সত্যটা প্রমাণ করারও চেষ্টা করে না। এখন যা খুশি বলা যায়। বাস্তবতা সৃষ্টি করা যায়। ২০০৩ সালে ইরাক হামলার আগে প্রেসিডেন্ট বুশ ও তার ভ্রান্ত ধারণার ভিত্তিতে এ মিথ্যা যুক্তি হাজির করেছিলেন যে, সাদ্দামের হাতে ব্যাপক বিধ্বংসী মারণাস্ত্র আছে। পরে প্রমাণিত হয়েছে সাদ্দামের এমন অস্ত্র ছিল না। কিন্তু তার আগেই একটি দেশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ওই ভ্রান্ত ধারণার সংশোধনীও বেরিয়েছিল। কিন্তু তখন যুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ উভয় মহলই তা চেপে গিয়েছিল বা নষ্ট করে ফেলেছিল। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ব্রিটনরা মনে করে যে, ব্যবসায় নেতা, সাংবাদিক ও সরকারের মন্ত্রীরা নাপিত ও রাস্তার মানুষটির চেয়েও দ্বিগুণ বিশ্বাসযোগ্য। ব্রেক্সিট ও ট্রাম্পের প্রচারাভিযান থেকে পর্যাপ্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, সত্যপরবর্তী এ যুগটিতে সত্য ও মিথ্যা, সততা ও অসাধুতা, কল্পনা ও বাস্তবের মধ্যে বিভাজন রেখা অস্পষ্ট বা ঝাপসা হয়ে গেছে। মিথ্যাচারে অন্যদের প্রতারিত করা একটা চ্যালেঞ্জের একটা খেলা এবং পরিশেষে একটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্পের প্রচারাভিযানে প্রমাণিত হয়েছে তার ৭৬ শতাংশ বক্তব্যই মিথ্যা। সে তুলনায় হিলারি মিথ্যাচার করেছেন ২৯ শতাংশ। বাস্তবতা নয়, এ ধরনের প্রচারাভিযানে ভোটারদের মনে অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারাটাই আসল কথা। রাজনীতি আজ হয়ে দাঁড়িয়েছে নোংরা ব্যবসা। আমেরিকায় হোক আর অন্যত্র হোক, রাজনীতিতে একটা পরিবর্তন ঘটে গেছে। সেখানে প্রকৃত তথ্যের চেয়ে অনুভূতিকেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বেশি। নতুন প্রযুক্তির সহায়তায় নানা ধরনের তথ্যপ্রবাহের সুযোগ নিয়ে কিছু কিছু রাজনীতিক বিকৃত ধরনের মিথ্যাচার করে পার পেয়ে যাচ্ছে। আজ ক্রমবর্ধমানসংখ্যক রাজনীতিক সত্যতা নিয়ে পরোয়া করেন না। কোন ধারণাকে তিনি বা তারা সঠিক মনে করছেন কি-না সেটাই বড় কথা। সত্য বলে ধরে নেয়া এবং বাস্তব সত্য- এ দুয়ের মধ্যে ব্যবধান বাড়ছে। বাস্তব সত্যকে বাদ দিয়ে সত্য বলে কোনকিছুকে ধরে নিয়ে রাজনীতি করা এখন বিশ্বের অনেক দেশেই ঘটছে। এ রাজনীতি যারা করেন তারা মনে করেন মানুষ স্বভাবতই সত্যের সন্ধান করে না। বরং বেশকিছু গবেষণায় দেখা গেছে, তারা সত্যকে এড়িয়ে চলে। মানুষ যেসব তথ্যের সংস্পর্শে আসে সেগুলোকে সহজাতভাবে সত্য বলে গ্রহণ করে। নোবেলজয়ী মনস্তত্ত্ববিদ ড্যানিয়েল কাহলেম্যানের ভাষায় বলতে গেলে মানুষের একটা প্রবণতাই থাকে সেসব তথ্য দূরে সরিয়ে রাখা, যেগুলো তাদের মস্তিষ্ককে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য করবে। মানুষের মধ্যে এ পক্ষপাতিত্ব থাকায় মিথ্যাচারের রাজনীতি ফায়দা লুটতে পারে। মিথ্যাচারের রাজনীতি সম্ভব হয়েছে দুটি কারণে- এক. সমাজের অবকাঠামো ধরে রাখা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মানুষের আস্থা হারিয়ে যাওয়া এবং দুই. তথ্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে সুগভীর পরিবর্তন। পশ্চিমা বিশ্বের সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা সর্বকালের সর্বনিম্নে এসে দাঁড়িয়েছে। এ কারণেই অনেকে তথাকথিত নির্ভরযোগ্য রাজনীতিকদের পছন্দ করে যারা লোকের অনুভূতি, তারা যা ভাবে সে কথা বলে। এ শ্রেণীর মানুষ মিথ্যাচারের রাজনীতির সহজ শিকার হয়। এদের কাছেই ‘আপনি যা ভাবেন বা বিশ্বাস করেন শুধু সেটার ওপরই আস্থা রাখুন’- ট্রাম্পের এ জাতীয় প্রচারাভিযান গ্রহণযোগ্যতা পায়। সেই ধারণা বা বিশ্বাস সঠিক কি-না তা বলার কেউ নেই। মিথ্যাচারের রাজনীতি প্রসারের দ্বিতীয় বড় কারণ ইন্টারনেট ও এর আনুষঙ্গিক সার্ভিসগুলোর বিকাশ। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্ক এখন সামাজিক মিডিয়ায় সংবাদ পায়। এদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ফেসবুক, রেভিট, টুইটার বা হোয়াটসএ্যাপে এখন যে কেউ প্রকাশক বনে যেতে এবং প্রকাশিত কনটেন্ট নিয়ে আসতে যা পাঠকদের মধ্যে নির্ধারিত প্রত্যাশার জন্ম দিতে পারে। কনটেন্ট যে কোন রূপে হতে পারে- ভিডিও, চ্যাট কিংবা এ্যানিমেশন। এখানে ব্যবহৃত তথ্য ও উপাত্তগুলোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো বাস্তব তথ্যভিত্তিক কি-না সেটা বড় কথা নয়। সেই তথ্যাবলীকে কেন্দ্র করে সমমনা মানুষগুলো গুচ্ছ-গুচ্ছভাবে জড়ো হচ্ছে। ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে কেবল ও সাটেলাইট টিভি চ্যানেলের আবির্ভাবের ফলে নির্দিষ্ট ধরনের গ্রাহকদের উপযোগী করে সংবাদ পরিবেশন সম্ভব হয়ে উঠেছিল। ইন্টারনেট সেই কাজটাকে আরও সহজ করে তুলেছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়োচাই রেংকলার তার দি ওয়েলথ অব নেটওয়ার্ক গ্রন্থে বলেছেন, অভিন্ন স্বার্থসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের অফলাইনের পরিবর্তে তথ্যের অনলাইন উৎসকে ঘিরে পরস্পরের সঙ্গে কিংবা সমষ্টিগতভাবে একত্রিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। সোশ্যাল মিডিয়া পরস্পরবিরোধী তথ্যের আগমন বন্ধ করে দিয়ে এসব গ্রুপের সদস্যদের একে অপরের বিশ্বাস জোরদার করে তোলা ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব করে তোলে। এই শ্রেণীর মানুষদের কাছে মিথ্যা প্রচার সহজতর হয়। কারণ যেহেতু তারা সত্য-মিথ্যা যাচাই করার চেষ্টা করে না বরং সে চেষ্টা এড়িয়ে চলে তাই মিথ্যাচারগুলো তাদের কাছে সহজে গ্রহণযোগ্যতা পায়। এভাবেই সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে এই শ্রেণীর মানুষের মধ্যে এমন বিশ্বাস দানা বাঁধে যে, ওবামা সরকার বিমান থেকে কেমট্রেইল ছিটাচ্ছে। এরা সহজে বিশ্বাস করে যে, যেসব ভ্যাকসিন অটিজমের কারণ ঘটায় তা চেপে যাওয়া হচ্ছে। এদের কাছেই ট্রাম্পের এই অপপ্রচার গ্রহণযোগ্যতা পায় যে, ওবামা আমেরিকান হিসেবে জন্ম নেননি। এরাই বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রতত্ত্বে বিশ্বাস করে বসে এবং অচিরেই জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটবে বা সন্ত্রাসী হামলা হবে এমন সব ভয়াবহ ঘটনার আশঙ্কার বশবর্তী হয়। ট্রাম্পের প্রতি এই শ্রেণীর মানুষের বেশি সমর্থন দেখা যায়। তবে ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক মিডিয়া গ্রাহকদের প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংবাদ পরিবেশন করতে পারলেও সেসব সংবাদের মধ্যে কোন্টি সত্য তা নির্ণয়ে যথেষ্ট দুর্বল। এক জরিপে দেখা গেছে, ফেসবুকে পরিবেশতি ভুল তথ্যসংবলিত নিবন্ধ আর নির্ভরযোগ্য তথ্যসংবলিত নিবন্ধ উভয়েই একই রূপে শেয়ার করা হয়েছে। অন্য কথায় বলতে গেলে আজ সঠিক তথ্য পরিবেশনের মধ্যে বাড়তি কোন সুবিধা নেই। আর নেই বলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যাচার ও গুজব ডালপালা মেলে ধরার সুযোগ পায়। অনেকেই সেগুলো শেয়ার করে। এজন্য দ্বিতীয়বার ভেবে দেখারও প্রয়োজন মনে করে না। সেগুলো সত্য না মিথ্যা তা যাচাই করে দেখা তো আরও পরের কথা। নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার যুগ শেষ হয়ে গেছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। সোশ্যাল মিডিয়ার এত বিস্তার, এত অসংখ্য ওয়েবসাইটের অস্তিত্ব যে, এখানে বস্তুনিষ্ঠ থাকা অসম্ভব। এখানে তথ্যের বিশাল সমুদ্র থেকে যা বেছে নেয়া হচ্ছে তা আগে থেকেই বিষয়ীগত- বস্তুনিষ্ঠ নয়। এখানে সংবাদের অসংখ্য উৎস থেকে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। ভুয়া সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। আর তারই সুযোগ নিচ্ছেন ট্রাম্পের মতো রাজনীতিকরা। নবেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্প যদি হেরে যান তাহলে অন্তত যুক্তরাষ্ট্রে মিথ্যাচারের রাজনীতি অত ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে না। তবে রাশিয়া ও তুরস্কের মতো দেশগুলোতে যেখানে স্বৈরাচরী শাসকরা বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার জন্য মিথ্যাচারের রাজনীতিকে কৌশল হিসেবে কাজে লাগায়, সেখানে এই রাজনীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×