ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবর্তন আসছে রমনা পার্কে, করা হবে পাখির অভয়ারণ্য

প্রকাশিত: ০২:১৫, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পরিবর্তন আসছে রমনা পার্কে, করা হবে পাখির অভয়ারণ্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রমনা পার্ককে আরও নান্দনিক করে গড়ে তুলতে পার্ক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসছে। উদ্যানের জন্য ক্ষতিকর মেহেগুনি গাছগুলো অপসরণ করে দেশের ঐহিত্য রক্ষা পায় এমন গাছ রোপন করা হবে। পার্কের লেক বিরল প্রজাতির জলজ উদ্ভিদে সমৃদ্ধ করে তোলা হবে। শুধু তাই নয়, নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলকে পাখির জন্য অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে সেই অঞ্চলে নিষিদ্ধ করা হবে সাধারণ মানুষের যাতায়াত। শৌচাগারগুলোকে আরও আধুনিক ও উন্নত করা হবে এবং তা ব্যবহারে জনসাধারণকে ব্যয় করতে হবে নির্দিষ্ট অর্থ। পার্কের প্রবেশপথগুলো করা হবে আরও সবুজ ও বর্ণিল। শনিবার সকালে রাজধানীর রমনা রেস্তোঁরায় রমনা পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, ঐতিহ্য সুরক্ষা ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণের বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। ওই পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন। এতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন’র (বাপা) প্রতিনিধি, গণপূর্ত মন্ত্রণায়লের কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট প্রকৃতিবিদরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন বলেন, আমরা সবাই একমত হয়েছি- রমনা পার্ককে বাঁচাবো। এখানে নতুন করে এমন বৃক্ষ লাগাবো, যা আমাদের ঐতিহ্য রক্ষা করে। এখানে পহেলা বৈশাখের মেলা ছাড়া অন্য কোন মেলা হবে না। শৌচাগারগুলোকে আরও উন্নত করা হবে, ব্যবহারকারীরা তা নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়েই ব্যবহার করতে পারবে। তিনি বলেন, অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা যে গাছগুলো লাগিয়েছেন তার গায়ে যেন নাম ফলকের মাধ্যমে তা চিহ্নিত করা হয়। উন্নত দেশগুলোর পার্কে এ ব্যবস্থা রয়েছে। র্জজ ওয়াশিংটনের লাগানো গাছে এখনও নাম ফলক রয়েছে। এসময় সোহরাওয়ার্দী প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেও সুন্দরভাবে সাজাবো। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কেন্দ্র নির্মাণের কাজ দ্রুতই শুরু হবে। ৭ মার্চের ভাষণের স্থানটি তারা নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা বলেছিলাম শিশুপার্ক উঠিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শিশুপার্ক থাকবে, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কেন্দ্রে শিশুরা যাবে, প্রতিটি ঐতিহাসিক স্থানকে তারা নিজ চোখে দেখবে। কোন যায়গায় ভাষণ দেওয়া হয়েছে, শিশুরা তাও দেখবে। সংসদ ভবন সংলগ্ন জিয়ার মাজার সরানো প্রসঙ্গে মন্ত্রী আরও বলেন, লুই কানের নকশায় যদি কোন কবরস্থান থাকে তাহলে কবর থাকবে, না থাকলে থাকবে না। আলোচানায় অংশ নিয়ে নিসর্গবিদ ও লেখক অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা বলেন, আমার অভিজ্ঞতা ও কর্মে যা কিছু অর্জন করেছি সবকিছুই পার্কের জন্য ব্যয় করবো। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন’র (বাপা) প্রতিনিধি শাহজাহান মৃধা বেনু বলেন, আমি এই সিদ্ধান্তগুলোতে মুগ্ধ। গাছের পাতাগুলো যেন পার্কে স্তুপাকারে রাখা না হয়। প্রয়োজনে তা সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে অপসারণ করাতে হবে। আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা যুক্তি তুলে ধরে বলেন, রমনা পার্কের মেহেগুনি গাছগুলো কেটে ফেলা হবে। এগুলো উদ্যানের জন্য ক্ষতিকর। মেহেগুনি গাছের পরিবর্তে ওই স্থানগুলো পরিবেশবর্ধক ও উদ্যানের জন্য উপকারী গাছ রোপন করা হবে। কিছু কিছু গাছের ডাল-পালা ছাটাই করতে হবে। রমনায় একটিমাত্র বট গাছ আছে, তা যেন ঠিকভাবে বেড়ে উঠে তা নিশ্চিত করা হবে। প্রয়োজনে বটের আশেপাশের গাছগুলো কাটা হবে। পাখির জন্য অভয়ারণ্য গড়ে তোলার জন্য পার্কের একটি অঞ্চলকে চিহ্নিত করা হবে। সেখানে মানুষের যাতায়ত নিষিদ্ধ করা হবে। বক্তারা বলেন, পাখি যেসব গাছ পছন্দ করে, সেসব গাছ রোপন করা হলে সেসব গাছে পাখি বাসা বাঁধবে। গাছের পাতার স্তুপ পার্কে রাখা যাবে না, তা দ্রুত সময়ের মধ্যে অপসরণ করতে হবে। পার্কের লেক খনন করা হবে। বিরল প্রজাতির জলজ উদ্ভিদে লেক সমৃদ্ধ করে তুলতে হবে। জাতীয় ফুল শাপলার প্রসার ঘটাতে হবে। পার্কের জন্য সবুজ ও বর্ণিল প্রবেশপথ দরকার। তারা আরও বলেন, শহরের মানুষের সঙ্গে যাতে পার্কের যোগসূত্র থাকে তা মাথায় রাখতে হবে। পার্ক ব্যবস্থাপনা, সুবিধামূলক নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থা ও শৌচাগারগুলোর ব্যবস্থা উন্নয়নে কাজ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পার্কে যেসব কনস্ট্রাকশন (অবকাঠামো) হচ্ছে- তা নিয়েও সিদ্ধান্ত হওয়া উচিৎ। কোন স্থাপনা অপ্রয়োজনীয় হলে তা সরিয়ে ফেলা উচিৎ। সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থাপিত মতামতে এসময় বেসরকারি বিশেষজ্ঞরা একমত হন এবং এসব সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর করার তাগিদ দেন। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার শহীদুল্লাহ, প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সি, প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসের।
×