ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধের হুমকি দিয়ে আরও চাপে গুরুঙ্গ

প্রকাশিত: ২০:২১, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বন্ধের হুমকি দিয়ে আরও চাপে গুরুঙ্গ

অনলাইন ডেস্ক ॥ চাপের মুখে পাহাড়ে ফের বন্‌ধের হুমকি দিয়ে ঘরে-বাইরে আরও প্রবল চাপের মধ্যে পড়ে গেলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান বিমল গুরুঙ্গ। দলীয় সূত্রের খবর, পুজোর মরসুমের মুখে এমন হুট করে বন্‌ধের ঘোষণায় পাহাড়ের জনমত আরও বিপক্ষে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা মোর্চার প্রথম সারির অনেক নেতারই। তাঁরাও ক্ষুব্ধ। তাই তাঁরা বন্‌ধ এড়িয়ে অন্য ভাবে প্রতিবাদের জন্য গুরুঙ্গের উপরে চাপ দিতে শুরু করেছেন। সেই সঙ্গে পাহাড়ে সফররত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও শুক্রবার কালিম্পংয়ের এক সরকারি সভায় বলেছেন, ‘‘এনাফ ইজ এনাফ। পাহাড়ে আর বন্‌ধ করতে দেওয়া হবে না।’’ সেখান থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ, ‘‘কী ভাবে পাহাড়ে বন্‌ধ হয় দেখব। আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। আমি ভয় পাই না। ভয় দেখাই না।’’ গুরুঙ্গের বন্‌ধের হুমকিতে মাথায় হাত পড়েছে দার্জিলিং ও সিকিমের পর্যটন মহলেরও। সরকারি সূত্রের খবর, সিকিমের পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে এমনকী কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি আঁচ করে আসরে নেমেছেন মোর্চা সমর্থিত বিজেপির দার্জিলিঙের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় কৃষি এবং সাংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াও। তিনি বলেন, ‘‘আগে আমাদের অনুরোধে পাহাড়ে বন্‌ধের রাস্তা থেকে গুরুঙ্গ সরেছেন। তবে এ বারের বিষয়টি জানা নেই। কথাবার্তা বলছি।’’ কিন্তু, মোর্চা প্রধান হঠাৎ বন্‌ধের হুমকি দিলেন কেন? মোর্চার অন্দরের খবর, চলতি সফরে মুখ্যমন্ত্রী নানা সম্প্রদায়ের জন্য আরও ৩টি বোর্ড গড়ায় মোর্চার ভোট ব্যাঙ্কে ভাঙন বেড়েছে। তার উপরে গত চার বছরে জিটিএ-কে নানা খাতে দেওয়া প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার হিসেব দাখিলের জন্য সুরও চড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তাতেই সমস্যায় পড়েছেন গুরুঙ্গ। তিনি পাল্টা চাপ দিতে দাবি করেছেন, ‘‘পরিকল্পনা খাতে রাজ্য মাত্র ২৩৮ কোটি টাকা দিয়েছে। বাকি টাকা কেন্দ্র নানা খাতে বরাদ্দ করেছে। কাজেই মুখ্যমন্ত্রী বলতে পারেন না যে, রাজ্য ৪ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে।’’ তারপরেই গুরুঙ্গের ঘোষণা, ‘‘হয় মুখ্যমন্ত্রীকে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হিসেব দিতে হবে, না হলে মন্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। হিসেব না পেলে ২৮ সেপ্টেম্বর পাহাড়ে ১২ ঘণ্টার বন্‌ধ হবে।’’ পাহাড়ের নেতারা অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, একদা সুবাস ঘিসিঙ্গের বিরুদ্ধে উন্নয়নের জন্য বরাদ্দের হিসেব চেয়েই প্রচারের শিরোনামে ঠাঁই করেছিলেন গুরুঙ্গ। এখন নিজেই সেই অঙ্কের সামনে বসে তিনি পাল্টা আক্রমণের রাস্তা নিয়েছেন। মোর্চারই কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা একান্তে জানান, গুরুঙ্গ ভুল পদক্ষেপ করেছেন। কেননা, পরিকল্পনা ও পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে গত ৪ বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা যে জিটিএ পেয়েছে, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু, সরকারি কর্মচারিদের মাইনে ও আনুষাঙ্গিক খরচের টাকাই রয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। আর মুখ্যমন্ত্রী তো বলেনওনি যে, তিনি শুধু পরিকল্পনা খাতেই ওই টাকা দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন কালিম্পঙের সভায় গুরুঙ্গদের উদ্দেশে বলেন, মনে রাখতে হবে, যেখান থেকেই টাকা আসুক, তা রাজ্যের ট্রেজারির মাধ্যমেই যায়। সব টাকাই সরকারি। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী সভায় বলেন, ‘‘ঠিকঠাক হিসেব দাখিল করুক। লাগলে বলুক, আরও টাকা দেব। কিন্তু, অশান্তি কিংবা আগুন জ্বালানোর চেষ্টা বরদাস্ত করব না।’’ তিনি জানান, পাহাড়ে যেমন আসেন, তেমনই আসবেন। পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের কুশপুতুল পোড়ানো হয়েছে। তাঁকেও তিনি আরও বেশি করে পাহাড়ে আসতে বলেছেন। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×