ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কাবাডি বিশ্বকাপে রানার্সআপ হওয়ার লক্ষ্য বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কাবাডি বিশ্বকাপে রানার্সআপ হওয়ার লক্ষ্য বাংলাদেশের

জাহিদুল আলম জয় ॥ ‘আমরা আগের দুই বিশ্বকাপেই ব্রোঞ্জ (তৃতীয়) জিতেছি। এবার আগের সাফল্য ধরে রেখে আরও ভাল করতে চাই। রানার্সআপ (রৌপ্য) হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই আমরা খেলব।’ স্বপ্নমাখা মুখে আশাবাদী এই কথাগুলো বাংলাদেশ জাতীয় কাবাডি দলের অধিনায়ক মোঃ আরদুজ্জামান মুন্সীর। শুক্রবার সাক্ষাতকারে এমন স্বপ্নের কথা শোনান টাইগার অধিনায়ক। তৃতীয় কাবাডি বিশ্বকাপ খেলতে রবিবার ভারত যাবে বাংলাদেশ জাতীয় কাবাডি দল। আহমেদাবাদে আগামী মাসের ৭ থেকে ২২ অক্টোবর হবে কাবাডির বিশ্বসেরা টুর্নামেন্ট। ২০ সদস্যের বাংলাদেশ দল টুর্নামেন্টে অংশ নেবে। এর মধ্যে ১৪ খেলোয়াড়, বাদবাকি কর্মকর্তা। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের লক্ষ্য, প্রস্তুতি ও সার্বিক দিক তুলে ধরতে শুক্রবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন। সেখানে কাবাডি সংশ্লিষ্ট প্রায় সবাই রানার্সআপ হওয়ার স্বপ্নের কথা শোনান। এবারের কাবাডি বিশ্বকাপে ১২টি দল দু’টি গ্রুপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশের সঙ্গে আছে গত দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও আর্জেন্টিনা। ‘বি’ গ্রুপে লড়বে ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, পোল্যান্ড, কেনিয়া, থাইল্যান্ড ও জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বকাপে চমক দেখানো নেপাল ও মালয়েশিয়ার এবার সুযোগ হয়নি। পাকিস্তান খেলতে পারছে না ভিসা জটিলতা ও আয়োজক ভারতে সঙ্গে বিরূপ সম্পর্কের কারণে। দুই গ্রুপের শীর্ষ দু’টি করে দল সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ পাবে। এরপর হবে ফাইনাল। বাংলাদেশের প্রাথমিক লক্ষ্য সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা। এমনই জানিয়েছেন অধিনায়ক আরদুজ্জামান মুন্সী। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এই সদস্য বলেন, আমাদের গ্রুপে ভারত সবচেয়ে শক্তিশালী। তাদের টেক্কা দেয়া সম্ভব নয়। আমাদের সেমিফাইনাল খেলতে হলে দক্ষিণ কোরিয়াকে অবশ্যই হারাতে হবে। কোরিয়া অনেক উন্নতি করেছে। তাদের কাছে হারলে কোন পদক জয়ের সম্ভাবনা থাকবে না। মাত্র দেড় মাসের প্রস্তুতি নিয়ে বিশ্বকাপে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এরপরও প্রস্তুতি সন্তুষ্ট বাংলাদেশ অধিনায়ক। এ প্রসঙ্গে ৩০ বছর বয়সী বাগেরহাটের খেলোয়াড় বলেন, আমাদের প্রস্তুতি বেশ ভাল হয়েছে। আশা করি ভাল করতে পারব। প্রথম লক্ষ্য থাকবে ব্রোঞ্জপদক ধরে রাখা। সেটি সম্ভব হলে রৌপ্যপদক জয়ের চেষ্টা করব। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য কেন না? এই প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ অধিনায়কের সরল স্বীকারোক্তি, ‘আসলে এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। ভারত খুব বেশি শক্তিশালী। ওদের হারানোর মতো দল আমরা না’। অধিনায়কের মতো অভিন্ন কথা বলেন কাবাডি দলের সহ-অধিনায়ক জাকির হোসেনও। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কাবাডি দলের অধিনায়ক তিনি। ৩০ বছর বয়সী সাতক্ষীরার এই খেলোয়াড় বলেন, আমরা আত্মবিশ্বাসী ব্রোঞ্জ ধরে রাখতে। এরপর লক্ষ্য থাকবে আরও ভাল করা। অধিনায়ক, সহ-অধিনায়কের মতো দলের আরেক খেলোয়াড় সবুজ মিয়াও ভাল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। কাবাডি দলের ম্যানেজার ও সিলেকশন কমিটির চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন চৌধুরী পারভেজ জাতীয় খেলা কাবাডিকে জাতীয় রূপ দিতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি আফসোসের সুরে বলেন, ক্রিকেট ও ফুটবলের সাফল্যে সংবর্ধনা দেয়া হয় অথচ আমাদের কাবাডি দলও সাফল্য পেয়েছে। কিন্তু কিছুই দেয়া হয়নি। জাতীয় এই খেলাটার প্রতি সবার আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামও আফসোস করেন। তিনি বলেন, সাকিব সাহেব (সাকিব আল হাসান) অসুবিধায় পড়লে নিউজ হয় অথচ আমাদের টুর্নামেন্ট হলে তার নিউজ হয় না। নজরুল ইসলামও আশাবাদী বাংলাদেশ আগের সাফল্য ধরে রাখতে পারবে। দেশে কোন প্রস্তুতি ম্যাচ না খেললেও ভারতে ২/৩টি ম্যাচ খেলবে বলে জানান তিনি। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতেই ১২ দিন আগে ভারত যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। সাধারণ সম্পাদক জানান, কাবাডিকে অলিম্পিকভুক্ত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। এজন্য কমপক্ষে ৫০টি দেশকে খেলতে হয়। কাবাডি দলকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে বাংলাদেশ এডিবল ওয়েল লিমিটেড (বিইওএল)। এই প্রতিষ্ঠানটির হেড অব সেলস্ এ্যান্ড মার্কেটিং সোয়েব মোঃ আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের অনুরোধ করে বলেন, তারা যেন খেলাটিকে ভাল কাভারেজ দিয়ে জনগণের কাছে তুলে ধরেন। সবাই রানার্সআপ হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও সোয়েব বলেন, বাংলাদেশ ব্রোঞ্জপদক পাওয়ার অবস্থায় নেই। আমার হৃদয়ে স্বর্ণ, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ব্রোঞ্জ পাওয়ার অবস্থায় নেই আমরা। উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে প্রথম ও ২০০৭ সালে কাবাডির দ্বিতীয় বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। এবার দীর্ঘ ৯ বছর পর তৃতীয় বিশ্বকাপের পর্দা উঠতে যাচ্ছে।
×