ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফকির বলাই শাহের সঙ্গী একতারা

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ফকির বলাই শাহের  সঙ্গী একতারা

লালন মতাদর্শের ফকির বলাই শাহ জীবনের অনেকটা সময় পার করেছেন বাউল গান গেয়ে। বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাউল গান পরিবেশন করে তিনি দেশ-বিদেশে দর্শক-শ্রোতাদের মিটিয়ে আসছেন মনের খোরাক। মানুষের জীবনের সুখ, প্রেম ও ভালবাসার পাশাপাশি তাঁর গান কথা বলে অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। এ গানই এখন বলাই শাহের জ্ঞান-ধ্যান সব কিছু। লালনের গান গেয়েই তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন মানুষের মাঝে সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে এলেও আজ পর্যন্ত তাঁর তেমন মূল্যায়ন হয়নি। পাননি তিনি প্রাতিষ্ঠানিক কোন স্বীকৃতি। বড় কষ্টের মধ্যে কাটছে তাঁর দিনকাল। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়া এলাকার লালন সঙ্গীতশিল্পী ফকির বলাই শাহ আধ্যাত্মিক ও বাউল গানে মুরিদ হন প্রয়াত ফকির আব্দুর রব ওরফে লবন শাহের কাছে। তাঁর সঙ্গীতের ওস্তাদ ছিলেন প্রয়াত আবুল হোসেন। ফকির বলাই শাহ অন্তত ৪৫টি জেলায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লালন সঙ্গীত পরিবেশন করে দর্শক-শ্রোতার মন জয় করেন। এছাড়া ভারতের শান্তি নিকেতনেও গান করেছেন। ২০০৭ সালে বিটিভির ‘গ’ গ্রুপের শিল্পী হিসেবে তিনি ‘হিজলতমাল’ অনুষ্ঠানে গান করেন। কিন্তু সম্মানী স্বল্প হওয়ায় পরবর্তীতে সেখানে আর গান গাওয়া হয়ে ওঠেনি। তাঁর গান শুনে দর্শক-শ্রোতা খুশি হয়ে যা দেয় তা দিয়েই চলে তাঁর সংসার। বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ সম্পর্কে বলাই শাহ বলেন, লালন ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সকল প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছেন মানবতাবাদকে। অসাম্প্রদায়িক এই মনোভাব থেকেই তিনি গান রচনা করতেন। তাঁর গান ও দর্শন বহু খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীসহ অসংখ্য মানুষকে প্রভাবিত করেছে। ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়।’ এ গানে তিনি মনের অভ্যন্তরের সত্তাকে তুলনা করেছেন এমন এক পাখির সঙ্গে; যা সহজেই খাঁচা রূপী দেহের মাঝে আসা-যাওয়া করে। কিন্তু তাকে বন্দী করে রাখা যায় না। লালনের গানের এই আধ্যাত্মিকতা তাঁকে প্রবলভাবে আকর্ষিত করে। তাই তিনি লালন মতবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর গান রপ্ত করতে শুরু করেন। প্রয়াত আনোয়ার হোসেন মন্টু শাহের সংগৃহীত আট শতাধিক গানের অধিকাংশই এখন বলাই শাহের মুখস্থ। তিনি বলেন, গানগুলো রপ্ত ও প্রকাশ করতে গিয়ে যখন বুঝলাম, আমি তো নিজেই মুরিদ না। তখন আমি গুরুর সন্ধান করতে থাকি। পরে আমি আব্দুর রব ওরফে লবন শাহের মুরিদ হই। আমি এখন লালনের গান নিয়েই ব্যস্ত। গান নিয়েই আমার পথ চলা। গানই আমার জ্ঞান-ধ্যান ও ধারণা সব কিছু। আর একতারা আমার নিত্যসঙ্গী। -এমএ রকিব, কুষ্টিয়া থেকে
×