ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিভৃতের শিল্পী মোজাহার হোসেন

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

নিভৃতের শিল্পী মোজাহার হোসেন

নীরবে নিভৃতে সুরের বলয় গড়ে তুলেছেন বগুড়ার মোজাহার হোসেন। বয়স ৬৫ পেরিয়েছে। তবু সুর তাঁকে ছাড়েনি। স্কুল জীবনেই সুরে হাতেখড়ি। তারপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে দর্শক-শ্রোতার মোহ সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। তারপর এগিয়ে চলার পালায় অডিশন দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ বেতার রাজশাহীর নিজস্ব শিল্পীর সি গ্রেডের তালিকায় নাম লেখান। ইথারে তার কণ্ঠ ভেসে আসে। তারপর আর থেমে থাকতে হয়নি। রাজশাহী থেকে রংপুর হয়ে ঢাকা বেতারের ট্রান্সক্রিপশন ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে তাঁর কণ্ঠের প্রবেশ। সাফল্যের এই যাত্রাপথে বেতার তাঁকে দিয়েছে বর্তমানে এ গ্রেডের মর্যাদা। এত কিছুর পরও তিনি নীরব। তাঁর গান অনেকে শুনেছে। কে এই শিল্পী! অনেকের কাছেই তিনি অচেনা। মোজাহার হোসেনের বাড়ি বগুড়ার শিববাটি এলাকায়। স্ত্রী তিন ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে সংসার। স্ত্রী গৃহবধূ। তার এক সন্তান মাসুদুজ্জামান গান শিখেছে। সে বেতারের শিল্পী। মোজাহার হোসেন লাইম লাইটে আসেন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর। ১৯৭৩ সালে বগুড়ার কলতান শিল্পীগোষ্ঠীর একঝাঁক প্রতিভাবান শিল্পীর দলে তিনিও যোগ দেন। মূলত তিনি আধুনিক গানের শিল্পী। তারপরও সব ধরণের গান তিনি গাইতে পারেন। আধুনিক গান তাকে খ্যাতি এনে দিয়েছে। প্রথম সারির গীতিকারের লেখা ও সুরকারের সুরে তিনি গান গেয়েছেন। ঢাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রমে সুবল দাস, সুজেয় শ্যাম, শেখ সাদী খান, আলী হোসেন, এ কে আজাদ মিন্টুর সুরে তিনি অনেক গান গেয়েছেন। তাঁর কণ্ঠে গানের গীতিকারদের মধ্যে আছেন রফিকুজ্জামান, মুন্সি ওয়াদুদ, নাসির আহমেদ, কবির বকুল। এর বাইরে তাঁর নিজের ও অন্য গীতিকারের গানে তিনি সুর দিয়েছেন। সুরের এক বৈচিত্র্য ভুবনই তাঁর ধ্যান। কে তাঁকে ডাকল কি ডাকল না এ নিয়ে তাঁর কোন ভাবনা নেই। তিনি গান গেয়ে যাবেন এই তাঁর ব্রত। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় দুই হাজার গান গেয়েছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে আছে- শেখ সাদীর সুরে ভালবাসা আমায় পর করেছে, সুজেয় শ্যামের সুরে ওই অস্তগামী সূর্যটাকে প্রশ্ন করো, নাসির আহমেদের লেখা সুবল দাসের সুরে মীর্জা গালিব আমি তো নই, রাজা হোসেন খানের সুরে কি হবে আমায় মনে রেখে। তাঁর যে এত গান তারপরও গানের কোন কমপ্যাক্ট ডিস্ক (সিডি) প্রকাশ করতে পারেননি। বললেন বিচিত্র এই জগতে এগিয়ে চলার পথটি কুসুমাস্তীর্ণ নয়। বেতারের এ গ্রেডের তালিকাভুক্ত শিল্পী হওয়ায় প্রতি মাসে তিনটি করে গান গাইতে হয়। গান জমা দেয়ার পর ডাক আসে রেকর্ডিংয়ের। বর্তমানে বাংলাদেশ বেতার রংপুরের নিয়মিত শিল্পী। এর বাইরে ঢাকার বাণিজ্যিক কার্যক্রম ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিস থেকে ডাক পড়লে সেখানে কণ্ঠ দেন। সারেগামাপাতে তাঁর হাতেখড়ি বগুড়ার আটাপাড়ার একদার খ্যাতমান শিল্পী আব্দুল্লাহেল বাকি। তিনিও বেতারে গান গাইতেন। রাজশাহী বেতারের সঙ্গীত পরিচালক আবদুল আজিজ বাচ্চু তাঁর কণ্ঠকে সুরের মাধুর্যে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করেন। এই দুই ব্যক্তিকেই তিনি সঙ্গীতের ‘ওস্তাদ’ হিসেবে হৃদয়ে লালন করেন। তবে তাদের বাইরেও আরও অনেকেই আছেন যারা তাঁকে হাত ধরে এগিয়ে দিয়েছে। মোজাহারের এত যে সুর তারপরও কেন তিনি সঙ্গীতের আলোকিত ভুবনে আসতে পারছেন না এই বিষয়টি তাঁকে যতটা না ব্যথিত করে তার চেয়ে বেশি আন্দোলিত করে তাঁকে মনে রাখবে শ্রোতারা। বর্তমানে তিনি রংপুর বেতারে গান গাওয়ার পাশাপাশি বগুড়া নাট্যদলের সঙ্গীত প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। বললেন প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে অনেক প্রতিভাবান আছে। তবে তারা খুবই ফার্স্ট ট্রাকে চলতে চায়। সুরের ব্যাকরণে তাদের মনোযোগ নেই। তিনি মনে করেন মেলোডি সুরের কোন মত্যু নেই। এই সুর চিরন্তন বলেই পুরনো দিনের গান সর্বকালের গান হয়ে থাকবে। এই সুর সৃষ্টি হয় ক্লাসিক্যাাল বা ধ্রুপদি অধ্যায় থেকে। মোজাহার হোসেন মনে করেন তাঁর গাওয়া সুরেলা গান একদিন শ্রোতাদের মনে গেঁথে যাবে। Ñসমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×