ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঘাতক প্রত্যর্পণ

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ঘাতক প্রত্যর্পণ

আত্মস্বীকৃত পিতৃঘাতকদের ফিরিয়ে এনে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে অবশেষে পিতৃ-মাতৃহীন কন্যাকেই উদ্যোগ নিতে হলো। বিচারে সাজাপ্রাপ্তদের দ-াদেশ কার্যকর করার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু পলাতকদের আটক করার কাজটি দুরূহপ্রায় ছিল আশ্রয়দাতাদের কারণে। যা বিস্ময়কর! বিশ্বে সভ্য দেশ হিসেবে যারা পরিচিত তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে খুনীরা লালিত-পালিত হয়ে আসছে। তাদের জানানো হয়েছে, এরা খুনী। দেশের আদালতে তাদের বিচার হয়েছে অনুপস্থিতিতে। আইন ও মানবতার স্বার্থে এদের ফেরত পাঠানোর দাবিটি দীর্ঘদিন ধরে মাথাকুটে মরছে। খুনীরা রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছে কোথাও কোথাও। কীভাবে সভ্য দেশ সাজাপ্রাপ্ত খুনীকে আশ্রয় দিতে পারে, তা বিস্ময় জাগায় বৈকি। কেন তারা খুনীদের লালন করছে এবং আশ্রয় দিচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলে আসছে, তাদের সংবিধানে উল্লেখ আছে, কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-াদেশ থাকলে তাকে তার দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না। সহজ অর্থ তবে দাঁড়ায়, সভ্য দেশগুলো খুনী ও অপরাধীদের অভয়ারণ্য। অথচ তারা নিজেরা খুন ও অপরাধের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়ে থাকে। সুসমাচার এই যে, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী সাজাপ্রাপ্ত এক খুনীকে আশ্রয়দাতা দেশের আদালত অবশেষে বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছে। বাংলাদেশ চায়, তাকে তৃতীয় কোন দেশে ফেরত পাঠানো হোক, যাতে বাংলাদেশে তার প্রত্যর্পণ সহজ হয়। সাড়ে সাত কোটি মানুষের হয়ে বাংলার কথা বলতে গিয়ে বিশ্বটাকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল যাঁর কণ্ঠস্বর, যাঁর স্বরের আহ্বানে ও অঙ্গুলি নির্দেশে বাঙালী জাতি ঝঁাঁপিয়ে পড়েছিল রণাঙ্গনে। চড়া দাম দিয়ে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা। সেই বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একাত্তরেই পাকিস্তানী জান্তা শাসক গ্রেফতার করে কারাগারে বন্দী রেখে বিচারের প্রহসন চালায় এবং মৃতুদ- প্রদান করে। তারা কবরও খুঁড়েছিল। কিন্তু বিশ্ব জনমতের চাপে তারা শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করতে বাধ্য হয়েছিল। যে পাকিস্তানী হানাদার ও তাদের বংশজাতরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার সাহস পায়নি, সেই পাকিস্তানীদের মানসজাত বাঙালী বংশোদ্ভূত বিপথগামী কতিপয় সেনা পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট সপরিবারে হত্যা করে জাতির পিতাকে। বাঙালী জান্তারা সেই হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশও জারি করেছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর এই অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ প্রশস্ত করেছিলেন। বিচারে বারোজনকে ফাঁসির দ-াদেশ দেয়া হয়। এর মধ্যে পাঁচজনের দ- কার্যকর হলেও ৬ জন বিদেশে পালিয়ে থাকে। একজন বিদেশে মারা গেছে। পলাতকদের অবস্থান নিশ্চিত করতে সরকার দীর্ঘদিন ধরেই তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে দুজনের অবস্থান নিশ্চিত করা গেছে। খুনী লে. কর্নেল রাশেদ চৌধুরী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছে। অপরজন লে. কর্নেল নূর চৌধুরী, যে সরাসরি বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে। কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিল। কিন্তু দিন দুয়েক আগে কানাডার ফেডারেল আদালত তার আবেদন খারিজ করে দিয়ে বলেছে, ১৫ আগস্টের ঘটনায় নূর চৌধুরীর যুক্ত থাকার বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। সে কানাডায় বসবাসের অযোগ্য। আদালত তাকে বহিষ্কারাদেশ দিয়েছে। গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কানাডায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে খুনীকে ফেরত চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেন। সেই ধারাবাহিকতায় পলাতক হত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দেশে আনার জন্য সরকার সচেষ্ট। প্রবাসে বাঙালীরা সাজাপ্রাপ্ত খুনী ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রত্যর্পণের বিষয়ে জনমত তৈরির কাজটি করতে পারেন। সেসব দেশের সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগে যাতে উদ্যোগী হন প্রবাসীরা, শেখ হাসিনা সেই আহ্বানও জানিয়েছেন। দেশে-বিদেশে সকল বাংলাদেশীর সক্রিয় হওয়ার এখনই সময়। খুনীদের সাজা হোক এটা সবারই কাম্য।
×