ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

আগাম নির্বাচনের চিন্তা আওয়ামী লীগের না পত্রিকার?

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আগাম নির্বাচনের চিন্তা আওয়ামী লীগের না পত্রিকার?

একটি বহুল প্রচারিত পত্রিকা গত ২১ সেপ্টেম্বর বুধবার লিড নিউজ করেছে ‘আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু আওয়ামী লীগের।’ এ খবরে ঢাকার পলিটিক্যাল আড্ডা থেকে শুরু করে প্রাইভেট টিভি চ্যানেলগুলো বেশ গরম হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বিএনপি শিবিরে একটা মৃদু চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এ কারণে যে, দলটির কেউ কেউ মনে করেন মধ্যবর্তী নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতায় বসবেন, খালেদা জিয়া চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবেন, হাওয়া ভবনের তালা খুলবে এবং আবার চুরি, রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের কেন্দ্র কাশিম বাজার কুঠি নড়েচড়ে বসার সুযোগ পাবে। কিন্তু জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন। বলেছেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোন প্রয়োজন নেই, হবে না। বরং নিউইয়র্কে (বাংলাদেশ মিশনে) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা প্রশ্ন করেছেন : ‘যিধঃ ংরঃঁধঃরড়হ যধং ধৎরংবহ ঃযধঃ ঃযব মড়াবৎহসবহঃ ংযড়ঁষফ মড় ভড়ৎ রহঃবৎরস ঢ়ড়ষষং.’ ঞযবৎব বিৎব হড় ৎবষধঃরড়হ নবঃবিবহ ঃযব সরফ-ঃবৎস ঢ়ড়ষষং ধহফ ঃযব ঁঢ়পড়সরহম পড়ঁহপরষ ড়ভ ইধহমষধফবংয অধিসর ষবধমঁব. ঊষধঃরড়হং ড়িঁষফ ধষধিুং ‘ঃধশব ঢ়ষধপব’ ধহফ ংযব ঃযরহশং ঃযধঃ ঃযবৎব ধৎব হড় ৎবষধঃরড়হং নবঃবিবহ ঃযব ঢ়ধৎঃু পড়ঁহপরষ ধহফ ঃযব বষবপঃরড়হং. ওঃ রং ড়ঁৎ ৎড়ঁঃরহব ড়িৎশ ধহফ ঢ়ধৎঃু পড়ঁহপরষ রং যবষফ বাবৎু ঃযবৎব ুবধৎং. (ডেইলি স্টার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারও জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন এবং ভাষণে বিশেষ করে দেশে জঙ্গীবাদের উত্থান এবং হত্যা, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংঘভুক্ত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এর জন্যে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস জরুরী। তিনি মনে করিয়ে দেন, চ্যালেঞ্জগুলো এখন কোন নির্দিষ্ট গ-ির মধ্যে আবদ্ধ না থেকে বিশ্বের দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কোন দেশই আপাতদৃষ্টিতে নিরাপদ নয়, কোন ব্যক্তিই সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তুর বাইরে নয়। কি অপরাধ করেছিল ভূমধ্যসাগরের কূলে নিথর পড়ে থাকা ৪ বছরের শিশু আইলান কুর্দি এবং আরও অনেকে? কি দোষ করেছিল ৫ বছরের শিশু ওমরান, যে আলেপ্পো শহরে নিজ বাড়িতে বিমান হামলায় আহত হয়েছে? মা হিসেবে আমার পক্ষে এসব নিষ্ঠুরতা সহ্য করা কঠিন। বিশ্ব বিবেককে কি এসব ঘটনা নাড়া দেয় না? (জনকণ্ঠ, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬) এখানেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রনেতা শেখ হাসিনা অনন্য; বিশ্ব নেতৃত্বের কাতারে সামনে হাঁটছেন, পথ দেখাচ্ছেন। নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে মৎবধঃ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবার শেখ হাসিনাকে ‘অএঊঘঞ ঙঋ ঈঐঅঘএঊ’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। এটিও কম কথা নয়। কিন্তু শেখ হাসিনা এমনি অনেক বড় বড় আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তার পুরস্কারের তালিকা অনেক লম্বা। বিশ্বের তাবত খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয় যেমন বোস্টন, ম্যানচেস্টার, ওয়াসেদা, ঢাকা, বিশ্বভারতীয়সহ ডজনেরও অধিক বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডক্টরেট ডিগ্রী দিয়ে ভূষিত করেছেন। তারপরও বলব শেখ হাসিনা যেভাবে তিনবারে একটি খাদ্য ঘাটতি, বিদ্যুত ঘাটতি, অবকাঠামো ঘাটতি দেশকে সকল ক্ষেত্রে তুলে এনে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছেন, জাতির পিতার হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধী বিচারের মাধ্যমে জাতিকে পাপমুক্ত করেছেন, জিরো টলারেন্স নীতির মাধ্যমে জঙ্গী ও জঙ্গীবাদ নির্মূল করে চলেছেন, তাতে করে ওইসব এ্যাওয়ার্ড খুব বড় কিছু নয়। বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্র না হয়ে অন্য কোন ‘অস্ত্রবাজ’ দেশের নেতা হলেও ‘নোবেল পুরস্কার’ পেতেন। পাননি, কারণ যে বা যারা নোবেল পুরস্কারের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে তারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার মিলিটারি জান্তার দোসর ছিল। আজও ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গেই আছে। শুরু করেছিলাম দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ লিড নিউজ হয়েছিল মধ্যবর্তী নির্বাচন সম্পর্কে। পুরো রিপোর্টটি পড়লে পাঠকের ধারণা হবে সরকার মধ্যবর্তী নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে দলের ১০ জনের সঙ্গে আলাপ (?) করে প্রথম আলোর রিপোর্টার রিপোর্টটি করেছেন। কিন্তু একজনেরও নাম প্রকাশ করেননি। তাহলে কারা ঐ রিপোর্টারকে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিল? আমি অনেক ভেবেছি। ‘প্রথম আলো’ তো আছেই কিভাবে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে সরিয়ে রাজাকারবেষ্টিত বিএনপি এবং খালেদাকে ক্ষমতায় বসাবে। নচেৎ কেউ নিজের নাম প্রকাশ করতে রাজি হলেন না। তারপরও তাদের বরাত দিয়ে রিপোর্ট হয়ে গেল। এমন রিপোর্টিং কতখানি যৌক্তিক? অবশ্য আজকাল শেখ হাসিনা সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের লাইসেন্স যাকে-তাকে দিয়ে এমন স্বাধীনতা দিয়েছেন যে, তারই দেয়া মিডিয়া তাকেই মিথ্যা দিয়ে সমালোচনা করছে। প্রথম আলো তো প্রথম থেকেই বৈরী। প্রশ্ন হলো রাষ্ট্রক্ষমতা হিসেবে শেখ হাসিনা এমন উচ্চতায় অবস্থান করছেন যে, কোন মিডিয়া কি বলল তাতে কিছু আসে যায় না। সর্বোপরি জনগণ তার সঙ্গে আছে। খালেদা জিয়া জামায়াত-শিবির-হেফাজত সঙ্গে নিয়ে পেট্রোলবোমা মেরে সাধারণ মানুষ, পুলিশ, এমনকি নিরীহ গরু মেরে কিংবা জঙ্গী লেলিয়ে প্রগতিশীল নাগরিকদের হত্যা করেও জনগণকে রাজপথে নামাতে পারেননি। এখন তার সময় এসেছে রাজপথে দাঁড়িয়ে বলা, ‘আমি কার খালারে’? তারপরও জানি কোন কোন বোনপো এগিয়ে আসবে না। অযথা অঘোরে কে প্রাণ দেয় বলুন। সে যাক, প্রসঙ্গক্রমে অনেক কথা এসে গেল। এবার মূল বক্তব্যে আসি। আমার প্রশ্ন, কোন্ কারণে শেখ হাসিনা মধ্যবর্তী নির্বাচন দেবেন? আওয়ামী লীগের যে ১০ জনের সঙ্গে পত্রিকাটির রিপোর্টার কথা বলেছেন, নাম প্রকাশ করতে মানা করেছেন, আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা বলে এসব নেতা হলেন আওয়ামী লীগের সাইড লাইনের নেতা। শেখ হাসিনা যখন কারাগারে ছিলেন তখন তাদের সাহসী ভূমিকা ছিল না। বরং কেউ কেউ শেখ হাসিনার ওপর দোষ চাপানোর ধৃষ্টতাও দেখিয়েছিলেন। যার ফলে তাদের অনেকেই এখনও পেছনের সারিতে অবস্থান করছেন। যে শেখ হাসিনা কারাগার থেকে বেরিয়ে তাদের সম্পর্কে বলেছিলেন : ‘ও ভড়ৎমরাব, নঁঃ ও রিষষ হড়ঃ ভড়ৎমবঃ’. এদের আশা যদি মধ্যবর্তী নির্বাচন হয় তাহলে হয়ত তাদের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়তেও পারে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের মাধ্যমেই দলটি নেতৃত্ব নির্বাচন করে এবং সরকার গঠনও করে নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে। যেমন দলের গঠনও হয়েছিল ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজগার্ডেনে নির্বাচনের মাধ্যমে। প্রথম সরকারও গঠন করে ১৯৫৪ সালে ২১ দফার নির্বাচনের মাধ্যমে। তারপর তো আইয়ুবের মিলিটারি জান্তাবিরোধী আন্দোলন-গণঅভ্যুত্থান, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, সব অতিক্রম করে ’৭০-এর নির্বাচনের ম্যান্ডেট নিয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা, মুজিবনগর সরকার গঠন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন, ’৭৩-এ নির্বাচন ও রাষ্ট্রীয় সংবিধান রচনা এবং অনুমোদন, সবকিছুর মূলে নির্বাচন। এমনকি জাতির পিতার হত্যার পরও দীর্ঘদিন জিয়া-এরশাদ-খালেদার মিলিটারি ও হাফ মিলিটারি শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেই ক্ষমতায় ফিরে আসে। ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগের পিছু ছাড়ে না কখনও। ১৯৯১ এবং ২০০১-এর নির্বাচনেও ষড়যন্ত্রের কাছে হেরে গেলেও ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে কোন ষড়যন্ত্রই কাজ করেনি, নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতায় এসেছে, আছে এবং জাতির সার্বিক অগ্রগতি তথা মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত করে বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়েছে। বিস্তারিত বলার দরকার নেই, জনগণই উপলব্ধি করছে তারা ভাল আছে। আগেই বলেছি, আওয়ামী লীগ নির্বাচনপন্থী দল। কিন্তু সামনে আরও সোয়া দুই বছর মেয়াদ থাকতে কেন নির্বাচন দেবে। সাধারণ কয়েকটি কারণে মধ্যবর্তী নির্বাচন হয়। যেমন : ১. ক্ষমতাসীন দল যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় ২. রাজপথের আন্দোলনে যদি সরকারকে বেকায়দায় ফেলা যায় (কিন্তু খালেদার সেই মুরোদ নেই) ৩. কিংবা সরকার যদি মনে করে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিলে সে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসবে, ইত্যাদি। আমি মনে করি এর কোনটারই ঘটেনি যে, মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে হবে। তবে হ্যাঁ, আওয়ামী লীগ এমন এক দূরদর্শী রাজনৈতিক দল যে, সে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গেল কি গেল না সেটা বড় কথা নয়, পরদিনই আবার নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে। এটি তাদের চলমান প্রক্রিয়া। একটি কাউন্সিল অধিবেশন মানেই মধ্যবর্তী নির্বাচন এটি ভাবারও কোন কারণ নেই। তাছাড়া আওয়ামী লীগের মতো একটি অভিজ্ঞ এবং প্রাচীন দল সরকার গঠনের পর কতগুলো উন্নয়ন কাজ হাতে নেয়, যা জনগুরুত্বসম্পন্ন এবং ৫ বছর মেয়াদে সেসবের বাস্তবায়ন সম্পন্ন করে। যেমন একটি উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে- পদ্মা সেতু। এরই মধ্যে এর ৪৪% কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে তা সম্পন্ন হবে এমন আশা সকলের। এখন জিডিপি ৭.০২%, এটাকে ৯%-এ তুলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। তার আগে মধ্যবর্তী নির্বাচন কেন দেবে? তাছাড়া আন্দোলন করে। (যখন আন্দোলনের ইস্যু বলে কিছু নেই, বরং শেখ হাসিনাকে সমর্থনই একমাত্র পথ) শেখ হাসিনার সরকারকে বেকায়দায় ফেলার মুরোদ বিএনপির নেই। খালেদা তো তিনবারেও প্রমাণ করতে পারেননি, তিনি জাতির নেতৃত্ব দিতে পেরেছেন বা পারবেন বা রাষ্ট্র পরিচালনার ন্যূনতম শিক্ষা, দক্ষতা, যোগ্যতা তার আছে। সর্বশেষ আমি মনে করি আওয়ামী লীগের আগামী ২২, ২৩, ২৪ অক্টোবরের কাউন্সিল মূলত গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধ্যকতা। তবে দলে শিক্ষিত, দক্ষ, যোগ্য, দূরদর্শী নতুন ব্লাড সঞ্চালন এবং ‘মহাচোর’, ‘ড্রাগ চোরাচালানী’ অযোগ্য রয়েছে কিনা তা চিহ্নিত করা হবে। এগিয়ে যাবার পথ যাতে অবাধ হয় সেরকম কিছু চিন্তাভাবনা হতেও পারে। ঢাকা ॥ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি জাতীয় প্রেসক্লাব নধষরংংযধভরয়@মসধরষ.পড়স
×