ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইসলামাবাদের আফগান অবরোধ রুখতে কাবুল দিল্লী ও ওয়াশিংটনের ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা

পাকিস্তানকে এড়াতে চায় তিন দেশ

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পাকিস্তানকে এড়াতে চায় তিন দেশ

স্থলবেষ্টিত আফগানিস্তানের ওপর পাকিস্তানের আরোপিত অবরোধ কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে আফগানিস্তান ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা নিউইয়র্কে বৈঠক করেছেন। জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদ সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকটি ছিল তাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠক। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার। বৈঠক শেষে প্রকাশিত এক যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকটি আফগান সরকারের অগ্রাধিকার দেয়া চাহিদার সঙ্গে মার্কিন ও ভারতীয় সহায়তাকে সমন্বিত ও যুক্ত করার উপায় খতিয়ে দেখতে মার্কিন সরকার ও ভারত সরকারের জন্য এক ফোরাম হিসেবে কাজ করে। পাকিস্তান তাদের ভূখ-ের মধ্য দিয়ে ভারতীয় গম ও অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী আফগানিস্তানে যেতে দিতে অস্বীকার করেছে বলে খবর বেরোনোর প্রেক্ষিতে ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এ অবরোধ আরোপের ফলে কাবুল ক্ষুব্ধ হয়। কাবুল ভারত অভিমুখে ও ভারত হতে পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে বাণিজ্য ও ট্রানজিট রুট চায়। কাবুল ইসলামাবাদকে সতর্কও করে দিয়েছে যে, যদি এ সুবিধা না দেয়া হয়, তা হলে কাবুল মধ্য এশিয়ায় পাকিস্তানের প্রবেশাধিকার সঙ্কুচিত করে দিয়ে এর প্রতিশোধ নিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ওই বিষয়ে মতৈক্য আনার লক্ষ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে। দেশটি মূলত মধ্যস্থতার বিনিময়ে পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশাধিকার ক্রয় করে থাকে। কিন্তু ওই চেষ্টার বাইরে গিয়েও তিন পক্ষ অন্যান্য বিকল্প উপায়ের কথা ভাবছে, কারণ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তানের যুদ্ধংদেহী মনোভাব ও বৈরিতা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এ প্রবেশাধিকার বন্ধ করতে পাকিস্তানে প্রায়ই আহ্বান জানানো হয়েছে। যদিও এ বাবদ আদায়কৃত ফি পাকিস্তানের এস্টাব্লিশমেন্ট ও এর অভিজাত শ্রেণীর জন্য লোভনীয় বলে প্রমাণিত হয়েছে। গত বছর ইরানের সঙ্গে সমাঝোতা হওয়ার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চাবাহার বন্দর দিয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ লাভের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ভারত এ বন্দরে বিরাট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে। এতে তিনপক্ষের জন্য পাকিস্তানকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হতে চলেছে। চাবাহার বেলুচিস্তানের সোয়াদার বন্দরের গুরুত্ব হ্রাস করে দিয়েছে। এটি মাকরান উপকূল বরাবর চাবাহার থেকে মাত্র ১০০ মাইল দূরে অবস্থিত। চীন যে গোয়াদার বন্দরকে প্রয়োজনীয় বলে দেখতে পারে, এ বিষয়ে পাকিস্তান নিশ্চিত রয়েছে। বেলুচিস্তানের অসন্তোষ নিয়ে উদ্বিগ্ন চীন আভাস দিয়েছে যে, সে চাবাহার ও গোয়াদার উভয় বন্দর ব্যবহার করে খুশিই হবে। চীন সময়ে সময়ে সমর্থন ব্যক্ত করলেও পাকিস্তান ক্রমশ একঘরে হয়ে পড়ছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, নয়াদিল্লী আফগানিস্তানের (ও ইরান) সঙ্গে নতুন করে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলায় ইসলামাবাদের মনে অনিয়ন্ত্রিত ভীতিভাবের সৃষ্টি হয়েছে। ভারত ও আফগানিস্তানের কোন সীমান্ত না থাকা সত্ত্বেও দুই দেশ এত ঘনিষ্ঠ কেন, পাকিস্তান সেই প্রশ্ন তুলছে। ইসলামাবাদ ভুলে গেছে যে, পাকিস্তান যখন এর প্রতিষ্ঠাতাদের চোখের স্বপ্নও ছিল না, তারও অনেক আগে ভারত ও আফগানিস্তান (ও ইরান) বিদ্যমান ছিল। পাকিস্তান আফগানিস্তানে চরমপন্থী তালেবান ও অন্যান্য উপদলকে মদদ যুগিয়ে এর প্রভাব বলয় বাড়াতে চেয়েছে। আর ভারত কয়েকটি বড় প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে আফগানদের মন জয় করার কঠিনতর পথটি বেছে নিয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে হাসপাতাল, রাস্তা-ঘাট ও কাবুলে পার্লামেন্ট ভবন নির্মাণ। যখন কাবুল সন্ত্রাসী ও চরমপন্থী অনুসারীদের মাধ্যমে অর্জিত পাকিস্তানী প্রভাববলয় থেকে দূরে চলে গেছে, তখন দেশটি এক বাণিজ্য অবরোধ শুরু করেছে। এতে পাকিস্তান আফগান ভারত বাণিজ্য বিঘিœত করতে গিয়ে নিজেকেই রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছে।
×