ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটালাইজেশনে আসছে পাঁচ হাসপাতাল

বিজিবি শক্তিশালী করতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বিজিবি শক্তিশালী করতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে

মশিউর রহমান ॥ চোরাচালান প্রতিরোধ ও আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন, অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মানব পাচার রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) আরও শক্তিশালী করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ বাহিনী অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, দুর্যোগ মোকাবেলা ও গঠনমূলক বিভিন্ন কাজে সরকারকে সহায়তা করে বিধায় তাদের উন্নতিকল্পে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে পাঁচটি বিজিবি হাসপাতাল। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বিজিবি সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি স্বাস্থ্য ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। এতে করে কম সময়ে তাদের রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত সহজতর হবে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একাধিক প্রকল্প এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন দিয়েছে। বর্তমানে এসব প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনের চূূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। অনুমোদন পেলে যে কোন সময় এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু করবে বিজিবি কর্তৃপক্ষ। সীমান্ত নিরাপত্তা শক্তিশালীকরণ নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হবে। বাংলাদেশ-ভারত ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত বিজিবির বিওপিগুলোতে এসব অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি প্রদান করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। সূত্র জানায়, প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি ৭১ লাখ টাকা। প্রস্তাবনা অনুযায়ী আগামী ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে অত্যাধুনিক এসব যন্ত্র সরবরাহ করা হবে। বর্তমানে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এ সীমান্ত পাহারায় কয়েক বছর আগে ৬৬৭টি বিওপি (বর্ডার আউটপোস্ট) ভবন নির্মিত হয়। স্থাপিত হয় চারটি করে রিজিয়ন, আরআইবি ও সেক্টর সদর। পাশাপাশি ১৫টি ব্যাটালিয়ন ২১৮টি বিওপি বা ক্যাম্প গঠিত হয়েছে। আধুনিক পদ্ধতিতে চিকিৎসার মান উন্নতকরণের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিজিবি সদস্যদের ইলেকট্রনিক মেডিক্যাল রেকর্ড সিস্টেম (ইএমআরএস) গ্রহণসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়িত করা হবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে পাঁচটি হাসপাতালের ডিজিটাইজেশন ও আধুনিক কার্যক্রমের লক্ষ্যে ২১ কোটি ৯৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকায় একটি প্রকল্প সম্পন্নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। সূত্র জানায়, সীমান্তে পাহারা জোরদার করতে গত কয়েক বছরে বেশকিছু বিওপি নির্মাণ করা হয়েছে। সীমান্ত পাহারার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বেশকিছু কাজেও বিজিবির অংশগ্রহণ বেড়েছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে ও অত্যাধুনিক অস্ত্র পেলে সীমান্ত দিয়ে মানব পাচার, চোরাচালান ও মাদক পাচার ঠেকাতে বিজিবি আরও সাহসী ভূমিকা পালন করতে পারবে। বর্তমানে বিজিবির হাসপাতালগুলোয় ডিজিটাইজেশন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। বর্তমানে একটি সার্বক্ষণিক নম্বর চালু করা হয়েছে। বিজিবি সদস্য বা তার পরিবারের কোন সদস্য সে নম্বরে ফোন করে সমস্যা জানালে দ্রুততর সময়ের মধ্যে তার কাছে মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে করণীয় নির্দেশিকা পাঠানো হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বিজিবি সদস্যদের চিকিৎসাসেবা সহজলভ্য ও ঝামেলামুক্ত হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকানোসহ প্রথম সারির সুরক্ষা প্রদান করে বিজিবি। এছাড়া বাংলাদেশ হয়ে রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে অনুপ্রবেশ দেশের সীমান্ত-সংক্রান্ত অন্যতম সমস্যা। এ কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। এছাড়া বিজিবি সদস্য ও সদস্যদের পরিবারের জন্য প্রকল্পগুলোর আওতায় জিপিএস মেশিন উইথ কলিগ, থারমাল ইমেজিং বাইনোকুলার, নাইট ভিশন গগলসসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হবে। একই সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট, ফ্লাশ লাইট, সিøপিং ব্যাগ, ম্যাজিক মশারি, ইউটিলিটি নাইফ, জঙ্গলে চলার উপযোগী বুট ও ক্যারিং ভেস্টও সরবরাহ করা হবে। দ্রুত যোগাযোগের জন্য কেনা হবে পিকআপ, জিপ, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল। অপরদিকে হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পে বলা হয়েছে, আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার পাশাপাশি বিজিবি সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি স্বাস্থ্য ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। এতে করে কম সময়ে তাদের রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত সহজতর হবে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য হুমায়ুন খালিদ জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের বিস্তীর্ণ সীমান্ত সুরক্ষায় সরকারের সক্ষমতা বাড়াতে এ প্রকল্প সহায়ক হবে। এছাড়া দেশকে ঝুঁকিমুক্ত রাখা, দেশের সুনাম বৃদ্ধি ও ভাবমূর্তি রক্ষা এবং সুশাসন নিশ্চিতে প্রকল্পটি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া হাসপাতালের ডিজিটাইজেশন ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে বিজিবি সদস্য ও তাদের পরিবার সহজেই আধুনিক চিকিৎসা পাবেন। এতে করে এ বাহিনীর সদস্যদের কাজের গতি আরও বাড়বে।
×