ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কেন্দ্রীয় কমিটিতে আরও ৫০ জন স্থান পাচ্ছেন

বঞ্চিত নেতাদের সুযোগ দিতে বিএনপির কমিটির পরিধি বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বঞ্চিত নেতাদের সুযোগ দিতে বিএনপির  কমিটির পরিধি বাড়ছে

শরীফুল ইসলাম ॥ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাননি এমন নেতাদের সুযোগ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে দলীয় হাইকমান্ড। এরই অংশ হিসেবে বিএনপির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন আরও অন্তত ৫০ নেতা। আর মূল কমিটির বাইরে আরও অন্তত ২ডজন উপ-কমিটি করা হচ্ছে। এসব উপ-কমিটিতে স্থান পাবেন দুই শতাধিক নেতা। এরা সবাই কেন্দ্রীয় নেতার মর্যাদা পাবেন। যাদের কেন্দ্রীয় কমিটি ও উপ-কমিটিতে স্থান দেয়া হচ্ছে তাদের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এ তালিকা নিয়ে সৌদি আরবে অবস্থানকালে ছেলে তারেক রহমনের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া । ৬আগস্ট বিএনপির ৫৯১ সদস্যের ঢাউস কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এত বড় কমিটি করার পরও কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়ার মতো দলের বেশ ক’জন নেতা বাদ যান। আবার বেশ ক’জন নেতা পদ পেলেও প্রত্যাশিত পদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। এ নিয়ে কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই পদ বঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতারা ক্ষুব্ধ হন। রাগে-ক্ষোভে ক’জন পদত্যাগও করেন। এতে বিব্রত হয় বিএনপি হাইকমান্ড। তবে দলের চরম দুর্দিনে নতুন করে যাতে কোন সঙ্কটে পড়তে না হয় সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ক্ষুব্ধ নেতাদের শান্ত করার উদ্যোগ নেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এরই অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটির পরিধি বাড়িয়ে আরও অন্তত ৫০ জন নেতাকে স্থান দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন উপ-কমিটিতে আরও ২ শতাধিক নেতাকে স্থান দেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ১৯ মার্চ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এক নেতার এক পদ রীতি চালু করায় নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির ৪০ থেকে ৫০ জনকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও পদ ছেড়ে দিতে হচ্ছে। ইতোমধ্যেই অন্তত ৩০ জন কেন্দ্রীয় নেতা পদ ছেড়ে দিয়েছেন জেলা কমিটির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার জন্য। আরও ১০ থেকে ২০ জন কেন্দ্রীয় কমিটির পদ ছাড়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। জেলা কমিটির প্রত্যাশিত পদ পাওয়ার আভাস পাওয়ার সঙ্গে তারাও কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে পদত্যাগ করবেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে স্থান না পেয়ে ইতোমধ্যেই খালেদা জিয়ার কাছে নিজেদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, শাহ মোয়াজ্জেম ও মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদসহ আরও ক’জন কেন্দ্রীয় নেতা। তবে খালেদা জিয়া তাঁদের সান্ত¡না দিয়ে বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া যারা পদত্যাগ করেছেন তাদের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিবসহ আরও ক’জন কেন্দ্রীয় নেতা কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। এ পরিস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ কোন কোন নেতা আবার দলীয় কর্মকা-ে অংশ নিতে শুরু করেছেন। ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান নতুন কমিটি ঘোষণার পর নিষ্ক্রিয় থাকলেও ইদানীং আবার সক্রিয় হয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, বিশাল একটি রাজনৈতিক দলের কমিটি করতে গেলে সবাইকে সমানভাবে খুশি করা যায় না। তবে আরও ক’জন নেতা দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাবেন। এ ছাড়া বিষয়ভিত্তিক উপ-কমিটিতেও বেশ ক’জনকে স্থান দেয়া সম্বব হবে। আর দলের গঠনতন্ত্রে এক নেতার এক পদে থাকার কথা থাকায় জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় কমিটির পদ ছেড়েছেন বেশ ক’জন। আরও ক’জন নেতা কেন্দ্রীয় কমিটির পদ ছাড়বেন। গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতাবলে প্রয়োজন মনে করলে বিএনপি চেয়ারপার্সন কেন্দ্রীয় কমিটিতে আরও পদ বাড়াতে পারবেন। তাই যারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে কোন পদ বা প্রত্যাশিত পদ পাননি তাদের জন্য এটি সুখবর। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে যেসব নেতা বিভিন্নভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম, আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সাদেক হোসেন খোকা, এম মোরশেদ খান, এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, গোলাম আকবর খন্দকার, মিজানুর রহমান মিনু, মশিউর রহমান, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এহসানুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরীন সুলতানা, কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক জাকারিয়া তাহের সুমন, সদস্য নাজিমউদ্দিন আলম, ডাঃ মাজহারুল ইসলাম দোলন, নাদিম মোস্তফা, কাজী সলিমুল হক কামাল (ইকোনো কামাল) সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীমসহ আরও ক’জন নেতা। এর মধ্যে সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম ও নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক সাংসদ কাজী সলিমুল হক কামাল (ইকোনো কামাল) পদত্যাগ করেছেন। আর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক পদ রেখে স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শিরীন সুলতানা। উল্লেখ্য, জাতীয় কাউন্সিলের সাড়ে চার মাস পর ৬ আগস্ট বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অনুমোদিত দলের ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটি, ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কাউন্সিল ও ৫০২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করেন। এর মধ্যে আগে ৪ দফায় ঘোষিত ৪২ নেতার নামও স্থান পায়। কমিটি ঘোষণার পরপরই ভাইস চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালু এবং সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম পদত্যাগ করেন। এর পর ১০ আগস্ট পদত্যাগ করেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ‘ইকোনো কামাল’ হিসেবে পরিচিত জিকিউ গ্রুপের মালিক মাগুরার কাজী সালিমুল হক কামাল। আর নির্বাহী কমিটিতে পদ না পেয়ে ১১ আগস্ট রংপুর জেলার সহ-সভাপতি ও বদরগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য পরিতোষ চক্রবর্তী দল থেকে পদত্যাগ করেন। বিএনপির আগের কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে থাকা আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, সাদেক হোসেন খোকাসহ ক’জন নেতা নতুন কমিটিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদ থেকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও যুগ্ম মহাসচিব পদ থেকে সালাউদ্দিন আহমেদকে স্থায়ী কমিটিতে স্থান দেয়া হলেও ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে কাউকে স্থায়ী কমিটিতে পদোন্নতি দেয়া হয়নি। এ ছাড়া নতুন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ আশা করেছিলেন এক সময় ছাত্রদল করে বিএনপিতে এসে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথ কাঁপানো বেশ ক’জন নেতা। কিন্তু কমিটি দেখার পর তারা হতাশ হন। নিজেদের ক্ষোভ ও হতাশার কথা ভাগাভাগির জন্য তারা ইতিমধ্যেই একে অপরের সঙ্গে কথা বলেছেন। কেউ কেউ দল থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার কথাও পরস্পরকে জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে তাদের মধ্য থেকে ক’জনের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের যোগাযোগ হয়েছে এবং তাদের বিষয়টি দেখা হবে বলেও আশ্বাস দেয়া হয়েছে। তাই তাদের মধ্যে কারও কারও ক্ষোভ প্রশমিত হয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র মতে, ক্ষুব্ধ ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্য থেকে ২ জনকে স্থায়ী কমিটির খালি থাকা ২টি পদ দেয়ার চেষ্টা চলছে। স্থায়ী কমিটিতে আরও ২টি পদ বাড়ানোর কথাও আলোচনায় আছে। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী মোসাদ্দেক আলী ফালু ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে কৌশলগত কারণে পদত্যাগ করলেও তার জন্য এ পদটি সংরক্ষিত থাকবে। তিনি যে কোন সময় ইচ্ছে করলেই কমিটিতে ফিরে আসতে পারবেন। স্থায়ী কমিটিতে স্থান পাওয়ার আশ্বাস পেয়ে আরেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানও দলে সক্রিয় হয়েছেন। হজ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দেশে ফেরার তাঁকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন আব্দুল্লাহ আল নোমান। জানা যায়, পদবঞ্চিত কিছু নেতা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ সিনিয়র নেতাদের ঠিকানায় চিঠি পোস্ট করে বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে তাদের অবস্থান জানিয়েছেন। কেউ কেউ পুলিশের হাতে নির্যাতনের ছবি এবং বিভিন্ন মামলার আসামি হওয়া সংক্রান্ত ডকুমেন্ট পাঠিয়েছেন। আর এসব ডকুমেন্ট দেখে সিনিয়র নেতারাও তাদের প্রতি ধারণা পেয়েছেন। তাই তাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেয়ার বিষয়ে দলীয় হাইকমান্ডও চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া পদ না পাওয়া ক’জন সংস্কারপন্থী নেতাকেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এদের মধ্যে যে ক’জনকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেয়া যাবে না তাদের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক উপ-কমিটিতে স্থান দেয়া হবে। প্রতিটি উপ-কমিটিতে ডজনখানেক নেতাকে স্থান দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
×