ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইলিশ কিনে খুশি ক্রেতা, সবজির বাজার চড়া

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ইলিশ কিনে খুশি ক্রেতা, সবজির বাজার চড়া

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দাম কমায় ইলিশের বাজারে স্বস্তি মিলছে ভোক্তাদের। তাই কাঁচা বাজারে এসে ক্রেতারা আগে খোঁজ করছেন স্বাদের এই মাছটির। দামও রয়েছে নাগালের মধ্যে। ঈদের ছুটির পর সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার রাজধানীর মাছ বাজারগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। সবার দৃষ্টি ইলিশের দিকে। আধাকেজি সাইজের একটি ইলিশ এখন বিক্রি হচ্ছে ২৭৫-৩০০ টাকায়। তবে এককেজি সাইজ হলে গুনতে হয় ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। এক মাস আগেও এই দামে ইলিশ পাওয়ার কথা কেউ চিন্তা করতে পারেনি। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সেই মাছ জেলেদের হাত হয়ে বাজারে আসায় বর্তমান সরকারের ‘পলিসি’কে সাধুবাদ জানাচ্ছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ ধরার উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রতিবছর উৎপাদন বাড়ছে। আর এরই সুফল পাচ্ছে ভাতে-মাছে বাঙালী। জানা গেছে, আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ২ নবেম্বর পর্যন্ত ইলিশ ধরা, বিক্রি ও পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে সরকার। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে মা ইলিশকে রক্ষা করে সাগর ও নদীতে উৎপাদন বৃদ্ধি করা। এজন্য গতবারের চেয়ে এবার সাত দিন বৃদ্ধি করে ২২ দিন ইলিশ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করে শীঘ্রই আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হবে। শুধু তাই নয়, ওই সময় ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে জেলেদের সহায়তা দেয়া হবে। গত বছর ১৫ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল। তবে এবার আশ্বিন মাসের প্রথম চাঁদের পূর্ণিমার দিন এবং এর আগে চার ও পরের ১৭ দিনসহ মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। ঈদের ছুটির পর সাপ্তাহিক বাজার করতে এসে সস্তায় ইলিশ পেয়ে খুশি ক্রেতারা। মাছের সরবরাহ ও বিক্রি বাড়ায় খুশি ইলিশের বিক্রেতারা। মুগদা পাড়া বড় বাজারে সাপ্তাহিক কেনাকাটা করতে এসেছেন সবুজবাগের বাসিন্দা ও কলেজ শিক্ষক রাশেদুল হাসান। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, গত কয়েক বছর আগেও ভরা মৌসুমেও বাজারে ইলিশ দেখা যেত না। সবই ছিল জাটকা। আর এখন তাকিয়ে দেখুন, গড়ে প্রায় সব মাছই ৭০০ গ্রাম থেকে এক কেজি সাইজের। ছোট সাইজের যে ইলিশটি চোখে পড়ছে সেটিও ৫০০ গ্রামের হবে। এছাড়া আড়াই থেকে ৩ কেজি ওজনের ইলিশ ধরার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পাশাপাশি সরকারের নীতিগত সহায়তার কারণে উৎপাদন বেড়েছে। আর এরই সুফল পাচ্ছেন ক্রেতারা। আগামীতেও মা ইলিশ রক্ষায় সরকারকে আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, জাটকা ধরা বন্ধসহ অভিযুক্ত জেলেদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া সাগর ও নদীতে সরকারী অনুমোদন দিয়ে যেসব ফিশিং টলার মাছ ধরছে তাদের দিকে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। এদিকে, মৎস্য অধিদফতরের হিসাবে, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে ৩ লাখ ৮৫ হাজার টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ লাখ টনের বেশি ইলিশ উৎপাদন হয় বলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন। এই মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, জাটকা ধরা নয় মাস বন্ধ থাকে। এছাড়া ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে গত পাঁচ-ছয় বছরে যেসব কাজ হয়েছে, অভিযান চলেছে-তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে এখন। বাজার দর ॥ গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ এবং সরবরাহ কমে যাওয়ায় ঈদের পর থেকে রাজধানীর বাজারগুলোতে সবজির দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। বাড়তির দিকে চালের বাজার। তবে ডাল, চিনি, ভোজ্যতেল, আটা ও ডিমের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। রাজধানীর কাওরান বাজার ঘুরে দেখা যায়, টানা বৃষ্টিতে সরববাহ কম থাকায়, গত সপ্তাহের তুলনায় আবারও কাঁচাপণ্যের দাম বেড়েছে। শীতের সবজি নামার আগে এ দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। তবে গত সপ্তাহে কাঁচামরিচ কেজিতে ২২০-৩০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে দাম কমে ১২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। কাওরান বাজারে পাইকারি দরে সবজি কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিলো ৩০ থেকে ৩৫ টাকা করে। কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা করে বেড়েছে প্রতিটি সবজির দাম। পাইকারি বাজারে ঢেঁড়স, রেখা, মুলা, ঝিঙা, জালি, বরবটি, ধুন্দল ও পটল কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা করে। ৪০ টাকার বেগুন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকা। তবে কমেছে কাঁচা মরিচের দাম। সবজি বিক্রেতা খলিল জানান, বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কম থাকায় বাজারে সবজির দাম বেড়েছে। এখন প্রতি সপ্তাহে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা সবজির দাম বাড়ছে। শীতের সবজি নামার আগে সবজির দাম আর পড়বে না বলে জানান তিনি। এছাড়া বাজারে পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও ডালের দাম অপরিবর্তিত আছে। পেঁয়াজ দেশী ৩০-৩৫ টাকা প্রতিকেজি। পেঁয়াজ আমদানি ২৫ টাকা টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা। মসুর ডাল দেশী মানভেদে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, এছাড়া আমদানিকৃত ডাল মানভেদে ১০০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
×