ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কাশ্মীর ইস্যুতে নাক গলাবে না জাতিসংঘ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কাশ্মীর ইস্যুতে নাক গলাবে না জাতিসংঘ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ কাশ্মীর সমস্যায় জাতিসংঘকে জড়াতে মরিয়া চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের চেষ্টা সত্ত্বেও তা সফল হয়নি। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন কাশ্মীরের সমস্যা ভারত ও পাকিস্তানকে আলোচনা করেই মেটাতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীর প্রশ্নে জাতিসংঘের মধ্যস্থতার দাবি করে আসছিল। বৃহস্পতিবার সাধারণ পরিষদের বার্ষিক সম্মেলনেও কাশ্মীর নিয়ে জাতিসংঘের মধ্যস্থতা চেয়েছিলেন নওয়াজ। এরপর তিনি বান কি মুনের সঙ্গেও বৈঠক করেন। কিন্তু পাক দূতাবাসের দেয়া বিবৃতি থেকেই জানা যায় যে, কাশ্মীর সমস্যার মীমাংসায় নাক গলাতে রাজি হয়নি জাতিসংঘ। নয়াদিল্লীতে পাক দূতাবাস জানিয়েছে, কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ নিয়ে একটি নথি বান কি মুনকে দেয়া হয়েছিল। জাতিসংঘের নিরপেক্ষ তদন্ত দলের কাশ্মীর পরিদর্শনে যাওয়া উচিত বলেও নওয়াজ বান কি মুনকে জানিয়েছিলেন। ভারতকে জাতিসংঘের কাশ্মীরবিষয়ক প্রস্তাব মেনে নেয়ার জন্যও তিনি বানকে অনুরোধ করেছিলেন। জবাবে বান কি মুন কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে ভারত-পাক আলোচনার ওপরই জোর দেন। তার মতে, কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ এশিয়ার স্বার্থেই জরুরী। জাতিসংঘের এই অবস্থান ভারতের জন্য প্রত্যাশিত ছিল। কাশ্মীরে লাগাতার অশান্তির জেরে সেখানে প্রতিনিধি দল পাঠাতে চেয়েছিল জাতিসংঘ। কিন্তু ভারতের আপত্তির মুখে জাতিসংঘ তা করেনি। বরং উরি হামলার পরে বিভিন্ন দেশ যেভাবে পাকিস্তানের সমালোচনা করেছে, তাতে ইসলামাবাদই শেষ পর্যন্ত বিপাকে পড়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেন, নওয়াজ শরিফ যে বিষয়টি নিয়ে বক্তৃতার ৮০ শতাংশ খরচ করেছেন তা নিয়ে অন্য কোন দেশ মুখ খোলেনি। বরং অনেকে সন্ত্রাস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। স্বরূপ বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিবও দ্বিপাক্ষিকভাবে কাশ্মীরের মীমাংসা করতে বলেছেন। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে পাক কূটনীতি কতটা ব্যর্থ। পররাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, জাতিসংঘ বরাবরই বলে এসেছে ভারত ও পাকিস্তানের সম্মতি ছাড়া তারা কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতা করবে না। শরিফের আর্জিতে যে সেই অবস্থান বদলাবে না তা আমরা জানতাম। এদিকে পাকিস্তানের জিও টিভির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের কোথায় কোথায় হামলা চালানো হতে পারে, পাকিস্তান সেই টার্গেট ঠিক করে ফেলেছে। সীমান্ত পেরিয়ে ভারত হামলা চালালে, তাৎক্ষণিক জবাব দিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে পাক সেনাবাহিনীকে। আঘাত হানলেই প্রত্যাঘাতের মাধ্যমে জবাব দেয়া হবে। কেবল টার্গেট ঠিক করে রাখাই নয়, জায়গা মতো সেনাও মোতায়ন করা হয়েছে। পরিকল্পনামতোই পরপর টার্গেটে আঘাত করা হবে। সম্প্রতি উরি সেনাঘাঁটিতে পাক জঙ্গী হামলায় ১৮ সেনার মৃত্যুর প্রেক্ষিতে দুদেশের সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ভারত ইতোমধ্যেই পাকিস্তানকে যথাযোগ্য জবাব দেয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে। প্রয়োজনে পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে হলেও জঙ্গী দমনের দাবি উঠেছে ভারতের ভেতর থেকে। ভারতীয় সেনাবাহিনীও এবার চাইছে পাকিস্তানে ঢুকে জঙ্গীঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে। যুদ্ধবাজ তকমা এড়াতে কূটনৈতিক পথেই এগোতে চাইছে নয়াদিল্লী। এ কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাকিস্তানকে জঙ্গী মদদদাতা রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করার ওপরই এখন ভারত বেশি জোর দিচ্ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি থাকা উরি হামলার কারণ ছিল বলে জানিয়েছেন ভারতের মিলিটারি অপারেশন্সের ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজিএমও) রণবীর সিং। তিনি বলেছেন, হামলাস্থল থেকে জঙ্গীদের যে সব জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে, তার ওপর খোদাই করা রয়েছে পাকিস্তানের নাম বা প্রতীক। পাকিস্তানকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান। হামলাকারীদের যোগ্য জবাব দেয়া হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে যে কোন রকম কঠিন জবাব দেয়ার জন্য সেনাবাহিনী তৈরি হচ্ছে। এর যোগ্য জবাব দেয়া হবে। পরিস্থিতি সরেজমিন খতিয়ে দেখতে শুক্রবার শ্রীনগরে পৌঁছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর। এদিকে উত্তাল কাশ্মীর পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার কোন লক্ষণ শুক্রবারও দেখা যায়নি। বারামুল্লা জেলায় এদিন পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে আরও এক বিক্ষোভকারীর। তার নাম ওয়াসিম আহমেদ। এই নিয়ে বুরহান ওয়ানি হত্যা পরবর্তী বিক্ষুব্ধ কাশ্মীরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮৮ জনে। জানা গেছে, উত্তর কাশ্মীরের বারামুল্লায় শুক্রবার ক’দল বিক্ষোভকারী পুলিশকে লক্ষ্য ঢিল ছুঁড়তে শুরু করলে পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়। এতে ২২ বছর বয়সী ওয়াসিম নিহত হয়। বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে ওয়াসিমের গায়ে গুলি লাগে। তাকে বারামুল্লা জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
×