ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুবাই থেকে মিথ্যা ঘোষণায় পিস্তল এনে ফেঁসে গেলেন এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

দুবাই থেকে মিথ্যা  ঘোষণায় পিস্তল  এনে ফেঁসে গেলেন  এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী

আজাদ সুলায়মান ॥ এবার উড়োজাহাজে দুবাই থেকে পিস্তল আনতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন এক ব্যবসায়ী। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টমস হলে এ ঘটনা ফাঁস হয়। সব ধরনের নিয়মকানুন ভঙ্গ করে মিথ্যা ঘোষণায় আনা এ পিস্তলটির প্রকৃত রহস্য বের করতে চলছে অনুসন্ধান। ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী সিলেটের বালাগঞ্জের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী শামীম আহমেদ এখন পিস্তলটি খালাসের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টমস হাউসের যুগ্মকমিশনার এসএম সোহেল রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, এটা পিস্তলের মতো দেখালেও আসলে এয়ারগান। টার্গেট প্র্যাকটিসের জন্য এটা আনা হয়। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া এটা ছাড়া যাবে না। শামীম যদি সেই ছাড়পত্র আনতে পারেন তাহলে তাকে বুঝিয়ে দেয়া হবে। নচেত এটা কাস্টমস হাউসে জব্দ করা হবে। কাস্টমস সূত্রমতে, গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন শামীম আহমেদ। বিমানবন্দরের গ্রীন চ্যানেলে হ্যান্ড লাগেজ স্ক্যানিংয়ে ঘটে যায় বিপত্তি। স্ক্যানিং করার সময় লাগেজের ভেতর একটি প্যাকেটে স্পষ্ট দেখা মেলে পিস্তলের ছবি। উপস্থিত কর্মকর্তাদের মনে খটকা লাগে। কারণ উড়োজাহাজের হ্যান্ড লাগেজে আর্মস (অস্ত্র) বহন নিষেধ। অস্ত্র দেখে নড়েচড়ে বসেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। শামীমের ব্যাগ থেকে বের করার পর দেখা গেল প্যাকেটের গায়ে লেখা ‘ব্যারেট পিস্তল’। সঙ্গে একটি বাক্সে এক হাজার ৪০০ পিস এ্যামুনশান। শামীম আহমেদকে জিজ্ঞাস করতেই বললেন, এটা টয়গান। জানা যায়, পিস্তল সম্পর্কে শামীমের ব্যাখ্যা কতটা সত্য, তা নিশ্চিত হতে পারেনি কাস্টমস হাউস। ঢাকা কাস্টমস হাউসের সহকারী কমিশনার ওমর মবিন খেলনা পিস্তলের ব্যাখ্যা দিয়ে ব্যারেট পিস্তল নিয়ে আসার কাহিনী তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে নয়টায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে দুবাই হয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন শামীম আহমেদ। তখনই তার লাগেজ চেক করা হয় জোরেশোরে। কারণ এর আগেই এমিরেটস এয়ারলাইন্সের অফিস থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয়, একজন প্যাসেঞ্জার লাগেজে আর্মস নিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে কোন বিধি-নিষেধ আছে কিনা, জানতে চাওয়া হয়। উত্তরে এমিরেটসকে বলা হয়েছেÑ উড়োজাহাজে আনলে জব্দ করে রেখে দেয়া হবে। আমদানির অনুমোদনের কাগজপত্র থাকলে ও তা দেখাতে পারলে দিয়ে দেয়া হবে। গ্রীন চ্যানেলে স্ক্যানিংয়ের পর ব্যাগ খুলে বের করা হলো পিস্তলের প্যাকেট। এতে দেখা যায়, প্যাকেটের গায়ে পিস্তলের ছবি। নিচে লেখা ব্যারেট পিস্তল। ওমর মবিন বলেন, ওজন আসল পিস্তলের মতো। তাই আমরা বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে বের করার চেষ্টা করছি পিস্তলটি আসল কিনা। এ ধরনের অস্ত্র খুব বেশি বিমানে আসে না। পিস্তল হলে স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমদানির অনুমতিপত্র নিতে হয়। সেক্ষেত্রে শুল্ক পরিশোধ করে আমদানি করা যায়। সেক্ষেত্রেও কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তিনি। এ পিস্তল ফায়ারিং রেঞ্জ, শূটিং ক্লাবে প্রশিক্ষণ ও ছত্রভঙ্গ করতে ব্যবহৃত হয়। শূটিং ক্লাবের জন্য আমদানি করতে হলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়, যা তিনি নেননি। অনুসন্ধান শেষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যুগ্মকমিশনার সোহেল রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, এটা এখনও ঢাকা কাস্টমস হাউসে আটক রয়েছে। শামীম আহমেদকে বলা হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র নিয়ে আসতে। তিনি যদি না আনতে পারেন তাহলে এটা জব্দ করা হবে। পিস্তলটি যে এয়ারগান এটা কিভাবে নিশ্চিত হলেনÑ প্রশ্ন করা হলে যুগ্মকমিশনার সোহেল রহমান বলেন, আমি নিজে চেক করে দেখেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা শূটিং ক্লাবে প্র্যাকটিস করার জন্য ব্যবহৃত এয়ারগান। এটি আরও পরীক্ষা করে দেখা হবে। যদি পিস্তল হতো তাহলে তো তাকে বিমানবন্দরেই গ্রেফতার করা হতো।
×