ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি পেয়ারই কি আন্দালিব?

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি পেয়ারই  কি আন্দালিব?

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার বাংলাদেশী ব্যবসায়ী আন্দালিব আহমেদের সঙ্গে গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলাকারী জঙ্গীদের যোগাযোগ ছিল। আন্দালিব আহমেদকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য স্টার অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই জানানো হয়েছে। তবে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, আন্দালিব আহমেদ তাদের কাছে নেই। ঈদের আগে মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি পেয়ার আহমেদ আকাশই আন্দালিব আহমেদ কিনা সে বিষয়ে তদন্ত করছে গোয়েন্দারা। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অনলাইন পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, সন্ত্রাসবাদে জড়িত সন্দেহে কুয়ালালামপুরে গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশী নাগরিক আন্দালিব আহমেদ মাস দুয়েক আগে গুলশান হামলায় জড়িত এক সন্দেহভাজনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। আর তার প্রেক্ষিতে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে, ওই ব্যক্তির বাংলাদেশে হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল। আইএস ছাড়াও বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি আন্দালিব আহমেদসহ চার জনকে গ্রেফতার করে মালয়েশিয়া পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের বুকিত আমান শাখা। গত ২ আগস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর সময়ে পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে একজন মালয়েশিয়ান। গ্রেফতারকৃত বাংলাদেশীর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিস’ জারি ছিল। ৩৭ বছর বয়সী আন্দালিব মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছিল। ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় থাকার পর আন্দালিব তুরস্কের ইস্তানবুুলে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশের আরও অনেকের সঙ্গেই আন্দালিবের নিয়মিত বৈঠক হতো। বাংলাদেশে একে-৪৭ রাইফেল পাচারের সঙ্গেও আন্দালিবের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার পুলিশের আইজি খালিদ আবু বকর জানান, সন্ত্রাসবাদে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তিনজন বিদেশী এবং একজন মালয়েশীয়। গ্রেফতারকৃত তিন বিদেশীকে যার যার দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, গত ১৯ আগস্ট আন্দালিবকে গ্রেফতার করা হয়। সে একজন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী। গত ২ সেপ্টেম্বর তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অপর দুই বিদেশীর মধ্যে একজন নেপালী এবং অপরজন মরক্কোর নাগরিক। গ্রেফতারকৃত নেপালী নাগরিক মালয়েশিয়ায় বিনোদন সংক্রান্ত ব্যবসা পরিচালনা করতেন। তাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যদের জন্য ভুয়া কাগজপত্র তৈরির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়। ২৬ বছর বয়সী মরক্কোর নাগরিককে জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর সদস্য সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি গ্রেফতারের আগে সিরিয়ায় প্রবেশের চেষ্টার সময় তুরস্কে গ্রেফতার হয়েছিলেন। সেখান থেকে মুক্তির পর গত মে মাসে তিনি মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেন। ২ আগস্ট গ্রেফতারের পর তাকে গত ২১ সেপ্টেম্বর নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আর গ্রেফতারকৃত ৩৪ বছর বয়সী মালয়েশীয় একজন ব্যবসায়ীর গাড়িচালক ছিলেন। তিনি নিজের ফেসবুক এ্যাকাউন্টে আইএসের পক্ষে প্রচারণা চালাতেন। পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানান, এ ধরনের একজন আসামি ফেনী কারাগারে থাকার তথ্য পেয়েছেন তারা। ওই আসামিই আন্দালিব আহমেদ কিনা সে বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। ফেনী থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ঈদের আগে মালয়েশিয়ায় অস্ত্রসহ গ্রেফতার হওয়ার পর পেয়ার আহমেদ আকাশ নামে একজনকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। পেয়ার আহমেদ আকাশ দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি। দশ ট্রাক অস্ত্র থেকে বেশ কিছু অস্ত্র খোয়া যায়। সেই খোয়া অস্ত্রের মধ্যে একটি একে-৪৭ রাইফেলসহ পেয়ার আহমেদ আকাশ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। এ সংক্রান্ত ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া থানায় একটি মামলা হয়। রিমান্ডে শেষে তাকে কারাগারে পাঠায় আদালত। পেয়ার আহমেদ ফেনী জেলা জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমীর মোহাম্মদ ইউসূফের শ্যালক। ওই সময় বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় ছিল। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাব খাটিয়ে পেয়ার আহমেদ আকাশ জামিনে বের হয়। বেরিয়েই প্রথম স্ত্রীকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জামায়। সেখানে সে হোটেলের ব্যবসা করত। বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পর তার বিরুদ্ধে ফেনীর দাগনভূঁইয়া থানায় মামলা থাকায় তাকে সরাসরি ইমিগ্রেশন থেকে ফেনী পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার একটি অনলাইন পত্রিকায় আন্দালিব আহমেদের সঙ্গে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তুরাঁ ও বেকারিতে হামলার সঙ্গে জড়িত জঙ্গীদের যোগাযোগ থাকার খবর প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত খবরের সঙ্গে পেয়ার আহমেদের অনেক কিছুই মিলে যায়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সন্দেহ বাড়তে থাকে। তাদের ধারণা দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা থেকে বাঁচতেই পেয়ার আহমেদ আকাশ নাম পরিবর্তন করে আন্দালিব আহমেদ নামে মালয়েশিয়ায় আত্মগোপনে ছিল। আত্মগোপনে থাকাকালে তার হোটেলে বাংলাদেশ থেকে যাতায়াত করা জামায়াত-শিবির নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। তার হোটেলে দেশ থেকে পালানো জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। আন্দালিব আহমেদই পেয়ার আহমেদ আকাশ কিনা তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। গত ১ জুলাই গুলশানে নজিরবিহীন সেই জঙ্গী হামলায় ১৭ বিদেশী নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গীরা। পরদিন ভোরে কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গী নিহত হয়। যাদের একজন আন্দালিব বলে সে সময় প্রাথমিকভাবে মনে করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরবর্তীতে আন্দালিব নামে কেউ নিহত হয়নি বলে নিশ্চিত হন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
×