ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কাশ্মীর এড়িয়েই উরি নিয়ে তির

প্রকাশিত: ১৯:৪২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কাশ্মীর এড়িয়েই উরি নিয়ে তির

অনলাইন ডেস্ক ॥ উরি প্রসঙ্গ তুলে কোণঠাসা করতে হবে পাকিস্তানকে। আবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে কাশ্মীরের কথা বলে তাদের সুবিধা করে দেওয়া চলবে না! ২৬ তারিখ রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় বক্তৃতা দেওয়ার আগে এমনই চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তাঁর কাজ অনেকটা একফোঁটা রক্ত না-ঝরিয়ে এক পাউন্ড মাংস কেটে নেওয়ার মতো! এ বার রাষ্ট্রপুঞ্জের বৈঠকে যাননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশের স্বার্থরক্ষার গুরুদায়িত্ব তাই সুষমার কাঁধে। কিন্তু দিল্লির অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, কাশ্মীর ঘিরে নীতির প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পুরোপুরি সহমত নন তাঁর বিদেশমন্ত্রী। উরির সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলায় ১৮ জন সেনার মৃত্যুর পরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছিল শাসক দলের অন্দরে। আরএসএস থেকে বিজেপি-তে আসা শীর্ষস্থানীয় নেতা রাম মাধব তো বলেই দেন, ‘দাঁতের বদলে চোয়াল নেওয়ার সময় এসে গিয়েছে’। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকেও অনেকেই সওয়াল করেন কড়া ব্যবস্থার পক্ষে। প্রধানমন্ত্রী নিজে এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের মতও সে দিকেই ঝুঁকে ছিল বলেই বিজেপি সূত্রের খবর। কিন্তু সুষমা ধীরে চলার পক্ষপাতী। কেন, তার পক্ষে বেশ কিছু যুক্তিও তিনি তুলে ধরেছেন সরকারের অন্দরে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্র বলছে, পাকিস্তানের লক্ষ্যই হচ্ছে কাশ্মীর সমস্যাকে আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরা। অন্য দিকে ভারতের বক্তব্য হল, এটা দ্বিপাক্ষিক সমস্যা। দু’দেশকে নিজেদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে যা মেটাতে হবে। এখন উরি-কাণ্ড নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে খুব সরব হলে প্রকারান্তরে কাশ্মীর প্রসঙ্গই তুলে ধরা হবে। কেননা, গোটা সমস্যার থেকে চোখ সরিয়ে শুধু একটি ঘটনার দিকে নজর দিতে বলার কোনও অর্থ হয় না। তা হলে কী করবেন সুষমা? সেই কৌশল নির্ধারণেই আপাতত ব্যস্ত মোদী সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। বিদেশ মন্ত্রক সূত্র অবশ্য দাবি করেছে যে ভারতের পক্ষে পরিস্থিতি এখন অনুকূল। পাকিস্তান যে সন্ত্রাসে মদত দেয় সে ব্যাপারে অনেক দেশই নিশ্চিত। মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ আজ বলেন, ‘‘বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশ উরির ঘটনার নিন্দায় মুখর। একটিমাত্র প্রতিবেশী দেশ ছাড়া বাকিরা সবাই ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমেরিকা, ফ্রান্স, রাশিয়া, ব্রিটেন, সৌদি, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি-সহ অনেক দেশ পাশে রয়েছে।’’ বস্তুত, সন্ত্রাসে পাকিস্তানের ভূমিকা তুলে ধরে তাকে আক্রমণের পথেই হাঁটতে চাইছেন বিদেশ মন্ত্রকের অনেক কর্তা। তাঁদের মতে, উরি-কাণ্ড সমস্যা নয়, সুযোগ হিসেবেই ভারতের সামনে এসেছে। উরির ঘটনা না-ঘটলে হিজবুল জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির হত্যার পরে কাশ্মীরে লাগাতার চলা অশান্তি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতকে কোণঠাসা করেই রাখত। কিন্তু এখন তারা উজ্জীবিত। পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ গত কাল রাষ্ট্রপুঞ্জে তাঁর বক্তৃতায় কাশ্মীর নিয়ে সরব হওয়ার পর ‘রাইট অব রিপ্লাই’-এর সুযোগ নিয়ে ভারতের আধিকারিক এনাম গম্ভীর পাল্টা আক্রমণে পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র’ হিসাবে চিহ্নিত করে বলেছেন, ‘‘আমাদের দেশ এবং অন্য প্রতিবেশীরা পাকিস্তানের দীর্ঘমেয়াদি সন্ত্রাস নীতির ফল ভুগছে। প্রাচীন সভ্যতার শিক্ষাকেন্দ্র তক্ষশীলার দেশ আজ সন্ত্রাসবাদের শীর্ষবিন্দু।’’ এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি সরকার এবং শাসক দলের অন্দরে যতই প্রবল হোক, শেষ পর্যন্ত তা এই গরম গরম কথাতেই আটকে থাকবে বলে অনেক বিশ্লেষকের মত। কারণ, তাঁদের মতে, পাকিস্তান বা তার অধিকৃত এলাকার ভিতরে ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটি ভেঙে দেওয়া ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়। সামরিক ভাবে সেই জোর ভারতের নেই। বস্তুত, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে সম্প্রতি সেই অপারগতার কথা কবুল করে নিয়েছেন সেনাবাহিনীর কর্তারাও। তা ছাড়া, দু’টি পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ যুদ্ধ কার্যত অসম্ভব। এর উপরে পাকিস্তানের মাথার উপরে চিনের বরাভয় তো রয়েছেই। রাষ্ট্রপুঞ্জে চিনের প্রতিনিধি লি কিয়াং আজ বলেছেন, ‘‘চিন এবং পাকিস্তান একে অন্যের বন্ধু। তা কখনওই ভাঙবে না।’’ ফলে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে যতই পাকিস্তানকে সন্ত্রাসে মদতদাতা দেশ হিসেবে চিহ্নিত করার দাবি উঠুক, ভারত তাদের সঙ্গে সংঘাতে যাচ্ছে এটা কোনওমতেই অনুমোদন করবে না আমেরিকা। কারণ মার্কিন বিদেশনীতি নির্ভর করে তাদের নিজস্ব স্বার্থের উপর। সেই স্বার্থ বলছে, আফগানিস্তানে তালিবানদের সঙ্গে যোঝার প্রশ্নে পাকিস্তানকে পাশে পাওয়া দরকার। সুতরাং আলোচনার মাধ্যমে ভারত-পাক সমস্যা মেটানোর উপরেই তারা জোর দেবে। এমতাবস্থায় সন্ত্রাস নিয়ে পাকিস্তানকে বেঁধা আর কাশ্মীর প্রশ্নে কিছুটা আত্মপক্ষ সমর্থন— নিজের বক্তৃতার সুর সুষমা এতেই বেঁধে রাখবেন বলে মনে করা হচ্ছে। কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ভোঁতা করতে সম্ভবত আগাম বলে রাখবেন যে, মানবাধিকারের সবচেয়ে ভয়াবহ লঙ্ঘন ঘটে সন্ত্রাসবাদে। পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে তাদের রাষ্ট্রীয় নীতি হিসাবে সেটাই করে চলেছে। এই বক্তব্য পেশের আবহ তৈরি করতেই বিকাশ স্বরূপ আজ বলেছেন, ‘‘প্রতিবেশী দেশগুলিতে নাশকতা পাচারে পাকিস্তান সব রকম সাহায্য করে চলেছে। জঙ্গিরাও সেখানে নিরাপদ স্বর্গোদ্যান গড়ে তুলেছে।’’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×