ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার

ঈশ্বরদীতে দু’কোটি টাকার চামড়া মজুদ

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ঈশ্বরদীতে দু’কোটি টাকার চামড়া মজুদ

তৌহিদ আক্তার পান্না, ঈশ্বরদী ॥ দীর্ঘ বিশ বছর পর এবার ঈশ্বরদীর বুনিয়াদি চামড়া ব্যবসায়ীদের (আড়তদার) বাম্পার লাভের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গত প্রায় বিশ বছরের মধ্যে এবারের মতো কম দামে কোরবানির গরু ও ছাগলের চামড়া কেনাবেচা করতে দেখা যায়নি। কোন কোন বছর তিন হাজার টাকার গরু চামড়া ২৪শ’ থেকে ২৬শ’ টাকার মধ্যে এবং ছাগলের চামড়া ১৪০ টাকা থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে কেনাবেচা করতে দেখা গেছে। আবার কোন কোন বছর এর উল্টোটাও দেখা গেছে। ২৬শ’ টাকার চামড়া ৩৫শ’ থেকে চার হাজার টাকা এবং ১৬০ টাকার চামড়া ২শ’ টাকা পর্যন্ত কেনাবেচা হয়েছে। সরকার এবার ট্যানারি মালিকদের চাহিদামতো ঋণও দিয়েছে। এ অবস্থায় বুনিয়াদি চামড়া ব্যবসায়ীরা (আড়তদার) এবার গরুর চামড়া পিসপ্রতি ১২শ’ থেকে ১৪শ’ টাকা ও ছাগলের চামড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকায় কিনেছেন। বুনিয়াদি ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় কৌশলে কম দামে চামড়া কিনতে সক্ষম হলেও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা কিছুটা চড়া দামে চামড়া কেনার পর কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বুনিয়াদি ব্যবসায়ীদের কেনা চামড়া অন্যান্যবারের ন্যায় বেশি দামে ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কোন কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে ব্যর্থ হলে ঈশ্বরদী অঞ্চলের চামড়া বেশি দামে চোরাইপথে ভারতে পাচারের সম্ভাবনাও রয়েছে। বুনিয়াদি ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যে এসব জানা গেছে। সূত্রমতে, ঈদের আগ থেকেই ট্যানারি মালিক ও বুনিয়াদি ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম ব্যবসায়িক সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা শক্ত অবস্থানে থেকে তাদের পুর্বের সিদ্ধান্তমতে নির্ধারিত কম মূল্যে চামড়া কিনতে সক্ষম হয়েছেন। সকাল থেকেই মৌসুমী ব্যবসায়ীদের মাঠে-ময়দানে, পাড়া-মহল্লায় চামড়া কিনতে তোড়জোড় শুরু হলেও বুনিয়াদি ব্যবসায়ীদের মধ্যে তেমন তোড়জোড় দেখা যায়নি। এবারের ঈদে ঈশ্বরদী পৌর এবং সাত ইউনিয়ন এলাকায় প্রায় সাড়ে চার হাজার গরু, ৪৩শ’ ছাগল, শতাধিক মহিষ ও পাঁচ শতাধিক ভেড়ার কোরবানির চামড়া বিক্রি হয়েছে প্রায় সোয়া কোটি টাকায়। এছাড়াও ঈশ্বরদীর নিকটবর্তী আটঘরিয়া, বড়াইগ্রাম, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, লালপুর, বাগাতিপাড়া, বাঘা, চারঘাট ও ভেড়ামারা উপজেলার মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও চামড়া কিনে এনে ঈশ্বরদীতে বিক্রি করেছেন। এবার এসব অঞ্চল থেকে প্রায় পৌনে এক কোটি টাকার ১৭শ’ গরু, ২২শ‘ ছাগল, দেড় শ’ মহিষ ও তিন শতাধিক ভেড়ার চামড়া বিক্রি করা হয়েছে। ঈশ্বরদী ও ঈশ্বরদীর নিকটবর্তী উপজেলাগুলো থেকে আমদানিকৃত সকল প্রকার চামড়া বুনিয়াদি ব্যবসায়ীরা লবণ দিয়ে প্রাথমিক প্রক্রিয়াজাত করে গুদামে গুদামে সংরক্ষণ করে রেখেছেন। ব্যবসায়ীরা এখন এসব প্রক্রিয়াজাতকৃত চামড়া নিয়ে অপেক্ষায় আছেন, কখন ট্যানারি মালিকদের গ্রীন সিগন্যাল পাবেন সে অপেক্ষায়। তারা ট্যানারি মালিকদের গ্রীন সিগন্যাল না পেলে হয়তবা চোরাইপথে আসা ভারতীয় পার্টির কাছে বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। কেউ কেউ কোরবানির চামড়া মজুদ করে ধীরে ধীরে বিভিন্ন হাট থেকে কম দামি নিম্নমানের চামড়া কিনে এনে মিশিয়ে বেশি পড়তা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সচেতন মহলের মতে, এবার হঠাৎ করে কোরবানির চামড়ার দাম তিন ভাগের এক ভাগে নেমে আসা রহস্যজনক। মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী বিপ্লব বলেন, একটি গরুর চামড়া এক হাজার ৫শ’ টাকায় কিনে তা এক হাজার ২শ’ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। কারণ চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণটা অনেক কঠিন। তাই যত দ্রুত সম্ভব তা বিক্রি করে দিতে হয়েছে। আর এ সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, গতবারের চেয়ে এবার একটি চামড়া ১৫শ’ থেকে দুই হাজার টাকা কম দাম পাওয়া গেছে। তবে আগ থেকে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হলেও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সেটা মানতে পারেননি বলে জানান আড়তদাররা। কয়েকজন আড়তদার এজেন্ট দাবি করেন, মৌসুমী ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। একটি ছোট চামড়া দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা দাবি করছেন তারা। এজন্য তাদের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না বলে অনেকেই লবণ দিয়ে রেখেছেন বেশি দাম পাওয়ার আশায়।
×