ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাজনীন বেগম

‘কথা’র কথকতা

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

‘কথা’র কথকতা

টাঙ্গাইল থেকে প্রকাশিত শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ক ছোট কাগজ ‘কথা’র ষোলোতম প্রকাশনা। উৎসর্গ করা হয়েছে সদ্য প্রয়াত কবি রফিক আজাদকে। নরুল ইসলাম বাদলের সম্পাদনা এবং আরিফুর রহমানের প্রচ্ছদে এ সাময়িকীটি প্রবন্ধ, গল্প এবং কবিতার সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না প্রচ্ছদটি আকর্ষণীয়। প্রথমেই সম্পাদক, রচয়িতাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই সময়ের দাবি মিটিয়ে এই ধরনের একটি সাময়িকী পাঠকদের উপহার দেয়ার জন্য। মাসুম খানের সংগ্রহ ও সম্পাদনার একমাত্র প্রবন্ধ ‘হিন্দু -বৈষ্ণব সহজিয়া সাধন ও পদাবলি’ মূলত বৈষ্ণব ধর্মের মর্মকথা এবং রাধা-কৃষ্ণের প্রেম সাধনার সাঙ্গীতিক ও নান্দনিক যে আবহ তাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। ফলে রাধা-কৃষ্ণের প্রেম, বিরহ ও গুরু বন্দনার অনেক সুর-ব্যঞ্জনা প্রবন্ধটিতে স্থান পেয়েছে, শ্রীকৃষ্ণকে তাঁর অনুসারী যেভাবে স্রষ্টা, গুরু, প্রথম দর্শক এবং প্রেমিকের মর্যাদার অলঙ্কৃৃত করে প্রবন্ধকার তারই একটি পর্যায়ক্রমিক ইঙ্গিত তার লেখায় স্পষ্ট করেছেন। রাধা-কৃষ্ণের অমর প্রেমের অমূল্য উপাখ্যানে সঙ্গীতের যে শৈল্পিক মূর্ছনা তারই পূর্ণ প্রতিফলন প্রবন্ধটি। এর পরে ১০টা গল্পের সমাহারে গোছানো হয় পরবর্র্তী অধ্যায়টি। গল্পগুলো মোটামুটি ছোট গল্পের আঙ্গিক ও বৈশিষ্ট্য ধারণ করে বিষয়বস্তুর মধ্যেও বৈচিত্র্য ও সামাজিক আবেদন স্পষ্ট হয়। শোকের মাস আগস্টকে সামনে রেখে মনি হায়দারের ‘শেখ মুজিবের রক্ত এবং রাশেদ রহমানের ‘শালুক নদীর জল’ গল্প দুটো প্রয়োজনীয এবং সময়োপযোগী রচনা। গল্পগুলোতে নিত্যদিনের জীবন প্রবাহের যে ছবি স্পষ্ট হয় তা পাঠক মনেও আগ্রহ ও উৎসাহ তৈরি করবে। মাতৃভাষা, মাতৃভূমি এবং দেশাত্মবোধের দায়দ্ধতা ও গল্পগুলোকে নানা মাত্রিকে সমৃদ্ধ করেছে। গল্পের চাহিদা ও গতি অনুযায়ী নারী-পুরুষের চরিত্র ও গল্পের প্রাসঙ্গিকতায় যথার্থ হয়ে উঠেছে ঋতুবৈচিত্র্যের লীলাভূমি এবং নদীমাতৃক আবহমান বাংলার বৈষয়িক ও নৈসর্গিক ঐশ্বর্য গল্পগুলোতে আলাদা আবহ তৈরি করেছে প্রতিদিনের জীবনের সুখ-দুঃখের মর্মকথার গল্পসমূহের সারবত্তা পাঠকের মনকে ভারাক্রান্ত করে। দৈনন্দিন জীবনের ভাঙ্গ-গড়া এবং হাসি-কান্নায় ভরপুর প্রতিটি গল্প বিভিন্ন ভাবে পাঠকের আগ্রহ তৈরি করবে এ কথা বলাই যায়। সব শেষে সংযোজিত হয় একগুচ্ছ কবিতা। সঙ্কলনটি যেহেতু প্রয়াত কবি রফিক আজাদকে উৎসর্গ করা সঙ্গত কারণেই কবির ‘চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া’ দিয়েই কবিতার পর্বটি শুরু করা হয়। আরও অনেক কবিতায় বিভিন্ন কবি তাঁদের আবেগ-অনুভূতি এবং স্বাপ্নিক আবিষ্টতা দিয়ে কবিতার মর্মে তাঁদের শৈল্পিক আঁচড় ফেলেছেন। নব উদ্যমে আর উৎসাহে কবিরা যদি এভাবে লিখতে থাকেন তাহলে পাঠকের সংখ্যা কমে যাওয়ার মতো কোন অবস্থা তৈরি হবে না। কারণ ইদানীং প্রশ্ন তোলা হচ্ছে পাঠকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে কিনা? নতুন নতুন লেখক ও কবি তাঁদের সৃষ্টিশীল জগত তৈরি করতে থাকলে পাঠকের সংখ্যা বাড়তেও সময় লাগবে না। গল্পকার এবং কবিদের অসংখ্য ধন্যবাদ এই সময় এমন একটি স্মরণিকা নিয়ে পাঠক সমাজে হাজির হওয়ার জন্য। তার পরও এটুকু বলা বোধহয় অসঙ্গত হবে না যে লেখাগুলো প্রশংসার দাবি রাখলেও প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, আঙ্গিক এবং বৈশিষ্ট্যের মানোন্নয়ন আবশ্যক। লেখাগুলো প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখলেও বিভিন্নভাবে এর উৎকর্ষ সাধনও অপরিহার্য। সুতরাং লিখতে হবে এবং আরও ভাল লিখতে হবে। পাঠকের সংখ্যা বাড়াতে হবে। সাময়িকীর সর্বাঙ্গীণ সফলতা কামনা করছি।
×