ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তান প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস উস্কে দিচ্ছে ॥ ভারত

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পাকিস্তান প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস উস্কে দিচ্ছে ॥ ভারত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ কাশ্মীরের উরিতে জঙ্গী হামলাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ এশিয়ার চিরবৈরী প্রতিবেশী দেশ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসকে উস্কে দেয়ার অভিযোগ তুলেছে ভারত। ভারত বলেছে, সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে পাকিস্তান। জবাবে পাকিস্তান বলেছে, ভারত পাক সীমান্তে বিপুল সৈন্য ও অস্ত্র জড়ো করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতকে ঠেকাতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইসলামাবাদ থেকে অন্তত ২৩টি ফ্লাইট সিডিউল বাতিল করেছে পাকিস্তান। আকাশ পথে সামরিক বিমানের মহড়া চালিয়েছে দেশটি। বৃহস্পতিবার ভারতের মুম্বাই শহরের বিমানঘাঁটির কাছে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে ভারত। আর ভারত-পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশ চীন বলেছে, পাকিস্তান আক্রান্ত হলে চীন ইসলামাবাদের পাশে থাকবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকে অংশ নেয়া চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং বুধবার নওয়াজ শরীফের সঙ্গে বৈঠক করেন। খবর এএফপি, ডন, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও ওয়েবসাইটরে। ওদিকে বুধবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণে একে অপরকে দোষারোপ করেছে ভারত ও পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ। ভাষণে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ বলেছেন, কাশ্মীর নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাকে বিশ্ব নেতারা উপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, ভারত পাকিস্তানের সীমান্তের কাছে বিপুল অস্ত্রভা-ার গড়ে তুলছে। পাশাপাশি সৈন্য সমাবেশও করেছে ভারত। এ সময় তিনি বলেন, ভারতকে ঠেকাতে প্রয়োজনীয় সব কিছু করবে পাকিস্তান। তবে পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে কোন অস্ত্র প্রতিযোগিতায় যেতে চায় না বলে জানান নওয়াজ। ভাষণে নওয়াজ আরও বলেন, ‘পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে শান্তি চায়। এই শান্তি অর্জনে আমি আশাতীত প্রচেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু ভারত সংলাপে বসার জন্য অগ্রহণযোগ্য শর্ত আরোপ করেছে। নওয়াজ বলেন, আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, কেবল পাকিস্তানের স্বার্থেই আলোচনার গুরুত্ব রয়েছে তা নয়। এটি দুই দেশের স্বার্থেই প্রয়োজন। আমাদের মতপার্থক্যসমূহ নিরসনে এটা অপরিহার্য। নওয়াজ বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সংযম ও দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শনের সবপন্থা নিয়ে আলোচনা করতে আমরা তৈরি আছি। এই আলোচনা যেকোন ফোরামে কোন রকম শর্ত ছাড়াই করতে আমরা প্রস্তুত। নওয়াজের এই হুঁশিয়ারির আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, উরিতে হামলার ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের সাজার মুখোমুখি করা হবে। নওয়াজ শরীফের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতীয় দূত এক বিবৃতিতে বলেন, প্রাচীন ইতিহাসের শিক্ষার পীঠস্থানকে সন্ত্রাসের আখড়া বানিয়েছে পাকিস্তান। তাই পাকিস্তানের সঙ্গে কোন আলোচনা নয়। ভাষণে কাশ্মীরে চলা আন্দোলনকে ফিলিস্তিনীর গণআন্দোলন ‘ইন্তিফাদার’ সঙ্গে তুলনা করেন নওয়াজ। এর জবাবে ভারতের জাতিসংঘ দূত বলেন, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশী সাহায্য খরচ করে সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে ইসলামাবাদ। কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনে পাক প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগের জবাবে ভারত বলেছে, সন্ত্রাসই সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন। পাকিস্তান সন্ত্রাসকে উস্কে দিচ্ছে। নওয়াজ শরীফের সঙ্গে বৈঠকে চীনা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পাকিস্তান-চীন সম্পর্কে কোন চিড় ধরবে না। পাকিস্তানের সমস্যায় চীন যে কোন সহায়তা দিতে প্রস্তুত। ওদিকে উরিতে হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আবারও প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামাবাদ। বৃহস্পতিবার পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাফিস জাকারিয়া বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কাশ্মীর সমস্যা থেকে দূরে রাখতে এটা ভারতের প্রচেষ্টার অংশ। এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ভারতের এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। এর কোন সত্যতা নেই। তিনি বলেন, উরি হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার কোন প্রমাণ এখন পর্যন্ত হাজির করতে পারেনি ভারত। তিনি বলেন, উরিতে হামলা নিয়ে ভারতের মিডিয়াতে মিথ্যা খবর প্রচারিত হচ্ছে। গত সপ্তাহে কাশ্মীরের উরিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ১৮ ভারতীয় সেনা নিহত হয়। হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গীদের দায়ী করে ভারত। এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাদের ওপর এ হামলাই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। এ হামলাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে ভারত সরকারের প্রতি ভেতর থেকে তাগিদ রয়েছে।
×