ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদিতে নারী গৃহকর্মীর সঙ্গে স্বামী বা পুরুষ আত্মীয় নিয়োগের অনুমতি

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সৌদিতে নারী গৃহকর্মীর সঙ্গে স্বামী বা পুরুষ  আত্মীয় নিয়োগের  অনুমতি

ফিরোজ মান্না ॥ সৌদি আরব নারী গৃহকর্মীর সঙ্গে স্বামী বা নিকট আত্মীয় পুরুষ কর্মী নিয়োগের অনুমতি দিয়েছে। সৌদি আরবের উপদেষ্টা পরিষদ শূরা কাউন্সিল এই অনুমতি দেয়। শূরা কাউন্সিলের অনুমতির পর দেশটির সমাজ কল্যাণ ও মানবসম্পদ কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নাগাদি একটি সুপারিশ তৈরি করেছেন। এই সুপারিশের ভিত্তিতে পুরুষকর্মী নিয়োগ হবে। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার বলেছে, বেশ কয়েক দফা বৈঠকের পর সৌদি কর্তৃপক্ষ অফিসিয়ালি এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। তারা নারীকর্মীর পাশাপাশি তার স্বামী বা নিকট আত্মীয় পুরুষকর্মী নিয়োগ দেবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরব কম করে হলেও ৪৮ খাতে বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী নিয়োগ দিয়ে আসছে। সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্টদূত গোলাম মসিহ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন, নারীকর্মীর সঙ্গে আসা পুরুষকর্মীদের বেশ কয়েকটি সেক্টরে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুরুষকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে যৌথ টেকনিক্যাল কমিটি এক সঙ্গে কাজ করবে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন করার জন্য উভয় দেশ তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে। মানবসম্পদ খাতে বাংলাদেশ থেকে তারা নারী-পুরুষ কর্মী নিয়োগ দেবে। গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি সৌদি আরবের শ্রম ও সামাজিক উন্নয়নমন্ত্রী মাফরেজ আল হাকাবানি সৌদিতে বাংলাদেশী গৃহকর্মী নিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেন। ঢাকায় সৌদি আরবের তিন কোম্পানি নারী গৃহপরিচালিকা প্রশিক্ষণ দেয়। এই তিন কোম্পানির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। সম্প্রতি সৌদি আরবে নারীকর্মীর সঙ্গে স্বামী বা নিকট আত্মীয় পুরুষ গৃহকর্মী নিয়োগ সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করেছিল দেশটির শ্রম ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সৌদিতে নারী কর্মীদের ওপর নির্যাতনের খবরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্মী নিয়োগের নতুন প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে নারী কর্মীর সঙ্গে স্বামী বা নিকট আত্মীয় পুরুষ কর্মী নিয়োগ করতে হবে। সৌদি কর্তৃপক্ষ নতুন প্রস্তাবে নারী কর্মীর সঙ্গে পুরুষ কর্মী নিতেও রাজি হয়। তারা কিছুসংখ্যক কর্মী নতুন প্রস্তাবে নিয়োগও দেয়। হঠাৎ করে নারী গৃহকর্মী নিয়োগের সঙ্গে আর পুরুষ কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে না দেশটি। এখন তারা নারী কর্মী নিয়োগও বন্ধ করে রেখেছে। সূত্র জানিয়েছে, এ বছরের শুরুর দিকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় নারী কর্মীর সঙ্গে স্বামীকেও কর্মী হিসেবে নেয়ার প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে সৌদি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা রাজি হয়ে বেশ কিছু নারী কর্মীকে তারা নতুন নিয়মে নিয়োগও দিয়েছে। কিন্তু প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নারী কর্মীদের সঙ্গে তার স্বামী বা নিকট আত্মীয় পুরুষ কর্মী নিয়োগ বন্ধ করেছে। সৌদিতে নারী কর্মী নিয়োগ নিয়ে ‘ন্যাশনাল এ্যালাইন্স ফর মাইগ্রেশনস রাইটস বাংলাদেশ’ মনে করে, সৌদিতে নারী নির্যাতন ব্যাপক হারে বেড়েছে। সেখানে একজন নারী কর্মী শুধু গৃহস্থালির কাজই করতে হয় না। তাকে গৃহকর্তাসহ ওই বাড়ির যত পুরুষ আছে তাদের যৌনদাসী হিসেবেও কাজ করতে হয়। যদি এ কাজে তারা রাজি না হন তাহলে তাদের ওপর চলে শারীরিক নির্যাতন। দীর্ঘদিন ধরে সৌদিতে এমন অবস্থা চলে আসছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ওই সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে কোন নারী কর্মী যাতে নির্যাতনের শিকার না হন তার জন্য উদ্যোগ নেয়। সৌদিতে নারী কর্মীদের নানা সমস্যার কথা চিন্তা করে নারী কর্মীদের সঙ্গে স্বামী অথবা নিকট আত্মীয়কে নেয়া এবং তাদের নিরাপদে রাখার ওপর জোর দেয়। সৌদি কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবটির প্রতি একমত হয়ে কিছু কর্মী নিয়োগ দিলেও হঠাৎ করে পুরুষ কর্মী নিয়োগ বন্ধ করেছিল। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় অনেক দেন দরবার করার পর আবার সৌদি আরব নারী কর্মীদের সঙ্গে পুরুষ কর্মীদের নিয়োগের অনুমতি দিয়েছে।
×