ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থ দিলেই মেলে ফিটনেস সার্টিফিকেট

২০ হাজারের বেশি নৌযান চলছে অবৈধভাবে ॥ কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হাতছাড়া

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

২০ হাজারের বেশি নৌযান চলছে অবৈধভাবে ॥ কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হাতছাড়া

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ যাত্রী ও মালামাল পরিবহন এবং মৎস্য আহরণে নিয়োজিত নৌযানগুলোকে নিয়মের আওতায় আনা যায়নি। ফলে এ সেক্টরে ২০ হাজারেরও বেশি নৌযান অবৈধভাবে চলাচল করছে। এতে একদিকে সরকার ন্যূনতম ১০ কোটি টাকার রাজস্ব যেমন হারাচ্ছে, তেমনি এসব নৌযানের ভুয়া সার্ভে রিপোর্ট ও সনদ প্রদানের ঘটনায় আরও প্রায় ৮ কোটি টাকার রাজস্ব হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। নৌ সেক্টরের বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, বর্তমানে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের অধীনে নিবন্ধিত ১০ সহস্রাধিক অভ্যন্তরীণ নৌযানের মধ্যে যাত্রীবাহীর সংখ্যা ১৬ শতাধিক। এছাড়া সমুদ্রগামী জাহাজ রয়েছে ৪০, ফিশিং ট্রলার দুই শতাধিক, ফিশিং ও কার্গোবোট পাঁচ সহস্রাধিক এবং উপকূলীয় তেল ও পণ্যবাহী জাহাজ তিন শতাধিক। এসব নৌযান ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও খুলনায় নৌপরিবহন অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন অফিসগুলোতে নিবন্ধিত। কিন্তু দেশের নৌ ও সমুদ্রপথে বর্তমানে নৌযানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। এর মধ্যে অধিকাংশ কার্গো ও ফিশিংবোট। সমুদ্র ও নদীপথে পণ্য পবিহনের কাজে এর বড় একটি অংশ যেমন চলাচল করছে, তেমনি সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় মৎস্য আহরণে নিয়োজিত রয়েছে বিরাট আরেকটি অংশ। এসব নৌযানের বিরুদ্ধে নদীপথে বা সমুদ্রে মোবাইল কোর্ট বা ধরপাকড় অভিযান না থাকার কারণে দিন দিন অবৈধভাবে এর চলাচল বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন সময়ে নৌযান দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু ঘটলে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলগুলো তৎপর হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তা আবার আগের অবস্থানে ফিরে যায়। অভিযোগ রয়েছে, সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন নৌ বাণিজ্য অধিদফতরগুলোর সঙ্গে নৌযান মালিকদের গোপন যোগাযোগ থাকায় এরা নিবন্ধনকাজে এগিয়ে আসছে না। আর এ কারণে নিবন্ধনকাজে সরকারের প্রায় ৮ কোটি টাকার রাজস্ব হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরে নৌযান সার্ভের কাজে জড়িতদের মধ্যে দুর্নীতির প্রবণতা এতই বেশি যে, গোপন পথে অর্থ দিলে এরা সহজেই নৌযানের ফিটনেস সনদ দিয়ে দেয়। এছাড়া ভুয়া ফিটনেসেরও ছড়াছড়ি রয়েছে। সূত্র জানায়, সমুদ্র ও নৌপথে অনিবন্ধিত বিভিন্ন ছোট-বড় নৌযান চোরাচালান, মানব পাচার, মাদক পাচারসহ অবৈধ নানা কাজে জড়িয়ে আছে। চট্টগ্রামের সমুদ্র উপকূল এলাকায় নৌযানের বড় একটি অংশ চোরাচালানি ও নিষিদ্ধ মাদক পাচারে নিয়োজিত। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় যেসব নৌরুট রয়েছে এতে বৈধ-অবৈধ নৌযানের সমাহার রয়েছে। প্রয়োজনীয় জনবল নেই- বিষয়টি বারবার সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরকে জানিয়ে পার পেতে চায়, যা প্রকারান্তরে নিজেদের অযোগ্যতা ও অদক্ষতারই প্রমাণ দেয়। সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার প্রতিটি সেক্টরে জনবল বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে আগের চেয়ে বেশি জনবল নিয়োগ পায়নি এবং তা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের অধীনে ফিটনেস প্রদানকাজে ইঞ্জিনিয়ার, সার্ভেয়ারদের সংখ্যা একেবারে স্বল্প বলে দাবি করে থাকেন। আর এ কারণেই নাকি অবৈধ নৌযানের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এসব অবৈধ নৌযান বর্তমানে সাগর ও নদীপথে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে রেখেছে তা অচিন্তনীয়। ডাকাতির কাজেও কোন কোন নৌযান অবাধে ব্যবহৃত হচ্ছে। এরা সমুদ্রে মৎস্য লুণ্ঠন থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক পণ্য ছিনিয়ে নেয়া এমনকি মাঝিমাল্লা হত্যা করে নৌযান নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও রয়েছে। এদিকে, ৫৫টি কাঠের নির্মিত ট্রলারের কোন অস্তিত্ব গেল দুই বছরেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাত সদস্যের কমিটি এ তথ্য উদ্ঘাটনের পর রিপোর্টে বলেছে, ৫৫টি কাঠের তৈরি ট্রলারের মালিকের নাম ও ঠিকানা সবই কাগজে। আদালতের রায়ে এসব ট্রলারের নাম রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এগুলোর কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, পরীক্ষামূলকভাবে সাগরে মাছ ধরার জন্য এ ধরনের ট্রলারের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মাঠপর্যায়ে এগুলো কেন নেই তা রহস্যাবৃত। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাঠের তৈরি ট্রলার নিয়ে বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনা রয়েছে। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে পুরনো এ জাতীয় নৌযান স্বল্পমূল্যে ক্রয় করে ব্যবসায়ীদের অসাধু একটি চক্র আদালতের মাধ্যমে নাম প্রচার করিয়ে অবৈধ সুযোগ করে নিচ্ছে।
×