ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হজ পালন শেষে খালেদা জিয়া ফিরেছেন

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

হজ পালন শেষে খালেদা জিয়া ফিরেছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পবিত্র হজ পালন শেষে দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বিকেল সোয়া পাঁচটায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি ঢাকার শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দর এলাকায় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি গুলশানের বাসায় চলে যান খালেদা জিয়া। বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, নিতাই রায় চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মুজিবুর রহমান সারোয়ার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে যাওয়া নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকেই ভেতরে প্রবেশের সুযোগ না পেয়ে প্রথমে পুলিশের সঙ্গে বাকবিত-া ও পরে বিমানবন্দরে সড়কে অবস্থান করে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তবে খালেদা জিয়া বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে গুলশানের বাসায় যাওয়ার পথে সড়কের দুই পাশে অবস্থান করা বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী বিভিন্ন সেøাগান দিয়ে তাকে হাত নেড়ে স্বাগত জানান। এর আগে মদিনা থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেয়ার আগে সৌদি সময় ভোর পৌনে ৪টায় খালেদা জিয়াকে বিদায় জানান সেদেশে অবস্থানরত বিএনপি নেতাকর্মীরা। এদিকে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি নয়, সরকারই নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করেছে। তবে বিএনপি আশা করে নির্বাচন কমিশনসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে সরকার নিরপেক্ষ রাখবে। গণতন্ত্রের স্বার্থেই সরকারকে তা করতে হবে। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সেরে বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে গুলশানের বাসার উদ্দেশে রওনা দেন খালেদা জিয়া। তার গাড়ি বহরকে ভিআইপি নিরাপত্তা দেয় পুলিশ ও তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী চেয়ারপার্সন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) সদস্যরা। এ সময় বিমানবন্দর গোলচত্বর থেকে কুড়িল-বিশ্বরোড পর্যন্ত রাস্তায় ঢাকা মহানগর বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার ছবি সংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে বিভিন্ন সেøাগান দেন এবং নেড়ে তাদের প্রিয় নেত্রীকে স্বাগত জানান। এ সময় খালেদা জিয়াও গাড়ির ভেতর থেকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাত নাড়েন। বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়া বাসায় ফেরার পথে যানজটের কারণে ওই সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। ৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় ঢাকা থেকে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে রওনা হয়ে সৌদি আরবের স্থানীয় সময় রাত ১২টায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া জেদ্দা কিং আব্দুল আজিজ বিমানবন্দরে পৌঁছান। আর একই দিনে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে লন্ডন থেকে রওনা দিয়ে ৮ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের স্থানীয় সময় ভোর ৫টায় জেদ্দা কিং আব্দুল আজিজ বিমানবন্দরে অবতরণ করেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডাঃ জোবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান। সেদিন থেকে একত্রিত হয়ে হজ পালন ও খালেদা জিয়া সৌদি আরব ত্যাগের আগ পর্যন্ত তারা একসঙ্গেই অবস্থান করেন। সৌদি আরব অবস্থানকালে হজ করার পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া সৌদি আরব বিএনপির নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলে তিনি তাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে দলের জন্য কাজ করতে বলেছেন। ১১ সেপ্টেম্বর সৌদি বাদশা সউদ বিন আবদুল আজিজের আমন্ত্রণে রাজকীয় অতিথি হিসেবে খালেদা জিয়া সপরিবারে সৌদি আরবের মক্কায় ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে পবিত্র হজ সম্পন্ন করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ছেলে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডাঃ জোবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান ও ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শরীফ শাহ কামাল তাজ, একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার, আলোকচিত্রী নুরুউদ্দিন আহমেদ ও গৃহকর্মী ফাতেমা। ১৭ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে মক্কা থেকে মদিনা শরিফ যান। সেখানে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত ও নফল ইবাদত করেন তিনি। বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায় সৌদি আরব থেকে খালেদা জিয়া বাংলাদেশ থেকে যাওয়া তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে দেশের উদ্দেশে রওনা দেন। পথে দুবাই বিমানবন্দরে প্রায় ২ ঘণ্টা যাত্রা বিরতি করার সময় ছেলে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডাঃ জোবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান ও প্রয়াত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমানকে বিদায় জানান। পরে বিকেল সোয়া ৫টায় দেশে ফিরে আসেন। আর তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডাঃ জোবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান লন্ডনে ফিরে যান। উল্লেখ্য, এটি হচ্ছে খালেদা জিয়ার তৃতীয় হজ। এর আগে ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে একবার এবং ১৯৯৭ সালে বিরোধী দলের নেতা থাকাকালে তিনি আরও একবার হজ করেন। তবে প্রায় প্রতিবছরই রমজানে তিনি ওমরাহ পালন করেন। আট বছর ধরে যুক্তরাজ্যে থাকা ছেলে তারেক রহমানকে নিয়ে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে মায়ের সঙ্গে ওমরাহ পালন করেছিলেন। গত বছর তারেক রহমান লন্ডন থেকে সৌদি আরব যাওয়ার ভিসা না পাওয়ায় খালেদা জিয়াও ওমরাহ করতে যাননি। তবে গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর লন্ডন সফরে যান বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। লন্ডন সফরে গিয়ে ছেলে তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ২ মাসেরও বেশি সময় অবস্থান করে গত বছর ২১ নবেম্বরে দেশে ফিরে আসেন তিনি।
×