ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টি ঝরিয়ে বর্ষা মৌসুম বিদায় নিচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বৃষ্টি ঝরিয়ে বর্ষা মৌসুম বিদায়  নিচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদায় বেলায় মৌসুমী বায়ু সারাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় থাকায় প্রত্যেকদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ঝরছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃষ্টি ঝরিয়েই এবারের মৌসুমী বায়ু বিদায় নিচ্ছে। বিদায়ের আগে দেশে আরও কয়েকদিন বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে বর্ষার বিদায়ের আগেই মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এটাই হবে শেষ বৃষ্টি। এরপরই দেশে শীতের আবহ বিরাজ করবে। এরপরে যে বৃষ্টিপাত হবে সেটা পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে। বর্ষার বিদায় বেলায় আরও কিছুদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে । গত কোরবানির ঈদের আগের দিন থেকেই সারাদেশে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কোথায় তা মাঝারি আবার কোথায় ভারি। রাজধানী ঢাকাতে প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টির দেখা মিলছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিনও মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত আরও বাড়তে পারে। মূলত বর্ষার বিদায় বেলায় বৃষ্টি ঝরেই বিদায় নিচ্ছে উল্লেখ করেন। আবহাওয়া অধিদফতরের দেয়া তথ্যমতে, মৌসুমী বায়ুর অক্ষ হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে অসম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। বাংলাদেশে মৌসুমী বায়ু মোটামুটি সক্রিয় রয়েছে তবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। দেশের ওপরে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে আকাশে প্রায়ই কালো মেঘে ঢেকে থাকছে। বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতও হচ্ছে ব্যাপক। এ বছরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। মৌসুমের প্রথম থেকে সারাদেশের ওপর মৌসুমী বায়ু অধিক সক্রিয় থাকায় অন্য বছরের তুলনায় এ বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে উত্তরাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। এছাড়া মৌসুমী বায়ু আধ্যিকের কারণে বিহারেও অধিক বৃষ্টিপাত হয়। এ কারণে বিহারের বৃষ্টিপাত থেকে সৃষ্ট বন্যার প্রভাব বাংলাদেশেও এসে পড়ে। যার কারণে গঙ্গা হয়ে অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশে প্রবেশের করণে দেশের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের ৭ জুন থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সময়কে বর্ষাকাল বলা হয়ে থাকে। এই চার মাসে মৌসুমী বায়ুর বিস্তৃতি ঘটে। এর প্রভাবে সারাদেশে বৃষ্টি হয়ে থাকে। জুনের মাঝামাঝি সময়ে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় এ সময় কখনও কখনও কয়েক দিন টানা বৃষ্টি হয়। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি এ সময়ে মৌসুমী বায়ু দুর্বল হতে থাকে। এ সময় বৃষ্টি ঝরে থেমে থেমে। আবহাওয়াবিদদের মতে, মৌসুমী বায়ু দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জলবায়ুতে সর্বাপেক্ষা প্রভাব বিস্তারকারী বায়ু প্রবাহ। বিশেষ করে বাংলাদেশে বর্ষাঋতুতে এই বায়ু প্রভাবেই অধিক বৃষ্টিপাত ঝরে। গ্রীষ্ম ও শীত মৌসুমে সমুদ্র ও ভূ-পৃষ্ঠের উত্তাপ এবং শীতলতার তারতম্যের ফলে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মৌসুমী বায়ু প্রবাহের দিকও পরিবর্তিত হয়। শীত মৌসুমে শুষ্ক মৌসুমী বায়ু উত্তর-পূর্ব দিক থেকে সমুদ্র অভিমুখে প্রবাহিত হয়। গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম (সমুদ্রভাগ) থেকে ভূমি অভিমুখে প্রবাহিত হয়। তাদের মতে, ভারতীয় উপমহাদেশে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী বায়ু প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প বহন করে আনে। তাই এ অঞ্চলে সে সময় ভারি বৃষ্টিপাত হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিবেশী দেশসমূহে এই বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে। বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আবার সমুদ্রের দিকে নেমে যায়। আগামী ১৫ অক্টোবর নাগাদ দেশ থেকে মৌসুমী বায়ু সমুদ্রের দিকে নেমে যাবে। বৃহস্পতিবারও সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিন ঢাকায় সকাল থেকে দুপুরে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অফিস ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে ঢাকায়। এছাড়া রাজধানীর বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে হাল্কা বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটিতে ৪৮ মিলিমিটার, সিলেটে ৪৪, ঈশ্বরদীতে ৪১ বদলগাছীতে ৩৫, দিনাজপুরে ২৯ তেঁতুলিয়ায় ৬৮ মিলিমিটারসহ সারাদেশেই কম-বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের সাবেক পরিচালক শাহ আলম বলেন, বর্ষার শেষ সময় এসে মৌসুমী বায়ু ধীরে ধীরে সাগরের দিকে নেমে যেতে থাকবে। আকাশ পরিষ্কার হতে থাকবে। তাই বর্ষাকাল বিদায়ের বৃষ্টি এমন হয়ে থাকে। আবহাওয়া অফিস জানায়, মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আরও বাড়তে পারে। এ সময় দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে। বৃহস্পতিবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হাল্কা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
×