ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অভিন্ন নদীর পানির সমবণ্টন চান প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

অভিন্ন নদীর পানির সমবণ্টন চান প্রধানমন্ত্রী

বিডিনিউজ ॥ অভিন্ন নদীর পানির সমবণ্টনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে পানিকে উন্নয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনায় নিতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে পানি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের এক প্যানেল সভায় (এইচএলপিডব্লিউ) প্রধানমন্ত্রী এ বক্তব্য দেন বলে তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পানি বিষয়ক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অভিন্ন নদীর পানির সমবণ্টনের পাশাপাশি নদী ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত পদক্ষেপ এবং পানিনির্ভর প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। নিরাপদ খাবার পানি ও পয়ঃব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে এখন মোট জনসংখ্যার ৯৮ শতাংশই নিরাপদ পানি পান করছে এবং ৬৫ ভাগ মানুষ নিরাপদ স্যানিটেশনের সুবিধা পাচ্ছে। টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে পানির আন্তঃসম্পর্কের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে ‘কিছু বাধা’ রয়েছে বলে জানান। এসব বাধা দূর করতে এখনই আন্তর্জাতিক উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি। বর্তমানে মোট ব্যবহারযোগ্য পানির ৭০ শতাংশ কৃষিতে ব্যয় হয় জানিয়ে শেখ হাসিনা কম পানিতে উৎপাদনযোগ্য শস্যের চাষ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন। পানির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে এ সম্পর্কিত অবকাঠামো গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সমন্বিতভাবে একটি আন্তর্জাতিক তহবিল গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা জানান, পানির অধিকার নিশ্চিত করতে কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং নয়টি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন বৈঠকের প্যানেল সদস্যরা। তারা বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপধান এবং নেতাদের বলেছেন, পানিকে যেন তাদের চিন্তাভাবনা, পরিকল্পনা ও কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা হয়। প্যানেল সদস্যরা সবার জন্য পানির অধিকার এবং নিরাপদ খাবার পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বলেও জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি মনে করিয়ে দেন, পানির সহজ প্রাপ্তি এবং কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে নতুন নতুন অবকাঠামোয় প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ আবুল কালাম আজাদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ব্যবসায়িক রীতির অঙ্গীকার রক্ষার আহ্বান ॥ বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরণ, ন্যায্যমূল্য ও উন্নয়ন অর্থায়নের সুযোগদানের ক্ষেত্রে দেয়া অঙ্গীকার রক্ষায় বিশ্বের স্টেকহোল্ডারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে জাতিসংঘ সদর দফতরে ডিসেন্ট ওয়ার্ক এ্যান্ড ইনক্লুসিভ গ্রোথ বিষয়ক স্যোসাল ডায়লগ সংক্রান্ত গ্লোবাল ডিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘দেশে ও দেশের বাইরে সকল ক্ষেত্রে অভিন্ন দায়িত্বশীলতা হিসাবে ব্যবসাকে যদি গণ্য করা হয় তাহলে আমরা আরও লাভবান হবো।’ সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন লো ফেভেন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। উন্নয়নকে ‘যৌথ উদ্যোগ’ হিসেবে বর্ণনা করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে পারস্পরিক সমৃদ্ধ সংলাপের সুযোগ দিতে একটি বলিষ্ঠ প্রক্রিয়া উদ্ভাবনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে উৎপাদনশীল সম্পর্ক উন্নয়নের পূর্ব শর্ত, এটি একটি যৌথ উদ্যোগ এবং এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক, শর্তানুগ ও যতœবান হতে হবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, একটি সমন্বিত ও সক্ষমতার সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য গ্লোবাল ডিল ইনিশিয়েটিভ অংশীদারদের মধ্যে সংলাপের উৎসাহ জোগাবে। ‘এজন্য স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে পারস্পরিক সংলাপ জোরদারে বলিষ্ঠ উদ্যোগ নিতে হবে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশে সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার পথ অনুসরণ করছে, যাতে কেউ পিছিয়ে না থাকে। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিল্প, নিয়োগকর্তা এবং শ্রমিকদের আরও উন্নত ভবিষ্যতের জন্য সকল উন্নয়ন সহযোগী ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. দীপু মনি এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। এসডিজি বাস্তবায়নে জেন্ডার সংবেদনশীলতা কাজে লাগাতে হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাউকেই পেছনে ফেলে রাখা যাবে না- এই অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জেন্ডার সংবেদনশীলতাকে গুরুত্বের সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক নারী এবং মেয়েকে গণনা করার ধারণা নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা বিষয়ে আমার নিজস্ব চিন্তাধারাকে প্রতিফলিত করে। কাউকে পিছনে ফেলে না রাখায় অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার কারণে এসডিজি বাস্তবায়নের আমাদের অবশ্যই জেন্ডার সংবেদনশীল পদ্ধতিকে লালন করতে হবে।’ অস্ট্রেলীয় সরকার, ইউএন উইমেন, বিল এ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস্ ফাউন্ডেশন ও জাতিসংঘ ফেডারেশন/ডাটা ২ এক্স এর উদ্যোগে জাতিসংঘ সদর দফতরে ‘মেকিং এভরি উইমেন এ্যান্ড গার্ল কাউন্ট’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিপুল সংখ্যক নারী দারিদ্র্যসীমার নিচে বা সম্পদহীনতার জন্য তাদের জীবন মান দ্রুত পড়তে থাকায় বাংলাদেশে তার সরকারের জেন্ডার সংক্রান্ত এমডিজি কার্যক্রম ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি ক্ষেত্রে লিঙ্গ-সমতা বজায় রাখতে পেরেছি। মাতৃমৃত্যুহার যথেষ্ট হ্রাস পেয়ে প্রতি হাজারে ১.৭ জনে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচী বৃদ্ধ, বিধবা, অক্ষম, স্তন্যদায়ী মা ও দুস্থ নারীদের ব্যাপকভাবে সহায়তা দিচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার প্রতিবছর সংসদে জাতীয় বাজেটসহ একটি জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট উপস্থাপন করছে। তিনি বলেন, আমরা স্বীকার করি যে, এই কাজের জন্য মানসম্মত ও হালনাগাদ জেন্ডার সংক্রান্ত ডাটা যোগার করা কষ্টকর হবে। একটি সুষ্ঠু ডাটাবেস আমাদের নারী ও মেয়ে শিশুদের ব্যাপারে গৃহীত উদ্যোগের সাফল্য ব্যর্থতা বুঝতে সাহায্য করতে পারে। শেখ হাসিনা আরও বলেন, এই প্রচেষ্টার সঙ্গে কিভাবে আমাদের পুরুষদের এবং ছেলেদের যুক্ত করা যায় এটা আমাদের বলতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের পরিকল্পনা, বাজেট, পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো খুব সস্তায় জেন্ডার সংবেদনশীল তথ্য যোগার ও প্রক্রিয়াজাত করতে পারে। তিনি বলেন, এখানে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে আজ যা চালু করা হলো তা আশাপ্রদ বলে মনে হচ্ছে। এই ব্যবহারিক, বাস্তবভিত্তিক কাজ সম্ভবত জাতিসংঘের নারী ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে আমাদের চমৎকার সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরেকটি পালক যোগ করতে পারে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ আবুল কালাম আজাদ ও পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক প্রমুখ। শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে সুইজারল্যান্ডের সহায়তা কামনা ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে সুইজারল্যান্ডের সহায়তা কামনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বুধবার জাতিসংঘের সদর দফতরে জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট জোহান ¯েœইডার আম্মানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক এক বৈঠকে এই আহবান জানান। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান, দুই নেতা বৈঠকে পারস্পরিক দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি জানান, দুই নেতার বৈঠকে পারস্পরিক ব্যবসাবাণিজ্যের বিষয় আলোচনায় এসেছে। পরে জাতিসংঘের সদর দফতরে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। প্রেস সচিব জানান, এই বৈঠকে তারা অভিবাসী ও ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকগুলোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মোঃ আবুল কালাম আজাদ এবং পররাষ্ট্র সচিব মোঃ শহিদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
×