খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে জেলার দশটি উপজেলার ৩০টি বেইলি ও আয়রন ব্রিজ। অধিকাংশ বেইলি ব্রিজের প্লেট সরে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। আবার কিছু ব্রিজের মাঝ বরাবরই ভেঙ্গে গেছে। এমন ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ দিয়ে চলাচল করছে জেলার প্রায় সহস্রাধিক যানবাহন। এ অবস্থায় প্রাণহানীসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
সূত্রমতে, হিজলা উপজেলার সদরটেক বেইলি ব্রিজ এবং হিজলার কাউরিয়া ও মেহেন্দিগঞ্জের আন্দারমানিকের সংযোগ স্টিল ব্রিজের মাঝামাঝি ভেঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে হেলে রয়েছে। ফলে ওই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে নাজুক অবস্থায় থাকা খুন্না বন্দরের সেতু দিয়ে অধিক ঝুঁকির মুখে চলাচল করছে সেখানকার কয়েক হাজার মানুষ। মুলাদী উপজেলার প্যাদারহাট বেইলি ব্রিজটি গত ১৭ সেপ্টেম্বর চাল বোঝাই ট্রাকসহ ধসে পড়েছে। রাখুয়া ও সদরের বেইলি ব্রিজ তিনটি খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাখুয়ায় ব্রিজের প্লেট ভেঙ্গে পড়ে গেছে। এছাড়া সদরের বেইলি ব্রিজটি ভেঙ্গে কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছে।
অপরদিকে বাকেরগঞ্জ উপজেলার পেয়ারপুর ব্রিজের গারুড়িয়া ইউনিয়নের অংশে নেমে আসা ঢাল মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ঢালের সংস্কার না হলে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি প্রচ- বৃষ্টিতে ব্রিজের দুই ঢালের ড্রেনে ফাঁটল ধরে ব্রিজের মধ্যে থাকা বালু সরে বড় ধরনের গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী যানবাহনের দুর্ঘটনা এড়াতে গাছের ডাল ভেঙ্গে গর্তের ভিতর স্থাপন করে বিপদচিহ্ন প্রদর্শন করছেন। বাকেরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া বলেন, শুধু পেয়ারপুর নয়, ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের বোয়ালী বাজার ও বাসস্ট্যান্ডের বেইলি ব্রিজগুলো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায়ই ব্রিজের পেট পড়ে যায়।
মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকা বানারীপাড়া উপজেলার রায়েরহাটের ব্রিজের মাঝে বিশাল ফাঁটল দেখা দিয়েছে। গত পাঁচ বছর ধরে ব্রিজটি একই অবস্থায় রয়েছে। ইতোমধ্যে সওজ কর্তৃপক্ষ ওই ব্রিজ দিয়ে ট্রাকসহ ভারি যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। একই উপজেলার ইলুহার ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ব্রিজটির অবস্থা করুণ হয়ে পড়েছে। এদিকে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পার্শ¦বর্তী গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর বাসস্ট্যান্ডের উত্তর পাশের শাহী ৯৯ পার্কে প্রবেশের আয়রন ব্রিজ, নলচিড়া ইউনিয়নের গরঙ্গল আফসের উদ্দিন খলিফার বাড়ির সামনের ব্রিজ ও পশ্চিম বার্থী এলাকার সেতুটি। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করা ও সেতুর আয়রন স্ট্রাকচারের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি দুর্র্বৃত্তরা খুলে নেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া উজিরপুরের সানুহার-সাতলাপুল, বাবুগঞ্জের কেদারপুর, আগরপুর, স্টিলব্রিজ, মাধবপাশা, গুঠিয়ার বেইলি ব্রিজ, আগৈলঝাড়ার ফুলশ্রী বাইপাস সড়কের পূর্বপারের বেইলি ব্রিজ, মেহেন্দীগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলার বেশ কয়েকটি ব্রিজসহ জেলার ১০ উপজেলার প্রায় ৩০টি বেইলি ও আয়রন ব্রিজ অধিক ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ খালেদ শাহেদ জানান, জেলার সকল ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজ অপসারণ করে সেখানে নতুন করে ব্রিজ স্থাপন করার জন্য তাদের পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ঝুঁকি কমাতে মেরামত কাজ করে ব্রিজগুলো সচল রাখা হচ্ছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজে পাঁচ টনের বেশি ওজনের গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: