ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মো. জাভেদ-হাকিম

গহীনের সৌন্দর্য রাইক্ষং

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

গহীনের সৌন্দর্য রাইক্ষং

(পূর্ব প্রকাশিতের পর) পায়ের গতি আরও বেড়ে যায়। দুই রাত আদিবাসীদের ঘরে মুলি বাঁশের মাচায় ঘুমিয়ে প্রায় দু’দিন বন্ধুর পথে হাইকিং, ট্র্যাকিং অবশেষে পেয়ে যাই বছরখানেক যাবত স্বপ্নে বোনা সেই রুদ্ধশ্বাস সৌন্দর্যের রাইক্ষং ঝরনা। অবারিত পানির জলরাশি বিশাল পরিধি নিয়ে সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে অবিরাম গড়িয়ে পড়ে। মজার বিষয় অন্য যে কোন ঝরনার চাইতে রাইক্ষংয়ের বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। পানির বহমান ধারার দৃশ্য এক জায়গা থেকেই দেখা যায়। দু’পাশে সেগূন গর্জন গাছের ছায়া ঘেরা উঁচ,ু পাহাড় তার মাঝে রাইক্ষং। রাইক্ষংয়ের পানি বেশ দূরে গিয়ে রুমা খালে পড়ে। সেই অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখে আমরা আনন্দে লুটোপুটি খাই। বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে আপ্লুত হয়ে হেঁটে যাই ঝরনার শেষ প্রান্ত। দেশের ভিতর এত সুন্দর একটা ঝরনা ভাবতেই অন্যরকম লাগে। নায়াগ্রা জলপ্রপাতের বাংলাদেশী ফ্রেন্ড হিসেবে রাইক্ষংকে সম্বোধন করলে খুব একটা বাড়াবাড়ি হবে বলে মনে হবে না। প্রকৃতির অপার নিদর্শন রাইক্ষং দেখার জন্য এসেছি, দেখে তৃপ্তি পেয়েছি। দীর্ঘ পথ চলায় কোমল প্রকৃতি থেকে শিখতে পেরেছি অনেক কিছু। উদার প্রকৃতির মতো আমার প্রিয় বন্ধুরা পথের সব ধকল ভুলে, প্রাপ্তির ঢেঁকুর তুলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। তাদের খুশীই আগামীতে নতুন কোন সৌন্দর্যের খোঁজে যাবার শক্তি। দে-ছুট ভ্রমণ সংঘের দেশ নিয়ে জাগ্রত চেতনাধারীদের আনন্দই আমার গর্ব। এবারের ট্যুরে ভাল লেগেছে যেখানে সেখানে অপচনশীল বর্জ্য ফেলার বিরোধী সচেতন গাইডের সদা দৃষ্টি সেবার ম্যান অব দ্য ট্যুর নির্বাচিত হয়েছে বেশ কয়েকটি ট্রিপে ও এসডি থাকা নাসিরুদ্দিন আহম্মেদ হিটার কচি। বন্ধুরা আর দেরি কেন? পাঁচ দিনের জন্য সেল ফোন বন্ধ করে চলে যান বিমুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকার মতো রাইক্ষং। সুধী পাঠকবৃন্দ, আগামীতে রাতে ভৌতিক পরিবেশে রাইক্ষং থেকে রোমাঞ্চকর ফেরার গল্প লিখে প্রকাশ করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। কিভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবানের এসি/নন এসি বাস আছে, ভাড়া ৬২০/- হতে ১০০০/- টাকা, বান্দরবান রুমা বাস স্ট্যান্ড হতে রুমা বাজার পর্যন্ত লোকাল বাস সার্ভিসে জনপ্রতি ১০০/- টাকা অথবা জিপে ৩৫০০/- টাকা রিজার্ভ ভাড়া। রুমা আর্মি ক্যাম্পে নাম এন্ট্রি করে দৈনিক ৮০০/- হতে ১২০০/- টাকার চুক্তিতে গাইড নিতে হবে। নির্ভরশীল গাইড সম্পর্কে আর্মি ক্যাম্প অথবা আরণ্যক রিসোর্টের পরিচালক জসিমের নিকট সহযোগিতা নিতে পারেন। থাকা-খাওয়া রুমা বাজার হতে প্রয়োজনীয় বাজার সদাই করে নিতে হবে। যতটা সম্ভব শুকনো খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। মাছ মুরগি চাল এসব আদিবাসী পাড়াতেই পাবেন। রাতে সঙ্গে যাওয়া গাইডের নির্দেশনা অনুযায়ী আদিবাসী পাড়ায় থাকবেন। মাথাপিছু ৮০/- থেকে ১০০/- টাকা নেবে।
×