ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি আরবের ৮৬তম জাতীয় দিবস বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূতের বাণী

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সৌদি আরবের ৮৬তম জাতীয় দিবস বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূতের বাণী

সৌদি আরবের জাতীয় দিবস একটি মহান দিন, যা রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পালন করা হয়। এ বছরও এটা দেশটির একত্রীকরণের চুরাশিতম বছরের স্মরণে পালন করা হচ্ছে। আর এটা ১৩৫১ হিজরী মোতাবেক ১৯৩২ সালের ইতিহাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। যেহেতু রাজকীয় সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা (আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন) বাদশাহ আব্দুল আযীয বিন আব্দুর রহমান আল সাউদ দেশটিকে একীভূত করতে সক্ষম হন এবং আরব উপদ্বীপের জনগণকে রাজনৈতিক ও সামাজিক বন্ধনে একত্রিত করেন। এ কথা স্মরণ করে আজ আমাদের হৃদয় গর্ব ও সম্মানে ভরে যায়। যখন আমরা দেখি কালেমা তাওহীদ খচিত পতাকা সৌদি আরবের আকাশে পতপত করে উড়ছে, আর এটা আমাদের এক নিকট ইতিহাসের গভীরে ডুব দিতে আহ্বান করে, যাতে আমরা ঘটনা বুঝতে পারি যে, এ পতাকার পেছনে কত ঝড়-ঝঞ্ঝা পাড়ি দিতে হয়েছে। আর এ পতাকার উত্তোলনকারীগণ আরব বাজপাখি বাদশাহ্ আব্দুল আযীযের (আল্লাহ তার কবরকে আলোকিত করুন) নেতৃত্বে তারা উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাই আজকে আমরা সৌদি আরবের জাতীয় দিবস উদযাপনের গুরুত্ব অনুধাবন করি। এ দেশ বিচ্ছিন্নতা, উ™£ান্ততা ও ধ্বংসের সবকিছুকে বিদায় দিয়েছে, যাতে এটা সকল অগ্রগতি ও সভ্যতার দরজায় কড়া নাড়ে এবং মহাসম্মানের শীর্ষ চূড়ায় উন্নীত হতে পারে। বাদশাহ্ আব্দুল আযীয (আল্লাহ তার কবরকে আলোকিত করুন) উত্তম বরকতময় জিনিসের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। তার পরে তারই সুযোগ্য সন্তানগণ তা রক্ষা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন। তারা অত্যন্ত গুরুত্ব, ধৈর্য ও দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে এই মহাকর্তব্যকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করেন। সুতরাং কথার পূর্বেই কাজ হয়েছে, বিবৃতির পূর্বেই উৎপাদন সম্পন্ন হয়েছে। কাজেই সৌদি আরব একটি আলোকবর্তিকার মতোই হয়ে গেছে, যা সভ্যতা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অগ্রগতি ও উন্নয়নের নেতৃত্বের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিণত হয়েছে। তাই আমরা যখন আমাদের জাতীয় দিবস উদযাপন করি, তখন সমস্ত মূল্যবোধ, নীতিমালা, ত্যাগ ও অবিরাম প্রচেষ্টাসমূহ উপস্থাপন করিÑ যেগুলো এ মহান অবয়ব গড়তে সহায়ক হয়েছে। এই পবিত্র ভূমির জন্য আমাদের অন্তরে যে ভালবাসা ও মূল্যায়ন রয়েছে, আল্লাহর পরে যাদের অবদানে আমাদের এ বরকতময় ভূমিতে কল্যাণ ও শান্তি বিরাজ করছে তাদের গভীরভাবে স্মরণ করি। এটা এ পবিত্র ভূখ-ের ওপর আল্লাহ তা’আলার এক বিশেষ দয়া যে, তিনি এর মর্যাদা ও বিশেষত্বসমূহের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এর নেতাদের বাছাই করেছেন। এর প্রতিষ্ঠাতার হাতে (আল্লাহ তাকে রহম করুন) এই ভূমি একত্রিত হওয়ার পর এর কল্যাণ ও অগ্রগতির ধারা আর থেমে থাকেনি। তার মৃত্যুর পর তার সন্তানগণের হাতে এবং বর্তমান বাদশাহ্ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আযীযের স্বর্ণযুগ পর্যন্ত অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই সমস্ত বিষয়ে সৌদি আরব যে সভ্যতার ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছে, তা অন্যান্য রাষ্ট্র শত শত বছরেও করতে পারেনি। সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতার যুগ থেকেই এর বৈদেশিক নীতি পবিত্র ইসলামী নীতিমালা ও প্রাচীন আরবীয় বিধি-বিধানের ওপর শক্ত ও মজবুত ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত এবং এর অনন্য বৈদেশিক নীতির কার্যক্রম হচ্ছেÑ আরবীয় ইসলামী ঐক্যে সহায়তা প্রদান ও আরবীয় ইসলামী ব্যাপারাদি হেফাজতকরণে কাজ করা ও অন্য কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা। সৌদি আরব সাহসিকতা, দৃঢ়তা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন স্পষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে সন্ত্রাস দমন করছে, যা দায়িত্বশীল লোকদের দৃঢ়তা ও জাতীয় নেতৃত্বের সাহসী সিদ্ধান্তের কারণে অপূর্ব সফলতা অর্জন করেছে এবং সবাই প্রশংসা করেছে আর এটা বিশ্ববাসীর সামনে একটি উপমা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সৌদি আরব বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের জাতীয় আয়ের শতকরা ০.৭% হারে সাহায্য প্রদান করে। আর এটা জাতিসংঘভুক্ত দাতা দেশসমূহ যা দান করে তার সমপরিমাণ। সৌদি আরব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তার জতীয় আয়ের ৫.৪৫% প্রদান করে। আর এ পরিমাণটা শিল্পোন্নত বড় বড় দেশগুলোর বৈদেশিক সহায়তার চেয়েও বেশি। সৌদি-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিষয়ে যা বলতে হয়, তা হলো এ সম্পর্কটি দৃঢ় ও চমৎকার। সৌদি আরব স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের সকল দল, নেতা ও সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছে। সৌদি আরবের প্রতিটি সেক্টরে বর্তমানে ২৫ লাখের অধিক বাংলাদেশী কাজ করছেন। তারা উন্নয়ন ও দেশ গঠনের অংশীদার। এখনও সৌদি আরব অনেক শ্রমিক আমদানি করছে। ইতোমধ্যেই সৌদি বাদশাহ্ অবৈধ বাংলাদেশী শ্রমিকদের বৈধ করার রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি করেছেন এবং কফিল পরিবর্তনের সুযোগ প্রদান করেছেন। এ বছরই সৌদি-বাংলাদেশ যৌথ কমিটির বৈঠক শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হবে, যা দুই দেশের সকল ক্ষেত্রে সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। সৌদি জনগণ ও এর নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশী জনগণকে সত্যিকারভাবে মূল্যায়ন করেন। আল্লাহর নিকট কামনা করি তিনি যেন বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে সর্বদা নিরাপদে রাখেন এবং আরও বেশি উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি প্রদান করেন।
×