ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এনামুল হক

চোখের পলক পড়ার রহস্য

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

চোখের পলক পড়ার রহস্য

মানুষের চোখ এক অদ্ভুত জিনিস। চোখের পাতা আছে। পাপড়ি আছে। একটু পর পরই আমাদের চোখের পাতা পড়ে। কেন পড়ে এবং তাতে কি হয় কখনও কি আমরা জানার চেষ্টা করেছি? বিজ্ঞানীরা এক নতুন গবেষণায় জানতে পেরেছেন যে চোখের পলক পড়া বা চোখ পিটপিট করার ব্যাপারটা ক্ষণস্থায়ী হলেও আমাদের দর্শনগত ধারণায় ব্যাখ্যা সৃষ্টি করে। চোখের পলক ফেলার জন্য আমরা আমাদের জাগ্রত সময়ের দশ ভাগের এক ভাগ সময় ব্যয় করি অথচ কদাচিৎ তা লক্ষ্য করি। চোখের পলক ফেলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এটা আমাদের চোখকে তৈলাক্ত রাখতে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে এবং মস্তিষ্ককে ছোট আকারের ঘন ঘন মানসিক বিরতি এনে দেয়। চোখের পলক পড়া বা চোখ পিটপিট করার মধ্য দিয়ে আমরা চোখ নাড়াই। এই চোখ নাড়ানোর এক স্বতন্ত্র নতুন উপায় বিজ্ঞানীরা সবেমাত্র আবিষ্কার করেছেন। জার্মানির তুবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী কর্ণিয়ার সঙ্গে যুক্ত ক্ষুদ্র ও সূক্ষ্ম তার ব্যবহার করে এবং সেই সঙ্গে ইনফ্রারেড ভিডিও ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থা করে ১১ ব্যক্তির চোখ নড়াচড়ার মূল্যায়ন করেন। এর ফলাফল ইলাইফ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। মূল্যায়ন করে দেখতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা চোখের এক নতুন ধরনের নড়াচড়া আবিষ্কার করেন যা চোখের পলক পড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যুগপৎ সংঘটিত হয়। বিজ্ঞানীরা চোখের যে নতুন নড়াচড়া আবিষ্কার করেছেন তা ঘূর্ণায়মান বস্তু দেখার সময় চোখ পাক খেয়ে নেয়ার পর চোখকে আবার স্বস্থানে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করে। এটা হলো ক্যামেরার ছোট ছোট ঘূর্ণায়মান বা আবর্তন পরিহার করার মতো ব্যাপার যাতে করে আমাদের দৃশ্যমান ইমেজটি স্থিরতা লাভ করে। আমরা চোখের এভাবে রিসেটিং বা আবার স্বস্থানে ফিরে আসার ব্যাপারটা লক্ষ্য করি না। কারণ আমাদের চোখের পলক ফেলার বা পিটপিট করার সময় ব্যাপারটা আপনা থেকেই ঘটে যায়। গবেষক দলের অন্যতম এবং মূল নিবন্ধকার মোহাম্মদ খাজালি বলেন, “আমরা চোখের এই নতুন ধরনের নড়াচড়া আবিষ্কার করে সত্যিই অবাক হয়েছি। ব্যাপারটা এই নয় যে গবেষণা থেকে আমরা এমনটি আশা করেছিলাম। আমরা বরং আশা করেছিলাম যে চোখের আরেক ধরনের নড়াচড়া দেখতে পাব। সে নড়াচড়া আগে থেকেই সুপরিচিত এবং চোখের পলক ফেলার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যুগপৎ ঘটে থাকে। বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান করে দেখার চেষ্টা করছিলেন যে চোখের পলক ফেলার ঠিক একই সময় রিজিওনাল অপটোকাইনেটিক নিসট্যাগমাস (টিওকেএন) নামে চোখের এক প্রতিবর্তী, অনৈচ্ছিক নড়াচড়া ঘটে কিনা। তত্ত্বটা ছিল এই যে এই রিফ্লেক্সও দর্শন ব্যবস্থায় ক্ষণিকের বিরতি সৃষ্টি করে। চোখের নড়াচড়ার এই পরীক্ষাটি যাদের ওপর চালানো হয়েছিল তারা কতিপয় বিন্দুর একটা ঘূর্ণায়মান প্যাটার্ন দেখার সময় তাদের চোখ কিভাবে নড়ছিল তা লক্ষ্য করা হয়। বিন্দুগুলো অনুসরণের জন্য তাদের চোখগুলো পাক খাওয়ার সময় টিওকেএনের মাধ্যমে ঘন ঘন রিসেট করছিল বা স্বস্থানে ফিরে আসছিল যাতে করে চোখের পেশীর যান্ত্রিক সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া পরিহার করা যায়। অবশ্য এই রিসেটিং ত্রুটিপূর্ণ ছিল এবং বর্তমান পর্যন্ত পেশী আর পাক খেতে পারেনি ততক্ষণ পর্যন্ত ওদের চোখ ধীরে ধীরে পাক খেয়ে চলে। পরীক্ষাধীন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই পাক খাওয়ার তারতম্য ঘটে তিন থেকে আট ডিগ্রীর মধ্যে। পাক খাওয়া সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছলে চোখ আবার স্বঅবস্থানে ফিরে আসে। ফলে সেগুলো আর ঘোরে না বা পাক খায় না। এমনটি ঘটে ঠিক চোখের পলক পড়ার সময়। বিজ্ঞানীরা চোখের এই নব আবিষ্কৃত নড়াচড়াকে ব্লিঙ্ক এ্যাসোসিয়েটেড রিসেটিং মুভমেন্ট বা সংক্ষেপে বিআরএম নাম দিয়েছেন। খাজালি বলেন, রেটিনার আলোক সংবেদনশীল একটি অংশ দিয়েই আমরা সবচেয়ে স্বচ্ছভাবে দেখতে পাই। সেই স্থানটিকে বলা হয় ফোভিয়া। আমাদের আগ্রহের বস্তুগুলোকে সর্বোচ্চ মাত্রার তীক্ষè দৃষ্টিতে দেখার জন্য এই অংশটির সুষম থাকা প্রয়োজন। চোখের নড়াচড়া কত ঘন ঘন হবে এবং কি আকারে হবে সেটা নির্ধারিত হবে চোখ তার নিউটাল অবস্থান থেকে কতদূর সরে গেছে তার দ্বারা। সূত্র : লাইফ সায়েন্স, বিবিসি
×