ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

২০ কারণ চিহ্নিত

ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনায় ২৬৫ জন নিহত, আহত ১১৫৩

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনায় ২৬৫ জন নিহত, আহত ১১৫৩

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদ-উল-আযহায় সারাদেশে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে ২১০টি দুর্ঘটনায় ২৬৫ জন নিহত ও এক হাজার ১৫৩ জন আহত হয়েছে। এরমধ্যে শুধু সড়কেই ১৫৩টি দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২৪৮জন। আহতের সংখ্যা এক হাজার ৫৬জন। এসব দুর্ঘটনার পেছনে ২০টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। সংগঠনের মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল এই প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদ কেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত তিন বছর যাবত বিষয়টি তারা পর্যবেক্ষণ করে আসছেন। বিগত ঈদ-উল- ফিতরে লম্বা ছুটি থাকায় ঈদযাত্রা অনেকটা স্বস্তিদায়ক হলেও এবারের ঈদে মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তির পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে বলে দাবি করে যাত্রী অধিকার প্রতিষ্ঠায় কর্মরত সংগঠনটি। ঈদ যাত্রা শুরুর দিন ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ঈদ শেষে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফেরা ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিগত ১২ দিনে ১৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪৮ জন নিহত ও এক হাজার ৫৬ জন আহত হয়েছে। একই সময়ে ৮টি নৌদুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছে। এ সময় রেলে কাটা পড়ে ৭ জন নিহত, চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ৫০ জন আহত হয়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঈদযাত্রায় ১৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনা, ৮টি নৌ-দুর্ঘটনা, ৭টি রেলে কাটা ও ৩টি রেল দুর্ঘটনায় সংঘটিত হয়। এসকল দুর্ঘটনায় সর্বমোট ২৬৫ জন নিহত ও ১ হাজার ১৫৩ জন আহত হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, উল্লেখিত সময়ে ঈদ যাত্রা শুরুর প্রথম দিন ৭ সেপ্টেম্বর ১৬টি দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ২৪ জন আহত হয়, ২য় দিন ৮ সেপ্টেম্বর ১২টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ৩২ জন আহত হয়, ৩য় দিন ৯ সেপ্টেম্বর ১৪টি দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত ১৮৫ জন আহত হয়, ৪র্থ দিন ১০ সেপ্টেম্বর ১৫টি দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত ৫৪ জন আহত হয়, ৫ম দিন ১১ সেপ্টেম্বর ২০টি দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত ১৭৬ জন আহত হয়, ৬ষ্ঠ দিন ১২ সেপ্টেম্বর ১৩টি দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত ৫৪ জন আহত হয়, ৭ম দিন ১৩ সেপ্টেম্বর ১০টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ২১ জন আহত হয়, ৮ম দিন ১৪ সেপ্টেম্বর ২৭টি দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত ১৬৪ জন আহত হয়, ৯ম দিন ১৫ সেপ্টেম্বর ১৩টি দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত ৮৭ জন আহত হয়, ১০ম দিন ১৬ সেপ্টেম্বর ২৩টি দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত ১৮৩ জন আহত হয়, ১১তম দিন ১৭ সেপ্টেম্বর ২৯টি দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত ১০৪ জন আহত হয়, ১২তম দিন ১৮ সেপ্টেম্বর ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত ৯২ জন আহত হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় সংগঠিত দুর্ঘটনার ৭২টি মুখোমুূখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ১১২ জন নিহত ও ৫৫৭ জন আহত হয়। ২৭টি বাসচাপার ঘটনায় ২৯ জন নিহত ২০ জন আহত হয়। ২০টি পরিবহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ৩৪ জন নিহত, ২৬৪ জন আহত হয়। ৮টি ট্রাকচাপার ঘটনায় ৮ জন নিহত ও ৪ জন আহত হয়। এছাড়াও নানা কারণে সংগঠিত ৮৩টি দুর্ঘটনায় ৮২ জন নিহত ও ২৬৮ জন আহত হয়। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, সড়ক মহাসড়কে রোড ডিভাইডার না থাকা (৪) ট্রাফিক আইন না মানা (৫) চালকের বেপরোয়া মনোভাব (৬) প্রশিক্ষণবিহীন অদক্ষ চালক, রাস্তার ক্রটি, যাত্রী সাধারণের অসচেতনতা, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন, ধীরগতির পশুবাহী ট্রাক, নছিমন-করিমন, ভটভটি, ইজিবাইক, অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত রিক্সা, প্যাডেলচালিত রিক্সার সাথে বাণিজ্যিক টিপধারী দ্রুতগতির বাস ও মাইক্রোবাস, কার একইসাথে চলাচল, যানবাহনের ক্রটি, ফিটনেসবিহীন, নিবন্ধনবিহীন ও অবৈধ যানবাহন মহাসড়কে উঠে আসা, নগরীতে চলাচলরত প্রাইভেট কার, জীপ। এছাড়াও অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে, সিটি সার্ভিসের বাস দূরপাল্লার মহাসড়কে চলাচল, সড়ক ব্যবহারকারীদের সড়ক ব্যবহার আইন কানুন সম্পর্কে অজ্ঞতা, যানজটে আটকে থাকা বাণিজ্যিক টিপধারী পরিবহনগুলোকে অতিরিক্তি মুনাফার আশায় দ্রুত ফেরত আসার জন্য মালিক পক্ষের বারবার তাগাদা, মোবাইলে কথা বলে যানবাহন চালানো, নির্ঘুম ক্লান্ত শরীরে গাড়ি চালানো, মোবাইলে কথা বলে রাস্তা পারাপার, টিনএজদের দ্রুত গতির মোটরসাইকেল, মহাসড়কের পাশে হাটবাজার, ফুটপাথ দখলে থাকায় অথবা ফুটপাথ না থাকায় রাস্তার উপর দিয়ে যাতায়াত এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সুপারিশমালা ॥ মহাসড়কে দ্রুতগতি ও ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনের ব্যবস্থা করা, প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে দুর্ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা, রাস্তার রোড সেফটি অডিট নিয়মিত করা, সড়ক মহাসড়কে রোড ডিভাইডার স্থাপন করা, প্রশিক্ষিত চালক গড়ে তোলা, ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে মানসম্মত পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা, পাঠপুস্তকে সড়ক ব্যবহার আইন অন্তর্ভুক্ত করা, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু আধুনিকায়ন করা, নছিমন-করিমন বন্ধে উদ্যোগ নেয়া, ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধে উদ্যোগ নেয়া, ঈদে বিভিন্ন শিল্পে রেশনিং পদ্ধতিতে ছুটির ব্যবস্থা করা, যানবহানের ফিটনেস পদ্ধতি ডিজিটাল করা, সড়ক দুর্ঘটনার মামলা তদন্তে পুলিশ বাহিনীতে আলাদা ইউনিট গঠন করা, যাত্রী সচেতনতা সৃষ্টি করা, মালিককর্তৃক প্রতিদিন গাড়ি রাস্তায় নামার পূর্বে ফিটনেস পরীক্ষা করা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ও কনজ্যুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা কাজী মাসুদ আহম্মেদ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি রুস্তম আলী খান, এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মোঃ সাইফুন নেওয়াজ, বাংলাদেশ সোসাইটি অব ইমার্জেন্সি মেডিক্যালের সভাপতি ও বারডেম হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রফেসর ডাঃ হুমায়ুন কবির, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, গণি মিয়া বাবুল, আমিনুল রসূল বাবুল, সামসুদ্দীন চৌধুরী, এম মিলাদ উদ্দিন মুন্না প্রমুখ।
×