ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ট্যাম্পাকোতে ফের আগুন, আহত আরও এক জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ট্যাম্পাকোতে ফের আগুন, আহত আরও এক জনের মৃত্যু

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/নুরুল ইসলাম ॥ টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীর ট্যাম্পাকো ফয়েল কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের ঘটনার ১১ দিন পর বুধবার আবারও বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপে আগুন জ¦লে উঠেছে। নিখোঁজদের সন্ধানে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের যৌথ ‘ফায়ার ফাইটিং এ্যান্ড রেস্কিউ অপারেশন’ চলার সময় এ ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নেভাতে সক্ষম হন। এদিকে ফ্যাক্টরি মালিককে গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও হতাহত শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবিতে বুধবার গাজীপুর শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন গাজীপুর জেলা শাখা ও বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম ফেডারেশন। অপরদিকে ডিএনএ টেস্টের জন্য ৯ শ্রমিকের স্বজন তাদের নমুনা দিয়েছেন। সাবেক বিএনপি সাংসদ মকবুল হোসেনের মালিকানাধীন ট্যাম্পাকো ফয়েল কারখানায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এতে ওই কারখানার ভবনের অধিকাংশই ধসে পড়ে বিশাল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টির বেশি ইউনিটের কর্মী টানা চেষ্টা চালিয়ে পরদিন সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ঘটনার বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত কারখানার বিভিন্ন স্থানে ধ্বংসাবশেষ থেকে আগুনের ধোঁয়া বেরোতে দেখা গেছে। কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে এবং ভেঙ্গে পড়া কাঠামোর নিচে চাপা পড়ে এ পর্যন্ত ৩৫ জন মারা গেছে এবং নিখোঁজ রয়েছে ১১। নিখোঁজদের সন্ধানে গত ১২ সেপ্টেম্বর হতে উদ্ধার অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের সদস্যরা। উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করছে ফায়ার সার্ভিস, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ। কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের ঘটনার দ্বাদশ দিন বুধবারেও নিখোঁজদের সন্ধানে যৌথভাবে ‘ফায়ার ফাইটিং এ্যান্ড রেস্কিউ অপারেশন’ চালানো হয়েছে। বুধবার দুপুরে ধসে পড়া ভবনের একাংশে রড কেটে উদ্ধার কাজ চালানোর সময় পাশেই অরক্ষিত অবস্থায় কেমিক্যালসহ পড়েছিল কয়েকটি বিস্ফোরিত ড্রাম। উদ্ধার কর্মীরা রড কাটার সময় আগুনের স্ফুলিঙ্গ ড্রামের কেমিক্যালের সংস্পর্শে এলে আগুন জ¦লে উঠে। এ সময় আতঙ্কিত হয়ে উদ্ধারকর্মীরা ছোটাছুটি শুরু করেন। পরে পানি ছিটিয়ে ওই আগুন নেভানোর চেষ্টা করলে কেমিক্যাল ছড়িয়ে পড়ে। এতে আগুনও কিছু অংশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা দ্রুত ফোম ছিটিয়ে ওই আগুন তাৎক্ষণিকভাবে নিভিয়ে ফেলেন। বুধবার বিকেল পর্যন্ত জীবিত বা মৃত কারও সন্ধান মেলেনি। তবে নিখোঁজদের স্বজনরা এখনও কারখানা এলাকায় সময় কাটাচ্ছেন। এদিকে পরিচয় শনাক্তের অপেক্ষায় বুধবার বিকেল পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যালে ৬ জনের লাশ সংরক্ষণ করা হয়েছে। তাদের পরিচয় শনাক্তের জন্য আইনী প্রক্রিয়া শেষে শীঘ্রই ডিএনএ টেস্ট করা হবে। ডিএনএর জন্য নমুনা জমা ॥ নিহতদের মধ্যে অজ্ঞাত ৬ লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ঢাকার মালিবাগে সিআইডি ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবে নিখোঁজ ১১ জনের স্বজনদের মধ্যে ৯ জনের স্বজন বুধবার তাদের লালা ও রক্ত দিয়েছেন। বাকি দুজনের স্বজনরা আগামী রবিবার তাদের নমুনা দেবেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। আরও একজনের মৃত্যু ॥ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার ধানম-ির জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। তার নাম হোসেন আহমেদ রাসেল (২৬)। তিনি সিলেটের গোলাপগঞ্জের গাগুয়া গ্রামের হাসান আলীর ছেলে। রাতেই তার বাবার কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ নিয়ে ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৩৫ এবং নিখোঁজ রয়েছে ১১ জন। ট্যাম্পাকো মালিকের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন ॥ ট্যাম্পাকো কারখানার মালিককে গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও হতাহত শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবিতে সোমবার গাজীপুরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ করেছে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন গাজীপুর জেলা শাখা ও বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম ফেডারেশন। এ সময় তারা গাজীপুর ডিসির কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছে। এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি ॥ কারখানার মালিক বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনকে প্রধান আসামি করে টঙ্গী মডেল থানায় এ পর্যন্ত দুটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর কারখানা মালিকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি দায়ের করেন নিহত শ্রমিক জুয়েলের পিতা আব্দুল কাদের। পরে ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে টঙ্গী মডেল থানার এসআই অজয় কুমার বাদী হয়ে কারখানা মালিকসহ ১০ জনকে আসামি করে দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন। দুটি মামলা দায়ের হলেও বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
×