ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছেলের দেয়া আগুনে দগ্ধ হতভাগ্য বাবার মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ছেলের দেয়া আগুনে দগ্ধ হতভাগ্য বাবার মৃত্যু

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর, ২১ সেপ্টেম্বর ॥ নতুন মডেলের দামী মোটরসাইকেল না পেয়ে ক্ষুব্ধ বখাটে ছেলের দেয়া আগুনে দগ্ধ হতভাগ্য পিতা বুধবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মারা যাওয়া এই পিতার নাম এ টি এম রফিকুল হুদা (৪৮)। তার বাড়ি ফরিদপুর শহরের কমলাপুর ডিআইবি বটতলা এলাকায়। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদার ছোট ভাই তিনি। অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রফিকুল হুদার ভাই এ টি এম সিরাজুল হুদা বলেন, বুধবার ভোর চারটার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রফিকুল মারা যান। পুলিশ বলেছে ময়নাতদন্তের পর তার ভাইয়ের লাশ তাদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হবে। তবে ভাইয়ের লাশ ফরিদপুর না ঢাকা কোথায় দাফন করা হবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত পারিবারিক কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। নতুন মডেলের মোটরসাইকেল না পেয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরে নিজের মা-বাবার শরীরে আগুন দেয় সদ্য এসএসসি পাস করা ১৭ বছরের কিশোর ফারদিন হুদা মুগ্ধ। এতে তার বাবা রফিকুল হুদা গুরুতর দগ্ধ হন। মা সিলভিয়া হুদা (৪০) সামান্য দগ্ধ হন। আগুনে কিশোরের শরীরের কিছু অংশ পুড়ে যায়। পারিবারিকভাবে ধনী রফিকুল পেশায় সেনেটারি সামগ্রী ব্যবসায়ী ছিলেন। ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানে তাদের প্রচুর ভূ-সম্পত্তি, ফ্ল্যাট, দোকান ও মার্কেট রয়েছে। ওই কিশোর তাঁর একমাত্র সন্তান। রফিকুলের ভগ্নিপতি আকরাম উদ্দিন আহমদ জানান, চলতি বছর এসএসসি পাস করা ওই কিশোর তার বাবার কাছে নতুন মডেলের একটি মোটরসাইকেল দাবি করে। কিছুদিন আগে তাকে দামী একটি মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিল বাবা রফিকুল হুদা। স্কুল জীবনেই সে অসৎ সঙ্গে পড়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বখাটে এবং নেশাগ্রস্ত ছেলেকে তাই নতুন করে ৫ লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেল কিনে দিতে অস্বীকৃতি জানালে সে বাবার ওপর ক্ষুব্ধ হয়। একপর্যায়ে ঘরের মধ্যে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে রফিকুলের শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়। সিলভিয়ার পায়ের কিছু অংশ পুড়ে যায়। আগুনে ওই কিশোরেরও পায়ের কিছু অংশ পুড়ে যায়। ঘটনার পর এলাকাবাসী তিনজনকেই ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। রফিকুলের অবস্থার অবনতি হওয়ায় শুক্রবার তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সিলভিয়া ও তাঁর ছেলেকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেয়া হয়। পিতার হত্যাকারী ছেলে মুগ্ধ এখন মায়ের সঙ্গে ঢাকার এক আত্মীয় বাড়ি আছে বলে জানা যায়। বিডিনিউজ জানায়, ফরিদপুরে ‘ছেলের দেওয়া আগুনে’ দগ্ধ হয়ে এ টি এম রফিকুল হুদার মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। বুধবার রফিকুল হুদার ভগ্নিপতি আকরাম উদ্দিন বাদী হয়ে এ মামলা করেন বলে জানান ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি মোঃ নাজিম উদ্দিন। মামলায় রফিকুল হুদার কিশোর ছেলেকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। ওসি বলেন, পুলিশ আসামিকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক জনকণ্ঠের ১৫ পাতায় এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
×