ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

টেকসই ভবিষ্যত নির্মাণে নারীর কর্মক্ষেত্র বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

টেকসই ভবিষ্যত নির্মাণে নারীর কর্মক্ষেত্র বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের জন্য টেকসই ভবিষ্যত নির্মাণের লক্ষ্যে সুযোগ সম্প্রসারণ এবং কর্মক্ষেত্রকে প্রসারিত রাখতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘যে সমাজ নারীর অংশগ্রহণ এবং ক্ষমতায়নের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়, সে সমাজে উগ্র চরমপন্থার কোন স্থান নেই... আমাদের নারীর কর্মক্ষেত্রকে প্রসারিত করার মাধ্যমে সকলের জন্য টেকসই ভবিষ্যত বিনির্মাণে কাজ করে যেতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বিশ্বাস যে সমাজ নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্র সৃষ্টি করে সেখানে সহিংস চরমপন্থার কোন জায়গা নেই। আমরা অবশ্যই টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করা অব্যাহত রাখব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দফতরের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে ‘ওমেনস লিডারশিপ এ্যান্ড জেন্ডার পার্সপেক্টিভ অন প্রিভেন্টিং এ্যান্ড কাউন্টারিং ভায়োলেন্স এক্সট্রিমিজম’ বিষয়ক সাইড ইভেন্টে ভাষণকালে এসব কথা বলেন। নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এরনা সোলবার্গের আমন্ত্রণে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। খবর বাসসর। সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থা সভ্য সমাজকে লাঞ্ছিত করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা শান্তি ও নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন এবং মানুষের প্রতি মর্যাদাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ‘আমরা অবশ্যই আমাদের অবস্থান থেকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবো... আমরা সে সমাধানই চাই, নারীরা তাতে অবশ্যই অংশ নেবে। তিনি বলেন, এই সমস্যা সমাধানে আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে... আমরা যে সমাধানের পথেই যাই না কেন, নারীদের সেখানে অংশীদারিত্ব থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় উগ্র চরমপন্থা প্রতিরোধে নারীদের অংশগ্রহণ এবং নারী নেতৃত্বের অন্তর্ভুক্তির নতুন পরিকল্পনার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি সবার জন্য শিক্ষানীতিতে বিশ্বাসী, বিশেষ করে নারীদের জন্য এবং এটাই সমাজ থেকে সন্ত্রাস এবং উগ্র চরমপন্থা হটানোর ক্ষেত্রে গুরুতপূর্ণ হাতিয়ার। তিনি বলেন, আমি আমাদের মায়েদের এক একজনকে তাদের সন্তানদের জন্য রোল মডেল হিসেবে নিজেকে উপস্থাপনের জন্য উৎসাহিত করে থাকি। দেশের প্রাইমারী স্কুলগুলোর শিক্ষকদের শতকরা ৬০ শতাংশ নারী শিক্ষক এবং যারা এই সমাজে বিশেষ করে শিশুতোষ সমাজে মূল্যবোধ এবং সংযমের আলো ছড়াচ্ছে। আমাদের শিশুদের অবশ্যই এসব সন্ত্রাসী কর্মকা- এবং উগ্র চরমপন্থার পথ থেকে দূরে রাখতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। আমাদের দেশের পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নারী সদস্য এবং স্থানীয় সরকারের নারী জন প্রতিনিধিরা বিভিন্ন পরিবার পর্যায়ে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে সমাজ থেকে উগদ্র চরমপন্থার মতো অসামঞ্জস্য দূরীকরণে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। নারীদের অধিকার আদায়ে জাতীয় সংসদের নারী সদস্যদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এটা দেখে খুশি যে, সহিংস চরমপন্থা রোধে জাতিসংঘ মহাসচিব নারীর ভূমিকা ও নেতৃত্ব উপলব্ধি করে নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। উগ্র সন্ত্রাসবাদে নারীদেরও সম্পৃক্ত করার জন্য নতুন এক ধরনের অপচেষ্টা শুরু হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় সন্ত্রাস ও উগ্র চরমপন্থার বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, কি কারণে এসব নারী ভুল পথে প্রলুব্ধ হচ্ছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি গোঁড়ামি প্রবণতা ও সহিংস চরমপন্থারোধে সবার জন্য শিক্ষা বিশেষ করে মেয়েদের জন্য শিক্ষা একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। আমি আমাদের মেয়েদের তাদের সন্তানদের সামনে আদর্শ মডেল ও পরম বন্ধু হিসেবে ভূমিকা পালনে অনুপ্রাণিত করছি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির প্রসঙ্গসহ তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন নারীর উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ ইস্যু থেকে সবসময়ই নারীদের একটু সরিয়ে রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তিনি বলেন, আমাদের কাছে সন্ত্রাসীর একটাই পরিচয়, সে সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসীর কোন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নেই। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ‘গ্লোবাল কমিউনিটি এনগেজমেন্ট এ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ফান্ড’র (জিসিইআরএফ) সঙ্গে মিলে তাঁর সরকারের নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী নারী সদস্যরা সহিংস চরমপন্থা প্রতিরোধে নীতি প্রণয়নে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সহিংস চরমপন্থীদের মধ্যে নারীসদস্য নিযুক্ত করার নতুন প্রবণতা দেখছি। আমরা বোঝাবার চেষ্টা করছি এ ধরনের ভুল পথে যোগ দিতে তারা কেন উদ্বুদ্ধ হলো। তিনি বলেন, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি নারীদের জন্য সমান সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করেছে এবং নারীর ক্ষমতায়ন ধর্মীয় এজেন্ট পেছনে ফেলে দিয়েছে। সন্ত্রাসী আমাদের কাছে একজন সন্ত্রাসী হিসেবেই বিবেচিত এবং তাদের কোন ধর্ম নেই। শেখ হাসিনা বলেন, সংঘাত নিরসনে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার হতে সরকার তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার গ্লোবাল কমিউনিটি এনগেজমেন্ট এ্যান্ড রেজিলেন্স ফান্ডের (জিসিআরআইএফ) সঙ্গে প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সেখানে নারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অংশ নিতে পারবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ডেস্কে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রবাসীকল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমস্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডাঃ দীপু মনি। বাংলাদেশ শরণার্থী ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করবে ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমারের শরণার্থী ইস্যুর সমাধানে উপায় বের করতে দেশটির নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, আমরা এই ইস্যুর সমাধানে উপায় বের করার কাজে মিয়ানমারের নতুন নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছি। আমি ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আউং সান সুচিকে কিছু আভাসও দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার অপরাহ্নে জাতিসংঘের সদর দফতরে ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল চেম্বারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আয়োজিত ‘লিডারশিপ সামিট অন রিফিউজিস’ বিষয়ে বক্তব্য রাখছিলেন। শেখ হাসিনা অন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের শরণার্থী ইস্যুতে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কাউকে পেছনে ফেলে না রাখার আমাদের যে অঙ্গীকার তা বাস্তবায়নে আমাদের অবশ্যই জনগণকে সুশৃঙ্খল, নিরাপত্তা, নিয়মানুবর্তিতা ও দায়িত্বের প্রতি উন্নয়ন সাধনে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, গত তিন দশকে মিয়ানমার থেকে আসা বিপুলসংখ্যক শরণার্থী ও উদ্বাস্তুকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা ওই মানুষদের দায়িত্ব বহন করে চলেছি। আমাদের স্থানীয় জনগণ তাদের (শরণার্থী) আশ্রয় প্রদান ও সহযোগিতার জন্য জায়গার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। যদিও এতে বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের শরণার্থীদের ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও দক্ষতার বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছে। তাদের উন্নত মানের আশ্রয়স্থলের ব্যবস্থা ও আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্যও মনযোগ দেয়া হবে। শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা অন্যান্যের ব্যাপারেও সম্প্রতি একটি জরিপের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা তাদের ‘তথ্য কার্ড’ শীর্ষক পরিচয়পত্র প্রদানের জন্যও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এই পরিচয়পত্র ন্যায়বিচার, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও অন্যান্য সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের জন্য সহায়ক হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ও পররাষ্ট্র সচিব মোঃ শহীদুল হক এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সদর দফতরে কনফারেন্স ভবনে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন প্রদত্ত ভোজসভায় অংশগ্রহণ করেন। এনআরবি নিউজ নিউইয়র্ক থেকে জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ময়মনসিংহ বিভাগের লোকজন। নবগঠিত ময়মনসিংহ বিভাগের অফিস-আদালত, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোয়ার্টার নির্মাণ, উন্নয়নমূলক প্রকল্প, নাগরিক সুবিধা সম্প্রসারণ ইত্যাদি কাজের জন্য ৪ হাজার একর ভূমি বরাদ্দ করা এবং বিভাগীয় এই শহরকে প্রকৃত অর্থেই একটি আধুনিক নগরীতে পরিণত করতে শেখ হাসিনা বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন বলে প্রবাসীরা উৎফুল্ল। আর এ নির্দেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত করতে নিরন্তরভাবে কর্মরত প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদকে বিশেষভাবে সম্মানিত করা হয় ২০ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) রাতে নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে ‘পালকি পার্টি সেন্টার’-এ ময়মনসিংহ বিভাগের উন্নয়ন-আলোচনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সমাবেশে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে মুখ্যসচিবকে ক্রেস্ট প্রদান করেন মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক লাবলু আনসার এবং কৃষিবিদ আশরাফুজ্জামান। অনুষ্ঠানে নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর এবং ময়মনসিংহ জেলার প্রবাসীরা অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বাকসুর সাবেক ভিপি বদিউজ্জামান বাদশা, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক রেজাউল করিম রেজনু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাবান মাহমুদ, সাংবাদিক লাবলু আনসার, আয়োজনের প্রধান সমন্বয়কারী আবুল কাশেম এবং আহ্বায়ক মোর্শেদা জামান বক্তব্য রাখেন।
×