ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেষ খবর পাওয়া অবধি ১৩ মৃতদেহ উদ্ধার

সন্ধ্যা নদীতে লঞ্চডুবি, তীব্র স্রোতে উদ্ধার কাজে বাধা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সন্ধ্যা নদীতে লঞ্চডুবি, তীব্র স্রোতে উদ্ধার কাজে বাধা

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ জেলার বানারীপাড়া উপজেলার সন্ধ্যা নদীর সৈয়দকাঠী ইউনিয়নের মসজিদবাড়ির দাসের হাট এলাকায় বুধবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে ভাঙনের কবলে পড়ে এমএল ঐশি-২ নামের যাত্রীবাহী একতলা লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সর্বশেষ (সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা) পর্যন্ত ভাই-বোনসহ ১৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও নিখোঁজ প্রায় ত্রিশ যাত্রী। থানা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল ও নৌ-পুলিশ স্থানীয়দের সহায়তায় চেষ্টা চালিয়ে ডুবে যাওয়া লঞ্চটিকে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শনাক্ত করেছে। সূত্র জানায়, নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে উদ্ধার অভিযান অনেকটা বিলম্ব হচ্ছে। আগে নিখোঁজদের উদ্ধারের জন্য অভিযান চলছে। ডুবে যাওয়া লঞ্চ উদ্ধারের জন্য বরিশাল থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভীক ঘটনাস্থলে রওনা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর থেকেই নদীর দু’তীরে কয়েক হাজার মানুষ ভিড় করেছে। নদীর তীরে নিখোঁজ ও উদ্ধার হওয়া লাশের স্বজনদের আহাজারিতে ওই এলাকার আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি, প্যানেল স্পীকার এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস এমপি, জেলা প্রশাসক ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বরিশালের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার জানান, লঞ্চডুবির ঘটনায় বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত উজিরপুরের মশাং গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে রাহাত (১০) ও মেয়ে শান্তা আক্তার (৮), হারতা গ্রামের সুকদেব মল্লিক (৩০), রাবেয়া বেগম (৫০), মোজাম্মেল মোল্লা (৬০), রুপা বেগম (২৫), সাগর মীর (২৪), জিরাকাঠী গ্রামের মিলন ঘরামী (৩৫), অজ্ঞাতনামা আরও দু’জনসহ ১০ এবং দুপুর একটার দিকে রহিমা বেগম (৬৫), অজ্ঞাত (৮) এক শিশু, বরিশাল শহরের কোহিনুর বেগম (৪৫)সহ মোট ১৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ডুবে যাওয়া লঞ্চ ও নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধারের জন্য ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল ও নৌ-পুলিশ দুপুর দুটো থেকে কাজ শুরু করে এখনও অব্যাহত রেখেছে। ডুবন্ত লঞ্চ থেকে সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হয়েছেন ১৫ যাত্রী। এর মধ্যে সিদ্দিকুর রহমান ও তার স্ত্রী রোকসানা বেগম বলেন, বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে সন্ধ্যা নদীর বানারীপাড়া লঞ্চঘাট থেকে ৭০ যাত্রী নিয়ে এমএল ঐশি-২ নামের একতলা লঞ্চটি উজিরপুরের হাবিবপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। পথিমধ্যে বেলা বারোটার দিকে সন্ধ্যা নদীর সৈয়দকাঠী ইউনিয়নের মজিদবাড়ি এলাকার দাসেরহাট উত্তর পাড়ে যাত্রী ওঠানোর সময় নদীর পাড় ভেঙ্গে বিশাল একটি অংশ লঞ্চের ওপর পড়ে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়। এ সময় যাত্রীরা তাড়াহুড়ো করে এক পাশে এলে লঞ্চটি কাত হয়ে মুহূর্তের মধ্যে ডুবে যায়। পরবর্তীতে ১৫ যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হয়েছেন। তীব্র স্রোত থাকায় অন্যান্য যাত্রী ডুবে যাওয়া লঞ্চের সঙ্গে নিখোঁজ হয়। দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চটির যাত্রী আলেয়া বেগম বিলাপ করে বলেন, আমি সাঁতরে পাড়ে উঠলেও আমার স্বামী জয়নাল হাওলাদারসহ কমপক্ষে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার সময় বৃষ্টি হওয়ায় লঞ্চের সকল জানালা বন্ধ ছিল। ফলে বেশিরভাগ যাত্রী লঞ্চের মধ্যেই আটকা পড়ে। বানারীপাড়া থানার ওসি জিয়াউল আহসান এ রিপার্ট লেখা পর্যন্ত সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বলেন, এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ২১ জনের নামের তালিকা তৈরি হয়েছে। বানারীপাড়ার ইউএনও শহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল উদ্ধার কাজ শুরু করে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ডুবন্ত লঞ্চটি শনাক্ত করে লাশ উদ্ধারের চেষ্টা করছে। তবে নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে উদ্ধার কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। নৌ-পুলিশের বরিশাল জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোতালেব হোসেন জানান, নিখোঁজদের মধ্যে ২১ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে, এরা হলেনÑ সুজা মোল্লা, মনোয়ারা বেগম, হামিদা বেগম, খুকু মিস্ত্রি, রাবেয়া বেগম, সাখাওয়াত হোসেন, জান্নাত, সাগর, আব্দুল মজিদ, ফিরোজা বেগম, দিদার উদ্দিন, রিয়াদ হোসেন, রেহানা বেগম, রাফি, মারিয়া আক্তার, হিরা, রামুক, কল্পনা, সুখদেব মল্লিক, জয়নাল আবেদীন ও রুহুল আমিন। জেলা পুলিশ সুপার এসএম আকতারুজ্জামান জানান, উদ্ধার করা মরদেহগুলো মসজিদবাড়ি দারুস সুন্নত আলীম মাদ্রাসা টেকনিক্যাল এ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ মাঠে রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান জানান, ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ও নৌ-পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়রা উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করেছে। নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে উদ্ধার কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধারের জন্য বরিশাল থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভীক ঘটনাস্থলে রওনা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ঢাকাগামী লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা ডুবে নিখোঁজ-২ ॥ সন্ধ্যা নদীতে ঢাকাগামী এমভি মর্নিং সান লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা ডুবে দুই যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে। বুধবার বিকেলের এ ঘটনায় ৫ যাত্রী আহত হয়েছে। জানা গেছে, আহতদের মধ্যে বাবলা (৪৫) ও শাখাওয়াতকে (২০) হাসপাতালে ভর্তি ও অপর ৩ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। লঞ্চটি মীরেরহাট এলাকায় র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা আটক করার পর যাত্রীদের ভোগান্তি থেকে রক্ষার জন্য ছেড়ে দিয়েছে। লঞ্চ ঘাটের টিকেট মাস্টার মজিবুর রহমান জানান, বানারীপাড়া লঞ্চ ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয় এমভি মর্নিং সান লঞ্চটি। ঘাট ত্যাগ করার সময় নৌকায় করে আসা যাত্রীরা লঞ্চে উঠতে যায়। তখন লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা ডুবে যায়। স্থানীয়রা তাৎক্ষণিক ৫ যাত্রীকে উদ্ধার করেছে। উদ্ধার হওয়া যাত্রীরা জানিয়েছে, বেল্লাল নামে আরও এক যাত্রীসহ দুজন নিখোঁজ রয়েছে।
×