ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কারখানায় অগ্নি নিরাপত্তায় আরও বেশি সচেতন হতে হবে

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কারখানায় অগ্নি নিরাপত্তায় আরও বেশি সচেতন হতে হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশে বড় বড় কয়েকটি অগ্নিকা-ের পর সাম্প্রতিক সময়ে সচেতন হয়ে উঠছেন অনেকেই। বহির্বিশ্ব ও বায়ারদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোয় অগ্নি নিরাপত্তার ব্যবস্থা অনেকটাই সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। তবে অনিরাপদ ও অরিক্ষিত রয়েছে সরকারী-বেসরকারী বহু প্রতিষ্ঠান। অগ্নি প্রতিরোধে এসব ভবনকে নিরাপদ করে তুলতে হবে, অগ্নি নিরাপত্তায় সমাজের প্রতিটি মানুষকে আরও বেশি সচেতন হবে। কথাগুলো এমনভাবেই বলছিলেন দেশে প্রথমবারের অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে ‘প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট’ কোর্স করা মোহাম্মদ আবদুর রশিদ। অনলাইনে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটির কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং আর্কিটেকচার টেকনোলজি থেকে এ বিষয়ে লেখাপড়া করে তিনি অর্জন করে নিয়েছেন সদন। কাজ করছেন গুরুত্বপূর্ণ একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে। তার মতে, অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে দেশে চালু করা উচিত প্রাতিষ্ঠানিক কোর্স। আর এ ক্ষেত্রে কাজের সুযোগও রয়েছে যথেষ্ট। তারুণ্যে তাড়নায় উজ্জীবিত হয়ে আবদুর রশিদ যন্ত্রকৌশলে লেখাপড়া শেষ করলেও- আগ্রহী হয়ে উঠেন অগ্নি নিরাপত্তা (ফায়ার সেইফটি) বিষয়ে। মারাত্মক অগ্নিকা-ে দেশের যে ক্ষতি হচ্ছে- তা ভাবিয়ে তুলে তাকে। বিষয়টি নিয়ে কোন কোর্স করার লক্ষ্যে শুরু করেন খোঁজখবর। কিন্তু দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ বিষয়ে পড়ালেখার কোন সুযোগ নেই। কোন বিশ্ববিদ্যালয়েই চালু হয়নি কোর্স। তবে থেকে যাওয়ার পাত্র নন রশিদ। তিনি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে শুরু করেন ঘাঁটাঘাঁটি। অবশেষে খোঁজ পেয়ে অনলাইনে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটির কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং আর্কিটেকচার টেকনোলজি থেকে অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে ‘প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট’ কোর্স করেন। দেশে বসেই তিনি অনলাইনে পরীক্ষা দিয়েছেন। কোর্স শেষে একটি নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে তবেই পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সনদ। তার সঙ্গে দেশের অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে জনকণ্ঠের কথা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে আবদুর রশিদ বলেন, তৈরি পোশাক খাতের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এখন অগ্নি নিরাপত্তার (ফায়ার সেফটি) আওতায় চলে এসেছে। তবে পোশাক খাতের বাইরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানেও নিশ্চিত করা হয়নি এ সুবিধা। ফলে এসব ভবনের অভ্যন্তরে অবস্থানকারী কেউ জানতে পারবে না আকস্মিক অগ্নিকা-ের তথ্য। তাই প্রতিটি ভবন সুরক্ষিত করতে অগ্নি নিরাপত্তার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা উচিত। তিনি বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়ে পড়ার কোন সুযোগ নেই। ফলে অগ্নি নিয়ে কাজ করছে এমন কর্মকর্তারাও অদক্ষ। ভবনের ডিজাইন বা ট্রেনিং না থাকায় বেগ পোহাতে হয় অগ্নি নিবারণে। ভবনের নিরপত্তা নিশ্চিত করতে প্রোটেকশন সিস্টেম ও ফায়ার এলার্ম সিস্টেম চালু রাখা উচিত। এক্ষেত্রে অবশ্যই দক্ষ কর্মী দিয়ে ডিজাইন করাতে হবে। ঠিক কি কারণে অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে পড়ার আগ্রহ তৈরি হয়Ñ এমন প্রশ্নের উত্তরে এই তরুণ বলেন, শিপ ইয়ার্ডে কাজ করার সময় সেখানে অগ্নি নিবারণ নিয়ে কাজ হতো, তখন ভাবতাম যেহেতু দেশের অধিকাংশ ভবনগুলোই অগ্নি নিরাপত্তার দিক দিয়ে সুরক্ষিত নয়, তাই এ বিষয়ে কাজ করা উচিত। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দেশের জন্য কিছু করা দরকার, সাধারণ মানুষকে সচেতন করা দরকারÑ এমন ভাবনা থেকেই অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। আবদুর রশিদ বর্তমানে কাজ করছেন এ্যাকর্ড অন ফায়ার এ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে। স্থাপনার অগ্নি নিরাপত্তাসহ কাঠামোগত নানা বিষয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করা এই প্রতিষ্ঠানের কাজ। রশিদ বলেন, প্রতিষ্ঠানটির জিএম মোঃ কামরুজ্জামান অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করতে আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করেন। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) থেকে রশিদ যন্ত্রপ্রকৌশলে স্নাতক করেন। এরপর থেকেই তার মাঝে আকস্মিক অগ্নিকা-ের মতো দুর্ঘটনা থেকে দেশকে সরক্ষিত রাখার চিন্তা শুরু হয়। রশিদের ভাষায়, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। তবে আমাদের দেশে বেশির ভাগ সময় অনেক টাকা ব্যয় করে বিদেশী প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের দিয়ে ভবনের অগ্নি নিরাপত্তার দিকটি নিশ্চিত করা হয়। ভাবলাম কাজের যেহেতু একটা বড় ক্ষেত্র আছে, এটা নিয়েই পড়ব। আর মানুষকে সচেতন করে তুলব।
×