ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দিনেশ মাহাতো

বেলাশেষের সৌমিত্র

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বেলাশেষের সৌমিত্র

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রায় ছয় দশক ধরে অভিনয় করছেন চলচ্চিত্র ও মঞ্চে। পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন ,লিখেছেন। খ্যাতিমান আবৃতিকারও । কিন্তু আমাদের কাছে তিনি বেশি পরিচিত খ্যাতিমান একজন অভিনেতা হিসেবে। ১৯৫৯ সালে তিনি প্রথম সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় অপুর সংসার ছবিতে অভিনয় করেন। তিনি সত্যজিতের ৩৪ টি সিনেমার ভিতর ১৪টিতে অভিনয় করেন। সর্বশেষ নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত বেলাশেষে ছবিটিতে তার অভিনয় মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। সিনেমাটিতে নেই কোন বর্তমান বড় সুপারস্টার নায়ক নায়িকা। নেই নাচ গান, আইটেম সংও। তবুও সিনেমাটি হলে চলেছে টানা ১৮ সপ্তাহ। কলকাতায় গত বছরের সবচেয়ে হিট সিনেমা ছিল এটিই। মুক্তির এতদিন পরেও ইউটিউবের কল্যাণে সারা পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষী দর্শক উপভোগ করে চলেছে ছবিটি। তাইতো আজও সব শ্রেণীর মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় ছবিটির কথা। ছবিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। মানুষের সমগ্র জীবনকে আমরা তথা সমাজ ব্যবস্থা কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করি। শৈশব, কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্য, বা পৌঢ়। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে মানুষের প্রয়োজন হয় কারো সাহায্যের। পরগাছার মতো কাউকে অবলম্বন করে সে পার করে জীবনের এই সব পর্যায়। মানুষের প্রতিটি পর্যায়ে তার বেড়ে ওঠার জন্য অবলম্বন হয়ে থাকে পরিবার। হাসি- কান্না , সুখ- দু:খ, হর্ষ- বিষাদ, উত্থ্যান- পতন, সবসময় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ছায়ার মতো থাকে পরিবার। পরিবার ছাড়া মানুষ, অথবা মানুষ ছাড়া পরিবার চিন্তা করা অসম্ভব । এই কথাগুলোই খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ‘বেলাশেষে’ ছবিটিতে। ৪৯ বছর সংসার করে ঘরের কর্তা হঠাৎ ডির্ভোস এর সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে বাড়ির কর্ত্রী ভাবেন পুজোয় সব ছেলেমেয়েকে এক করার জন্য কর্তা এই ফন্দি এঁটেছেন। কিন্তু তার ধারনা ভুল। কর্তা সত্যি সত্যি ডিভোর্স চেয়ে বসেন। এর ফলে পারিবারিক ও সামাজিক কি প্রতিক্রিয়া হয় এটা নিয়েই গল্প। তবে ভিতরের গল্প ছিল আরও আবেগী এবং হৃদয়ছোঁয়া। এককথায় ছবিটি হয়ে উঠেছে সৌমিত্রময়। তাঁর অভিনীত কিছু ছবি দেখে ধারণা করা হয় যে তাকে মাথায় রেখেই গল্প বা চিত্রনাট্যগুলো যেন লেখা হয়। সৌমিত্র সট্টোপাধ্যায়ের অভিনীত চরিত্রগুলোর মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় হল ফেলুদা । তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় সোনার কেল্লা এবং জয় বাবা ফেলুনাথ ছবিতে ফেলুদার ভুমিকায় অভিনয় করেন। প্রথমে ফেলুদা চরিত্রে তার চেয়েও ভাল কাউকে নেয়ার ইচ্ছে থাকলেও তার অভিনীত ফেলুদার প্রথম ছবি সোনার কেল্লা বের হবার পর তিনি (সত্যজিৎ রায়) স্বীকার করেন যে, তার চেয়ে ভাল আর কেউ ছবিটি করতে পারত না। বেলাশেষে’র বেলাতেও এমন কথাই বলছেন অনেকে। যার ফলে বেলাশেষে বা গোধূলী বেলাতেও সৌমিত্র যেন চৈত্রের দুপুরের মতোই তীব্র প্রখর !
×