ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তারকার ঈদ আনন্দ

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

তারকার ঈদ আনন্দ

পরীমণি বিএফডিসিতে ‘এক্সট্রা’ শিল্পীদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করলেন এ সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা পরীমণি। ‘এক্সট্রা’ শিল্পীদের জন্য পরীর কোরবানি। কোরবানি নিয়ে ব্যস্ততা চলছিল ঢালিউডের তারকাদের। অনেকে দেশের বাড়িতে গেছেন, পশু কোরবানি করে পরিচিত আত্মীয়দের নিয়ে আনন্দ করছেন। ব্যতিক্রম নায়িকা পরীমণি। নিজে গরুর হাটে গিয়ে কোরবানির পশু কিনলেন। আর ঈদের দিন সকাল ১০টায় গরু নিয়ে বিএফডিসিতে চলে এলেন। সেখানে যাঁরা ‘এক্সট্রা’ নামে পরিচিত, সেই সহকারী শিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে কোরবানি তদারকি করেছেন, বিলিয়েছেন মাংস। পরীমণির এমন ঈদ উদযাপনে খুশি বিএফডিসির অবহেলিত সহকারী শিল্পীরা, যাঁরা চিরকাল ‘অতিরিক্ত’ নামেই পরিচিত। পরীমণি বলেন, ‘আমি প্রতিবছরই কোরবানির ঈদ নানুবাড়িতে করি। সেখানে যাঁরা আমাকে বুকেপিঠে করে মানুষ করেছেন, তাঁরা আমার জন্য অপেক্ষা করেন। এখন যেহেতু চলচ্চিত্রের অবস্থা ভাল নয়, তাই অনেক শিল্পী-কলাকুশলীর কোরবানি দেয়ার মতো অবস্থা নেই। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এবারের কোরবানির ঈদটা আমি বিএফডিসিতে করব। যাঁরা কোরবানি দিতে পারেননি, তাঁদের জন্যই এই কোরবানি দেয়া। পরী আরও বলেন, আমি কখনও কোরবানি দেখতে পারতাম না। ভয় করত। এ দিনই জীবনের প্রথম কোরবানি দেখলাম। ভয় করেনি, মনে এক ধরনের আনন্দ কাজ করছে। তাদের সঙ্গে ঈদের আনন্দও ভাগ করতে পেরে এবারের ঈদকে সার্থক হলো মনে হচ্ছে। সাইমন সাদিক আমি সবসময় গ্রামেই ঈদ করি। গ্রামে এলে অনেক পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়। এবারও গ্রামের বাড়িতেই ঈদ করেছি। আড্ডা, খাওয়া আর ঘুমের মধ্যে ঈদের ছুটি কখন যে শেষ হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। মেহজাবিন চৌধুরী আমার কাছে ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আযহা দুটোই সমান আনন্দের। তবে ঈদ-উল-আযহাতে সবার ব্যস্ততা একটু বেশি থাকে। আমিও শৈশবে ঈদ-উল-আযহাতে দারুণ মজা করতাম। কারণ কোরবানি দেয়ার জন্য কিনে আনা গরু-ছাগল নিয়ে আমি আনন্দে মেতে উঠতাম। ছোটবেলায় আমি সবার কাছ থেকে একটু বেশি আদর-স্নেহ পেতাম। এ কারণে একটু বেশিই দুষ্টুমি করতাম। ঈদ এলে এই দুষ্টুমির মাত্রাটা কয়েকগুণ বেড়ে যেত। একবার গরুর হাট দেখার খুব ইচ্ছা হল। চাচাতো ভাইদের কাছে আমি গরুর হাটে যাওয়ার আবদার করলাম। কিন্তু তারা তো কিছুতেই নেবে না। তাই তারা বের হওয়ার সময় আমিও পালিয়ে পালিয়ে গরুর হাটে গিয়েছিলাম। কিন্তু হাটে গিয়ে পড়লাম বিপদে। ভিড়ের মধ্যে তাদের হারিয়ে ফেললাম। এরপর বাধ্য হয়ে আমি একা একা বাসায় ফিরেছি। প্রথমে একটু ভয় লাগলেও পরে অনেক আনন্দ পেয়েছি। ফেরদৌস আমার জন্ম ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে। ছোটবেলা থেকে সেখানেই বড় হয়েছি। ঈদও সব সময় ঢাকাতেই করি। এবারও ঢাকায় ঈদ করলাম। বাবার সঙ্গে ছোটবেলায় গরুর হাটে যেতাম। একবার কোরবানি দেয়ার জন্য একটি গরু কিনে নিয়ে আসছি। গরুটির রং কালো ছিল। কোরবানির বেশ কয়েকদিন আগেই গরুটি কিনে নিয়ে আসায় আমাদের বাড়িতে কয়েকদিন গরুটি ছিল। সারাক্ষণ আমি সেই গরুর সঙ্গে থাকতাম। গরু নিয়েই যেন আমার সময় কেটে যেত। এক সময় গরুটির প্রতি ভালবাসা জন্মায়। আমার এক সময় ধারণা হয়ে যায়, গরুটা আমরা পালব। কোরবানির দিন বাবা গরু“গোসল করিয়ে জবাই করতে নিয়ে গেলেন। তখন আমি মানতেই পারছিলাম না যে, গরু জবাই করা হবে। তখন বাবা আমাকে বুঝালেন, প্রিয় পশুকেই কোরবানি দিতে হয়। এ গরুটি যেহেতু আমাদের প্রিয়, তাই এটা দিয়েই কোরবানি দিতে হবে। এরপরও অনেক খারাপ লেগেছে। বিষয়টি মনে পড়লে এখন খুব হাসি পায়। এখন ব্যস্ততার কারণে গরুর হাটে যাওয়া হয় না। দূর থেকে দেখতেই ভাললাগে। কোরবানির আগে গরু“কিনে নিয়ে এলে দূর থেকেই দেখি, গরুটি কেমন। কী খাচ্ছে? খুব মিস করি ছোটবেলার কোরবানির ঈদের দিনগুলো। সুজানা জাফর প্রতিবন্ধীদের নামে গরু কোরবানি দিয়েছেন জনপ্রিয় মডেল-অভিনেত্রী সুজানা জাফর। মডেলিংয়ের পাশাপাশি ছোটপর্দায় নিয়মিত অভিনয় করছেন। ঈদ উদযাপন করেছেন কোথায়? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ঢাকায় পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেছি। প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিবন্ধী শিশুদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছি। তাদের সঙ্গে সারাদিন অনেক মজা করেছি। শুধু বিশেষ দিন নয়, সময় পেলেই তাদের কাছে ছুটে যাই। কারণ বাবার মতো আমারও প্রতিবন্ধী মানুষের সঙ্গে সময় কাটাতে খুব ভাল লাগে। ঈদের কোরবানি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবারের ঈদে পরিবারের জন্য আমার মা একটি গরু কিনেছেন। আর আমি আমার উপার্জনের টাকা দিয়ে ‘পেশায়ারা হোম’ প্রতিষ্ঠানের প্রতিবন্ধীদের নামে একটি গরু কোরবানি দিয়েছি। এছাড়া সবার জন্য একটি ছাগলও কোরবানি দেয়া হয়েছে। কারণ অনেকের আবার গরুর মাংস খাওয়া হয় না। ঈদের দিন রান্না করেছি আমি। ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই শাহী টুকরা, পায়েস রান্না করি। ঈদের দিন দুপুরের খাবার প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের সঙ্গেই খেয়েছি। কারণ তারা আমার জন্য অপেক্ষা করে। প্রতিবন্ধী শিশুদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করতে পেরে এবারের ঈদকে সার্থক হলো মনে হচ্ছে। মিলন একযুগ পর নিজ গ্রামে গিয়ে ঈদ করলেন বতর্মান সময়ের জনপ্রিয় গায়ক তরুণ-তরুণীদের স্পন্দন মিলন। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষ ১২ বছর পর আমাকে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা। তাদের ভালবাসা দেখে আমি মুগ্ধ। তাদের কাছ থেকে আমি এত ভালবাসা পেয়েছি যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। সবার সঙ্গে সুন্দর একটি সময় কাটালাম। যা কোনদিন ভুলতে পারব না। স্মৃতি হয়ে থাকবে। ববি ঈদটা সাধারণত ঢাকাতেই করা হয়। এবারও তাই করেছি। দুই বছর ধরে আমি নিজের টাকায় কোরবানি দিচ্ছি। বাবার সঙ্গেও কিছুটা শেয়ার করি। এটা আসলে নিজের তৃপ্তি থেকে করি। কিন্তু ঈদে আমার সব চেয়ে বেশি ভাললাগে প্রতি ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে আমার সব কাপড় বের করে রাখি এবং রাস্তায় নেমে নিজের হাতে কাপড়গুলো বিতরণ করি। যাদের মাঝে কাপড় বিলি করি তাদের হাসিতে আমার মন জুড়িয়ে যায়। মনে হয় জীবনটা বোধ হয় পূর্ণ হলো। ঈদের দিন সারাদিন বাসায় ছিলাম। আশপাশের সবাই বাসায় এসেছে। তাদের আপ্যায়ন করেছি। আবার কিছু গরিব মানুষ আসে মাংস নিতে, তাদের নিজের তাতে মাংস বিতরণ করছি। কোরবানির ঈদে এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দেয়। মৌসুমী হামিদ গ্রামের বাড়িতে ঈদ পালন করেছি। খুলনার গ্রামের বাড়িতে সব কাজিনরা মিলে একটা ‘সেলামি পার্টি’ গঠন করেছি। এটি একটি মৌসুমী পার্টি। বছরে দুই ঈদে পাটির কার্যক্রম চলে। কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ঈদের দিন ভোরে সাত সকালে আমরা পাড়ায় বের হই। আঙ্কেল, আন্টিদের কাছ থেকে সেলামি আদায় করি। কেউ না বলে আমাদের থেকে নিস্তার পায়নি। যেটাই হোক দিতে হবেই। তাই কোরবানির ঈদ অনেক আনন্দে কেটেছে। আড্ডা, খাওয়া আর ঘুরে বেড়ানোর মধ্যে ঈদের ছুটি কখন যে শেষ হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। কনা ‘দাদাবাড়িতে ঈদ করছি। আমাদের দুই ঈদ দুই স্থানে উদযাপন করা হয়। রোজার ঈদ কাটানো হয় ঢাকায়, আর কোরবানির ঈদ গাজীপুরে। আমরা প্রতিবছরই দাদাবাড়িতে কোরবানি দেই। এবারও সেখানে কোরবানি দিয়েছি। ঈদের আগের দিন সেখানে যাই। এবার পরিবারের সঙ্গেই ঈদ উদযাপন করেছি। গরু কোরবানির পর, গ্রামে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করি। ব্যস্ততার কারণে যাদের সঙ্গে অনেকদিন ধরে দেখা হয় না, ঈদের দিন বিকেলে তাদের সঙ্গে দেখা করি। সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া ও ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করি।
×