দুই প্রভাবশালী মার্কিন কংগ্রেস সদস্যকে নিয়ে গঠিত এক দ্বিদলীয় গ্রুপ পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় মদদদাতা বলে ঘোষণা করতে প্রতিনিধি পরিষদে একটি বিল উত্থাপন করেছেন। এটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ভাষণ দেয়ার আগে ইসলামাবাদের জন্য এক অপমানজনক বিপর্যয়। খবর এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার
কংগ্রেস সদস্য টেড পো বলেন, পাকিস্তানকে এর বিশ্বাসঘাতকতার জন্য আমাদের অর্থ সাহায্য দেয়া বন্ধ করা এবং একে সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় মদদদাতা বলে ঘোষণা করার এখনই সময়। তিনি প্রতিনিধি পরিষদের সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক সাব-কমিটির চেয়ারম্যান। পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় মদদদাতা বলে ঘোষণাকরণ এ্যাক্ট জে নামে ঐ বিলটি উত্থাপন করেন রিপাবলিকান পো এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য ড্যানা রোহরাবাকার। এ ডেমোক্র্যাট সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক এ প্রভাবশালী প্রতিনিধি পরিষদ সাব-কমিটিরও সদস্য। তিনি পাকিস্তানের বালুচদের অধিকারের এক দৃঢ় সমর্থক।
পো বলেন, পাকিস্তান যে এক বিশ্বাসের অযোগ্য এমন এক মিত্র কেবল তাই নয়, ইসলামাবাদ বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুদের সহায়তা ও সহযোগিতা দিয়ে এসেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, পাকিস্তান ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দিয়েছিল এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে এসেছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে পাকিস্তান কোন পক্ষে রয়েছে তা নির্ধারণ করতে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। আর সেটি আমেরিকার পক্ষ নয়। পো বলেন, বিলে এ প্রশ্নের আনুষ্ঠানিক জবাব দিতে ওবামা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হবে।
তিনি জানান, বিলটি পাস হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে মদত যুগিয়েছিল কিনা, সেই সম্পর্কে অবশ্যই বিস্তারিত রিপোর্ট দেবেন।
পো বলেন, এরপর ৩০ দিনের মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক ফলোআপ রিপোর্ট পেশ করবেন। এতে পাকিস্তান যে সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় মদতদাতা, হয় তা স্থির করা হবে, নয়ত পাকিস্তান এরূপ মদদদাতা বলে ঘোষিত হওয়ার আইনগত পর্যায়ে কেন পড়ে না তার বিস্তারিত কারণ দেখাতে হবে। বর্তমান কংগ্রেসের মেয়াদ শেষ হতে থাকায় বিলটি বহুলাংশে প্রতীকীই হয়ে থাকবে। কয়েক হাজার বিলের একটি ক্ষুদ্রাংশই কেবল আইনে পরিণত হয়। কিন্তু এটি আইনপ্রণেতাদের মনোভাবের এক শক্তিশালী বহির্প্রকাশ। আমেরিকান ও ভারতীয়দের হত্যা করছে এমন সন্ত্রাসী দলগুলোকে পাকিস্তানের অব্যাহত মদদদান নিয়ে তারা ক্রমশই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন।
কংগ্রেস সদস্য পিট অলসন কাশ্মীরের উরিতে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতদের বিচারে দাঁড় করানোর প্রতিটি চেষ্টার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। কয়েক কংগ্রেস সদস্য ভারতের উরি সামরিক ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাদের মধ্যে সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার, পিট সেসনস ও টম কটন ভারতের প্রতি সহানুভূতি ব্যক্ত করেন। যদিও অনেকে পাকিস্তানের সমালোচনা করেন, কিন্তু কেউই পাকিস্তানের এ ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে গ্রহণ করেননি যে, ‘কাশ্মীর ইস্যু’ থেকে দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ভারতই কোনভাবে নিজের ওপর প্রতারণামূলক হামলা চালিয়েছে। কাশ্মীর ইস্যুকে কেউ মেনে নেয়নি। নিউইয়র্কে এক বোমা হামলাকারী গ্রেফতার হওয়ার পর পাকিস্তান যে সন্ত্রাসের সমর্থক সেই ধারণা আরও দানাবেঁধে ওঠে। সে পাকিস্তানে বাড়তি কিছুদিন অবস্থানের পর উগ্রবাদে দীক্ষিত হয়েছিল বলে এখন মনে করা হয়। অনেক বছরের মধ্যে এই প্রথম পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করার কথা উঠেছে। ১৯৯৩ সালে এরূপ ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে সর্বশেষ আলোচনা করা হয়েছিল। এর আগে পাকিস্তানের পরিকল্পনামতো দাউদ ইব্রাহিমের মাধ্যমে মুম্বাইতে কয়েক দফা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ২৫৯ জনকে হত্যা করা হয়। এ হামলার পর নিউইয়র্ক, লন্ডন ও মাদ্রিদসহ বিশ্বজুড়ে এরূপ অনেক হামলা ঘটে।