ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আর আত্মহত্যা নয়

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আর আত্মহত্যা নয়

আত্মহত্যা মহাপাপ। কিন্তু প্রতিটি আত্মহত্যার পেছনে এক বা একাধিক লোকের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ‘পাপ’ বিদ্যমান থাকে, প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার আপাতদূর ‘ইন্ধন’ থাকে। মানসিক অবস্থার শিকার মানুষের কথা বলছি না। মানসিক সঙ্কটের একটি পর্যায়ে গভীর মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠেন। তার চিকিৎসাও রয়েছে চিকিৎসাবিজ্ঞানে। বহুজনই সেই চরম দুর্দশার ফাঁদ ও খাদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন শেষমেশ। আবার অনেকের পক্ষেই ফেরা কঠিন হয়ে পড়ে। আত্মহননই তাদের পরিণত হয়ে ওঠে। এমনও হয় সমাজে একজন সহনশীল ও সামাজিক মানুষ হিসাবে পরিচিতি হওয়া সত্ত্বেও আকস্মিকভাবে একদিন জানা যায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশে প্রতি লাখে ৭ দশমিক ৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করে। প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন, বছরে ১০ হাজারের অধিক লোক আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। প্রতি ১০০ জনে ১৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও ১৮ জন শিশু আত্মহত্যা করে। ২০১৪ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী আত্মহত্যায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দশম, যা ২০১১ সালে ছিল ৩৮তম। অর্থাৎ আত্মহত্যার প্রবণতায় এগিয়েছে বাংলাদেশ। এমন বাস্তবতায় ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্বজুড়ে পালিত হয়েছে আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। আত্মহত্যা দিবস পালন তখনই অর্থবহ হয় যখন সমাজ থেকে আত্মহত্যার মূর্ত ও বিমূর্ত প্ররোচনাসমূহকে পরাস্ত করা যায়। নিজেকে বহু মানুষ বড় করে দেখে, নিজেকেই ভালবাসতে চায়। আত্মপ্রেম এবং আত্মসুখ অর্জন এমন একটি অনতিক্রম্য দূরত্বে পৌঁছে যায় যে, সেই মানুষের ধারণা হয়- নিজেকে সরিয়ে নিলে বা প্রত্যাহার করে নিলে বোধকরি সকল যন্ত্রণার অবসান ঘটবে। কিন্তু ব্যক্তি মানুষ যদি অন্যের বঞ্চনা ও কষ্টকে যথার্থ মূল্য দেয়; যদি অন্যের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত করে, তাহলে নিজের চাওয়া-পাওয়াগুলো বিশাল হয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় না। তখন আত্মহত্যা দূরে থাক, সে কোন ভাবেই আত্মপীড়নের ধকলও সইতে চাইবে না। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষ আত্মহননের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে যদি কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান, তবে সেই পথ থেকে তার ফিরে আসার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। এ জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আধুনিক টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে হটলাইন চালু হয়েছে। বাংলাদেশে আত্মহত্যার প্রবণতা রোধে এ ধরনের একটি হটলাইনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যাবে না। মানুষ জীবন পায় একবারের জন্য। তাই জীবনকে উপভোগ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলার চেষ্টাই তো তার করা উচিত। এর ব্যতিক্রম হলে সামাজিক জীব হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের দায় রয়েছে। কোন তরুণ সহপাঠীর মনোকষ্টে তার পাশে এসে দাঁড়াবে আরেকজন সহপাঠী, পরিবারের কোন সদস্যের জীবনবিমুখতার দিকগুলোকে হটানোর জন্য সহানুভূতির সঙ্গে তার উত্তরণের উদ্যোগ নেবে আরেকজন সদস্য। মানুষ মানুষের জন্য, তাই মানুষের মহামূল্যবান জীবন রক্ষার জন্য মানুষকেই উপায় খুঁজে বের করে সক্রিয় হতে হবে।
×