ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আব্দুল্লাহ আল মাছুম

পর্দার আড়ালে ঘটক

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পর্দার আড়ালে ঘটক

গ্রামগঞ্জে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ভিন্ন দুটি পরিবারের সুখ-দুঃখকে এক করার লক্ষ্যে রাত-দিন চষে বেড়ানো এলাকার সবার পরিচিত ব্যক্তি ঘটক কখন যে চোখের সামনে থেকে অতীতে মিলিয়ে গেল তা আমাদের সমাজবিজ্ঞানীদের ভাববার অবকাশ না থাকলেও মাঝে মাঝে যে সব প্রবীণ-প্রবীণার জীবন বাঁধাই করতে ঘটকের হাত ছিল সে সব দম্পতির সঙ্গে সন্ধ্যা রাতে গল্প করার ফাঁকে ভুল করে হাস্যকর বা কৃতজ্ঞতা অথবা মিশ্র অনুভূতির স্মৃতিকাতরতায় আবার জীবন্ত হয়ে উঠে ব্যক্তি ঘটক। দুই পরিবারের মেলবন্ধন ঘটাতে ঘটক কত কিছুই না করত। তার কথার ফুলঝুড়ি মাঝে মাঝে ছাড়িয়ে যেত বাস্তবতা। লোভে পড়ে মিথ্যা প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে পাত্র-পাত্রীকে ঠেলে দিত অসম যন্ত্রণায়। আবার অনিচ্ছাকৃত ধোঁকায় পড়ে ভুল তথ্য সংগ্রহ তারপর সে তথ্যের ভিত্তিতে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর অসহায় ঘটকের পালিয়ে বেড়ানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকত না। সাধারণত ঘটক তার মাধ্যমে সংঘটিত প্রত্যেক বিয়ের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রভাবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করত ভাল পাত্র অথবা পাত্রীর সন্ধান দিতে এবং অভিভাবকদের রাজি করানোর দায়িত্বও পড়ত ঘটকের ওপর। কুমারী মেয়েরা বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত ঘটকের সামনে থেকে লুকিয়ে বাঁকা চোখে তাকালেও পরিণত বয়সে তার কন্যা বা পুত্রের জন্য ঘটকের অপেক্ষায় থাকতেন। চলচ্চিত্র বা আধুনিক তরুণ প্রজন্মের কাছে ছাতা হাতে দ্রুত চলা ঘটক শুধুই বিনোদনের বিষয়। ব্যক্তি ঘটক বিনোদনের উপাদান হয়ে বেঁচে আছে আমাদের সমাজে। আর পরিবর্তনের ধারায় ঘটকের প্রাতিষ্ঠানিক রূপান্তর ঘটেছে। তারও উন্নত সংস্করণ হচ্ছে অনলাইনে পাত্র-পাত্রী খোঁজা। ব্যক্তি ঘটক আর আধুনিক ঘটকের মধ্যে পার্থক্য হলো, অতীতে ব্যক্তি ঘটক যখন ধোঁকা দিতে চাইত তখন পায়ে পায়ে ঘুরে ধোঁকায় ফেলত আর বর্তমানে আমরা ঘটকের কাছে গিয়ে ধোঁকা খাই। যাই হোক, সবকালেই বিয়ের ক্ষেত্রে পেশাদার ঘটক না থাকলেও অঘোষিত-অপেশাদার একজন ঘটকের দায়িত্ব পালন করেন নিজের অজান্তেই। পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় ব্যক্তি ঘটক থেকে প্রাতিষ্ঠানিক, প্রাতিষ্ঠান থেকে ডিজিটাল ভার্সন, ডিজিটাল ভার্সন থেকে ক্রমে আরও রূপান্তরিত হলেও অপেশাদার ঘটকরা তাদের অবস্থানে থাকবেই। হয়ত সেকেলে শব্দ ‘ঘটক’ নাম ধারণে আধুনিক রুচির অনীহা থাকবে কিন্তু ঘটক পর্দার আড়ালে নিজের দায়িত্ব পালন করে যাবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×