ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রিন্স হেনরী স্নাল

ঘটকের সেকাল-একাল

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ঘটকের সেকাল-একাল

রঙ্গ ভরা বঙ্গ দেশে ঘটক নিয়ে অনেক মজার ঘটনা প্রচলিত আছে। একদিন এক ঘটক সাহেবের ঘটকালি বুদ্ধিতে খোঁড়া ছেলের বিয়ের পর ছেলের বাবা খুশি হয়ে ঘটক সাহেবকে অর্থ পুরস্কার প্রদানের সময় ঘটক সাহেব একটু রসিকতা করে বললেন, ‘মেয়ে যে কানা ছিল আপনারা কি তা টের পেয়েছিলেন?’ এসব ঘটনা কতটুকু সত্য সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়, কিন্তু এ রকম ঘটনা রঙ্গ ভরা বঙ্গ দেশেই কেবল সম্ভব। অতীতে বিয়ের সম্বন্ধ হতো ঘটকের মাধ্যমে। দুই পরিবারের সামাজিক এবং আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করতে ঘটক সাহেবের উপস্থিতি ও হস্তক্ষেপ ছিল অপরিহার্য। ঘটক ছেলেপক্ষ অথবা মেয়েপক্ষ হতে অন্যপক্ষের খবরাখবর সরবরাহ করতেন; ওই বিয়েতে কোন বাধা বা কোন প্রকার সমস্যা আছে কি না সেগুলো বিচার-বিবেচনা করার জন্য উভয় পরিবারই যথেষ্ট সময় পেত। অর্থাৎ ঘটকের দ্বারা বিয়ের সানাই বাজতে বেশ সময় লাগত, দুম করে কখনই বিয়ে সম্পন্ন হতো না। বাঙালী সমাজে গোটা পরিবারসহ ঘটককে নিয়ে অন্য পরিবারে সম্বন্ধ করতে যাওয়ার মধ্যে আলাদা একটা আমেজ ছিল, উৎসবমুখর পরিবেশ গড়ে উঠত, সবার মধ্যে আত্মীয় আত্মীয় ভাব সৃষ্টি হতো- বিবাহপ্রার্থী ছেলে-মেয়েদের মধ্যেই শুধু সম্পর্ক তৈরি হতো না, দুই পরিবারের সকলের মধ্যেই একটা সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হতো। সময়ের আবর্তে, আকাশ সংস্কৃতির কল্যাণে ও পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুসরণে অতীত ঘটকের রূপ পরিবর্তিত হয়ে এখন হয়েছে ‘ভার্চুয়াল ঘটক’। এখন ‘ঘটক সাহেব’ চরিত্রটি নিছক পুস্তিকাবর্ণিত চরিত্র মাত্র। বর্তমানে ছেলে-মেয়েরা বাবা-মার পছন্দে কাউকে বিয়ে করার চাইতে নিজেদের পছন্দে বিয়ে করাটাকে আধুনিক মনে করে। ভাব যেমন- ‘আমি তুমি রাজি, তো কী করবে কাজী, আর ঘটক তো কোন ছাড়!’ অন্যদিকে বাবা-মাসহ পরিবারের সকল সদস্য ছেলে-মেয়ের পছন্দের কাছে জিম্মি। মুঠোফোন, ফেসবুক, টুইটার, ভাইবার ও সংবাদপত্র ইত্যাদি হলো আধুনিক ঘটক। এই আধুনিক ঘটক সাহেব অতীত ঘটকের মতো খোঁড়া ও কানার মধ্যে মিলন ঘটাতে না পারলেও প্রতারণার জালে যে কাউকে সহজে আটকে ফেলতে এক্কেবারে উস্তাদ! পরিবারকে বলা হয় সমাজের একক ইউনিট। তাই দেশ, জাতি ও সমাজের মঙ্গল করতে হলে আগে বাঁচাতে হবে পরিবারকে। পরিবার বাঁচাতে হলে অতীত ঘটক সাহেবের পুনঃপ্রচলন যদিও সম্ভব নয়, কিন্তু এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের- শুধু ছেলে-মেয়ের পছন্দেই বিবাহ নয়, পরিবারের অন্যদের মতামত জেনে নেয়া, বিবাহের জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুতি নেয়া, একটু সময় নিয়ে পরস্পরকে আরও ভালভাবে জানা, সর্বোপরি সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করা ইত্যাদি- চেতনা জাগ্রত করতে পারলে পরিবার ভাঙন কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে। ভালুকাপাড়া, ময়মনসিংহ থেকে
×