ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুঘটন পটীয়সী;###;জাস্টিন গোমেজ

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ ঘটকের দিন কি গেছে?

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ ঘটকের দিন কি গেছে?

ঘটক হলো ঘটনার সংঘটয়িতাকারী। বর ও কনেপক্ষের মধ্যে যোগাযোগ স্থানপূর্বক সম্পাদনে মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তি। বাঙালী সমাজে যুবক-যুবতীদের অবাধে মেলামেশার সুযোগ ছিল না। তাই তখন ঘটকের মাধ্যমে বিবাহ স্থির হওয়ার রীতি ছিল প্রচলিত এবং এজন্য সমাজে ঘটকের গুরুত্বও ছিল অনেক। অনেকে আবার এ পেশার মাধ্যমে জীবিকাও নির্বাহ করত। বিবাহকার্য সম্পন্ন হওয়ার পর উভয়পক্ষ থেকে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হতো। কথিত আছে, ঘটককে ভালমতো সন্তুষ্ট করতে পারলে ভাল পাত্র বা পাত্রীর সন্ধান পাওয়া যায়। এদের অন্যান্য চাহিদার মধ্যে অন্যতম হলো- ছাতা, পান-সুপারি, লুঙ্গি, শাড়ি এবং টাকা তো আছেই। প্রাচীন যুগের কয়েকজন বিশিষ্ট ঘটক হচ্ছেন এডু মিশ্র, হরি মিশ্র, ধ্রুবানন্দ মিশ্র, দেবীবর ঘটক এবং নুলে পঞ্চানন ছাড়াও আরও অনেকে। সমাজে এদের খুব প্রাধান্য ছিল। পুত্র বা কন্যার বিবাহ দেয়ার সময়ে পরিবারের কর্তা চেষ্টা করতেন উচ্চ বংশ সন্ধান করতে, যার তথ্য পাওয়া যেত ঘটকদের কাছ থেকে। ঘটকরা বিভিন্ন বংশের মর্যাদা ও কুলীনদের পরিচয় সম্বন্ধে অবগত থাকতেন। বাংলাদেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পেশাদার ঘটক ছিল। তবে তাদের মধ্যে ব্রাহ্মণ ঘটকের সংখ্যাই ছিল বেশি। হিন্দু ছাড়াও অন্যান্য ধর্মের মধ্যেও ঘটক ছিল। ঘটকরা পাত্রপাত্রীর বংশ, গোত্র, আত্মজীবনী ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সরবরাহের মাধ্যমে সমাজের একটি গুরুদায়িত্ব পালন করত। পারিবারিক তথ্যাদি সরবরাহের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রেও তাদের অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে আধুনিক শিক্ষা ও আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে বিবাহের ক্ষেত্রে ঘটকের প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। প্রায় নেই বললেই চলে। ঘটক নামক ব্যক্তিকে এখন আর দেখা না গেলেও ঘটকের কাজের মাত্রা, ধরন ও রূপ পাল্টেছে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মানুষ এখন হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে জগৎকে। তাই তাকে এখন ঘটকের শরণাপন্ন হতে হয় না। নিজের যোগ্যতা অনুসারে পাত্র কিংবা পাত্রী খুঁজতে এখন আর বেশি কষ্ট করতে হয় না। এ জন্য ইন্টারনেটে রয়েছে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট। ইন্টারনেটের এ ওয়েবসাইটে পাত্র বা পাত্রীর ছবি ও পূর্ণ পরিচয়সহ বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেয়া থাকে। তাছাড়া সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েও ঘটকালি করা হয়। এ পরিবর্তনের ছোঁয়া প্রায় সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে। তাই যেখানে-সেখানে আর ঘটক কিংবা ‘পাখিভাই’কে দেখা যায় না। তবে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখনও কিছুটা দেখা যায়। বর্তমানে অনেকেই পূর্বপরিচয়সূত্রে পরিণয়াবদ্ধ হচ্ছে। এছাড়াও ফেসবুকে পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা স্থাপনের মাধ্যমে এখন অনেক বিবাহই সম্পন্ন হচ্ছে। সবচাইতে বড় কথা হলো, আমাদের সমাজে এখন যুবক-যুবতীদের মেলামেশার অনেক সুযোগ রয়েছে। তারা পরস্পরকে জেনে-শুনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে। নটর ডেম কলেজ, ঢাকা থেকে
×