ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্যাম্পাকোতে আবারো আগুন

প্রকাশিত: ০১:৫৬, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ট্যাম্পাকোতে আবারো আগুন

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/নুরুল ইসলাম ॥ টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীর ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনার ১১দিন পর বুধবার আবারো বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তুপে আগুন জ্বলে উঠেছে। নিখোঁজদের সন্ধানে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের যৌথ ‘ফায়ার ফাইটিং এন্ড রেস্কিউ অপারেশন’ চলার সময় এঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নেভাতে সক্ষম হন। এদিকে কারখানার মালিককে গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও হতাহত শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে বুধবার গাজীপুর শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন গাজীপুর জেলা শাখা ও বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম ফেডারেশন। টঙ্গীর বিসিক নগরীতে বিএনপির সাবেক সাংসদ মকবুল হোসেনের মালিকানাধীন ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ওই কারখানার বিশাল ভবনের অধিকাংশই ধ্বসে পড়ে বিশাল ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টির বেশী ইউনিটের কর্মীরা টানা চেষ্টা চালিয়ে পরদিন সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ঘটনার বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত কারখানার বিভিন্ন স্থানের ধ্বংসাবশেষ থেকে আগুনের ধোঁয়া বেরোতে দেখা গেছে। কারখানায় ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয়ে এবং ভেঙে পড়া কাঠামোর নিচে চাপা পড়ে এ পর্যন্ত ৩৫ জন মারা গেছে এবং নিখোঁজ রয়েছে ১১ জন। নিখোঁজদের সন্ধানে গত ১২ সেপ্টেম্বর হতে উদ্ধার অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের সদস্যরা। উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করছে ফায়ার সার্ভিস, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যরা। কারখানায় বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনার ১২তম দিন বুধবারেও সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিখোঁজদের সন্ধানে যৌথভাবে ‘ফায়ার ফাইটিং এন্ড রেস্কিউ অপারেশন’ চালিয়েছেন। বুধবার দুপুরে ধ্বসে পড়া ভবনের একাংশে রড কেটে উদ্ধার কাজ করছিলেন উদ্ধার কর্মীরা। পাশেই অরক্ষিত অবস্থায় কেমিক্যালসহ পড়ে ছিল কয়েকটি বিষ্ফোরিত ড্রাম। উদ্ধার কর্মীরা রড কাটার সময় আগুনের স্ফুলিঙ্গ পাশ্ববর্তী কেমিক্যালের সংস্পর্শে এলে আগুন জ্বলে উঠে। এসময় আতংকিত হয়ে উদ্ধারকর্মীরা ছুটোছুটি শুরু করেন। কয়েক উদ্ধার কর্মী তাড়াহুড়ো করে পানি ছিটিয়ে ওই আগুন নেভানোর চেষ্টা করলে কেমিক্যাল ছড়িয়ে পড়ে। এতে আগুনও কিছু অংশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা ফোম ছিটিয়ে ওই আগুন তাৎক্ষণিকভাবে নিভিয়ে ফেলেন। বুধবার দিনভর সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যৌথভাবে ‘ফায়ার ফাইটিং এন্ড রেস্কিউ অপারেশন’ চালালেও ধ্বংসস্তুপে এদিন বিকেল পর্যন্ত জীবিত বা মৃত কারো সন্ধান পাওয়া যায় নি। নিখোঁজদের সন্ধান পাওয়ার আশায় তাদের স্বজনরা অধীর আগ্রহে এখনো কারখানা এলাকায় সময় কাটাচ্ছেন। এদিকে ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয়ে এবং ভেঙে পড়া কাঠামোর নিচে চাপা পড়ে নিহত ৬জনের লাশ পরিচয় সনাক্তের অপেক্ষায় বুধবার বিকেল পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তাদের পরিচয় সনাক্তের জন্য আইনী প্রক্রিয়া শেষে শীঘ্রই ডিএনএ টেষ্ট করা হবে বলে স্থানীয় পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এদিকে, গাজীপুরে মহানগরীর টঙ্গীর ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানার মালিককে গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও হতাহত শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে গাজীপুরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ করেছে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন গাজীপুর জেলা শাখা ও বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম ফেডারেশন। এসময় তারা গাজীপুর জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপিও প্রদান করেছে। বুধবার সকালে এ কর্মসূচির আয়োজন করে। তারা সকালে গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে শহরের রাজবাড়ি সড়কে মানববন্ধন পালন করে। এরপর মিছিল নিয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান এবং জেলা প্রশাসক এসএম আলমের কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। এসময় নেতৃবৃন্দ বলেন, অতীতে ট্যাম্পাকোর মতো দুর্ঘটনা ঘটলেও এর প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা নেয়নি মালিক কর্তৃপক্ষ। মালিকের গাফিলতি এবং অবহেলার কারণে এ ধরণের কোন দুর্ঘটনা আর যেন না ঘটে সে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। সেই সঙ্গে তারা ট্যাম্পাকো মালিক ও দোষী কর্মকর্তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এছাড়াও, কারখানায় বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কারখানার মালিক বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হেসেনকে প্রধান আসামী করে টঙ্গী মডেল থানায় এপর্যন্ত দু’টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর কারখানা মালিকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি দায়ের করেন নিহত শ্রমিক জুয়েলের পিতা আব্দুল কাদের। পরে ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে টঙ্গী মডেল থানার এস আই অজয় কুমার বাদী হয়ে কারখানা মালিকসহ ১০ জনকে আসামী করে দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন। দু’টি মামলা দায়ের হলেও বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
×