ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের অর্থনীতি সামনে বন্ধুর পথ

প্রকাশিত: ০৭:১২, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ভারতের অর্থনীতি সামনে বন্ধুর পথ

২০১৪ সাল থেকে ভারত উদীয়মান বাজার দুনিয়ার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে পরিচিত হয়ে আছে। সেটা প্রধানত এই কারণে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সে দেশে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমিয়ে দিয়ে ব্যবসা করার পথটা সহজতর করে তুলেছেন। মোদি সরকার বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্তরায় কমিয়ে এনেছে এবং কর ব্যবস্থা নাটকীয়ভাবে সহজতর করেছে। ভারতের অর্থনীতি এখন টেক অফ করেছে। এ বছর প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস আছে। তথাপি আগামী দু’তিন বছরের মধ্যে ভারত থেকে সে সব ইতিবাচক সংস্কারের খবর শোনা যাবে তার মধ্যে এটাই সম্ভবত শেষ বড় ধরনের সংবাদ। দুটো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাব আছে সেগুলো ২০১৯ সালে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার আগ পর্যন্ত কোন দিশা খুঁজে পাবে না। প্রথমত, ভারতে আরও অনেক বেশি স্থিতিস্থাপক শ্রম শক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কিছু পরিবর্তন আমার প্রয়োজন আছে। সেটা হলো শ্রম আইনের পরিবর্তন। শ্রমিক স্বার্থ রক্ষার জন্য সে সব আইন প্রণয়ন করা হয়েছে সেগুলোর কারণে কঠিন সময়ে কর্মচারীদের ছাঁটাই করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তার ফলে যখন সময় ভাল চলছে তখন নতুন শ্রমিক নিতে কোম্পানিগুলোকে রাজি করানো আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত, সারাদেশে অতি প্রয়োজনীয় কিছু অবকাঠামো প্রকল্প এখনও অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে। কারণ এর জন্য যে জমি প্রয়োজন তা সংগ্রহ করা চাট্টিখানি কথা নয়। এই সমস্যাগুলোর কারণে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তার ওপর প্রতি মাসে নতুন করে ১০ লাখ কর্মী বা শ্রমিক শ্রমবাজারে এসে ঢুকছে। মোদি সরকার উন্নয়নের পথে অন্তরায় এই শ্রম আইন ও ভূমি সংস্কারের ক্ষেত্রে সামনে এগোতে পারছে না কারণ তাদের সামনে আছে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে কয়েক ডজনেরও বেশি রাজ্য বিধান সভার নির্বাচন। মোদি জানেন এই দুই সংস্কারে হাত দিতে গেলে বিরোধী দল কংগ্রেস ও দুর্নীতিবিরোধী আমআদমী পার্টি বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনবে যে তারা শ্রমিক ও কৃষকদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বৃহৎ ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিচ্ছে। এ অবস্থায় ভোটার ধরে রাখার জন্য মোদি সরকার এমন সব ইস্যুতে হাত দেয়ার চেষ্টা করছে সেগুলো জনপ্রিয়তা পাবে। দুর্ভাগ্যবশত এই কৌশলটা শুরু হয়েছে পাকিস্তানের প্রতি অতি কঠোর মনোভাব গ্রহণের মধ্য দিয়ে। একজন জনপ্রিয় কাশ্মীরী জঙ্গী নেতার হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে অশান্ত হয়ে উঠেছে কাশ্মীর উপত্যকা। জম্মু ও কাশ্মীরে চলছে সহিংসতা। এ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের কর্মকর্তারা একে অপরকে দুষছে। পাকিস্তানের সমালোচনা করে মোদি দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলছেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতির সম্ভাবনা আপাতত দৃশ্যপটের আড়ালে হারিয়ে গেছে। ওদিকে আবার হিন্দু জাতীয়তাবাদের পুনরুত্থান ভারতের অভ্যন্তরে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে। ‘ন্যূনতম সরকার কাঠামো এবং সর্বাধিক মাত্রায় দেশসেবা’ এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোদির বিজেপি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেছিল। স্থবির অর্থনীতি এবং দুর্নীতিজর্জর কংগ্রেস পার্টির অক্ষমের মতো দেশ পরিচালনায় ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে নিম্নবর্ণের এবং সামাজিক দিক দিয়ে উদার উচ্চ বর্ণের বহু লোক বিজেপির সনাতনী হিন্দু জাতীয়তাবাদ নিয়ে উদ্বেগকে পাশে সরিয়ে রেখে দলটির পক্ষে ভোট দিয়েছিল। এখন আবার ধর্ম, বর্ণ ও দেশ নিয়ে পুরনো বিতর্ক ফিরে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিজেপির সমর্থক ও সমালোচকদের মধ্যে সংঘাত হচ্ছে। তা নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ হচ্ছে। মোদির অর্জন বলতে অনেক কিছুই আছে এবং ভারতের সার্বিক অর্থনৈতিক চিত্রটা মূলত ইতিবাচক। তবে প্রগতির গতি মন্থর হতে যেতে বসেছে এবং অতীতের প্রেতাত্মারা মাথার ওপর চক্রাকারে ঘুরছে। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×