ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মেক্সিকো ॥ অভিবাসী শ্রমিকদের মজুরি যুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৭:১২, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মেক্সিকো ॥ অভিবাসী শ্রমিকদের মজুরি যুদ্ধ

মেক্সিকোর অভিবাসীদের নিয়ে আমেরিকার অভিযোগ ও বিরাগ আজকের নয়। আমেরিকার অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি এদের উন্নত জীবিকার আকর্ষণে বার বার টেনে এনেছে। এতে আমেরিকার শ্রমবাজার প্রসারিত হয়েছে। শ্রমের দাম থেকেছে কম। কিন্তু আমেরিকার পাড়ি জমানো মেক্সিকানদের সিংহভাগই বেআইনীভাবে আসা। ১৯৩০ ও ১৯৫০-এর দশকে এদের পাইকারিভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। ১৯৭৬ সালে প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড কোর্ড তার দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে যারা নাক গলাচ্ছে সেই ৬০ থেকে ৮০ লাখ বেদেশীর হাত থেকে সর্বোত্তম কি উপায়ে পরিত্রাণ পাওয়া যায় তা নিয়ে ভাবিত ছিলেন। বেআইনী অভিবাসীদের নিয়ে হালে ট্রাম্পও সমানে হৈচৈ জুড়ে দিয়েছেন। আমেরিকায় ২০০৭ সালের পর অনিবন্ধিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমে গেছে। ২০১৫ সালে মার্কিন সীমান্তে ১০ লাখ ৮৮ হাজার মেক্সিকান ধরা পড়েছে। অথচ ২০০০ সালে ধরা পড়েছিল ১৬ লাখ। সংখ্যাটা এত কমে আসার কারণ অর্থনৈতিক মঙ্গার জন্য মার্কিন শ্রমবাজারের আকর্ষণ কমে গেছে। আরেক কারণ মার্কিন সীমান্ত আগের চেয়ে অনেক কড়াকড়ি করা হয়েছে। এসব সত্ত্বেও অনিবন্ধিত বা বেআইনী অভিবাসীরা এখনও মার্কিন শ্রমশক্তির ৫ শতাংশ। অন্যান্য অভিবাসীর প্রভাব থেকে বেআইনী অভিবাসীর প্রভাবের পার্থক্য টানা কঠিন। তবে মেক্সিকানদের অনেকেই অদক্ষ বা স্বল্প দক্ষ তাদের পক্ষে বৈধ পথে আমেরিকায় পাড়ি জমানোর কোন উপায় বলতে গেলে নেই। এ জন্যই তারা বেআইনী পথ বেছে নেয়। এ জন্যই দেখা যায় যে যুক্তরাষ্ট্রে যাবতীয় বেআইনী অভিবাসীর প্রায় অর্ধেক হলো মেক্সিকোর লোক এবং বৈধ অভিবাসীর মাত্র এক-পঞ্চমাংশ হলো তারাই। মেক্সিকানদেরই বেশি অদক্ষ হওয়ার কারণ অন্যান্য অভিবাসীর তুলনায় তাদের শিক্ষা-দীক্ষা কম। ২০১৪ সালে প্রায় ৬০ শতাংশ মেক্সিকান অভিবাসীর শিক্ষাগত অবস্থা ছিল মাধ্যমিক স্কুলের নিচে, যেখানে এমন শিক্ষার মান অন্যান্য দেশের অভিবাসীর মান ছিল ২০ শতাংশেরও কম। বেআইনী অভিবাসীরা সার্ভিস ও নির্মাণ খাতে বৈধ অভিবাসীদের চেয়েও বেশি সংখ্যায় কর্মরত। এখন এই অদক্ষ শ্রমিকদের সংখ্যা কি? বিষয়টি একেক জন একেক মানদ-ে বিচার করেন। তবে অনেকে হাই স্কুল পাস ও ড্রপআউটদের অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে ধরেন। সেই মানদ-ে ২০১৪ সালে আমেরিকায় ২৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী এমন শ্রমিকদের সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৪০ লাখ। প্রশ্ন ওঠে যে অভিবাসী শ্রমিক ও দেশী শ্রমিকরা কি পরস্পরের বিকল্প বা পরিপূরক, নাকি পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী? গবেষণায় দেখা গেছে যে অভিবাসীদের আগমন বেড়ে গেলে দেশীয় অদক্ষ শ্রমিকরা ইংরেজীর ওপর নিজেদের দখলকে কাজে লাগিয়ে কাজে বিশেষত্ব অর্জন করে থাকে। এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে ১৯৯০ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে অভিবাসন আমেরিকান বংশোদ্ভূত অদক্ষ শ্রমিকদের মজুরির ওপর সামান্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। তবে তা আগের প্রজন্মের অভিবাসীদের মজুরি ৬০৭ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছিল। সবচেয়ে খারপা চিত্রটি হচ্ছে অভিবাসনের পরিণতিতে ২০ বছর হাই স্কুল ড্রপআউটদের মজুরি প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে যা প্রযুক্তি ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের প্রভাবের তুলনায় খুব বেশি নয়। ধারণা করা হয় যে দেশীয় শ্রমিক ও নতুন অভিবাসীরা যত বেশি একেৎ অপরের বিকল্প হতে পারবে ততই অভিবাসনের কারণে আপেক্ষিক মজুরির পরিবর্তন ঘটবে। বেআইনী অভিবাসীরা যে বৈধ অভিবাসীদের মজুরি কমিয়ে দেয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এর একটা কারণ সে সব কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান অনিবন্ধিত অভিবাসীদের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেয় তাদের নিয়মিত পে-রোলের অন্তর্ভুক্ত করে না। ফলে তাদের ন্যূনতম মজুরি ও অন্যান্য বিধিবদ্ধ সুযোগ-সুবিধা দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। শিকাগো, লস এ্যাঞ্জেলস ও নিউইয়র্কে ২০০৮ সালে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় যে ২১ শতাংশ বৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের তুলনায় ৩৭ শতাংশ বেআইনী অভিবাসী শ্রমিককে ন্যূনতম মজুরিরও কম মজুরি দেয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই বেআইনী অভিবাসীদের এক স্থানের চাকরি ছেড়ে আরেক স্থানের চাকরি নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। স্থানান্তর গমনে এই অপারগতার কারণে তাদের দরকষাকষির ক্ষমতা হ্রাস পায়। এতে তাদের মজুরি বৃদ্ধি নিশ্চিতভাবে থমকে দাঁড়ায়। ২০০৯ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায় দশ বছরের কম সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র থাকা বৈধ অভিবাসীদের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি আয় করেছে। আর যারা ১২ বছরের বেশি সময় ধরে আছে তাদের ক্ষেত্রে এই ব্যবধানটা ৪২ শতাংশ। তার পরও বলতে হয় এই দুই শ্রেণীর অভিবাসীর মজুরি দেশজ শ্রমিকদের মজুরির তুলনায় কম। বেআইনী অভিবাসীদের কম মজুরির বিপরীত চিত্রটা হলো যারা কাজ নিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় তাদের জন্য বৃহত্তর অর্থনৈতিক সুবিধা। অন্তত এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হলে ট্রাম্প যদি প্রেসিডেন্ট হয়ে সব বেআইনী অভিবাসীকে দেশ থেকে বের করে দেন তাহলে অর্থনীতি দারুণ মার খাবে। স্রেফ এ্যারিজোনার কথাই ধরা যাক। ২০০৭ সালে বেআইনী অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর ফলে অর্থনীতি ২ শতাংশ সঙ্কুুচিত হয়েছিল। ট্রাম্পের অমন পদক্ষেপে বেশিরভাগ শ্রমিকের আয় কমে যাবে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট
×