ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর;###;শ্রাবণী সান

কুক-মরগানের কেন এই দ্বিমুখী সিদ্ধান্ত?

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কুক-মরগানের কেন এই দ্বিমুখী সিদ্ধান্ত?

ইংলিশ ক্রিকেটের ইতিহাসে এতটা আলোচনার আর কোন সফর নিয়ে হয়নি, যেটি হলো বাংলাদেশ সফরের বেলায়। কারণটা সবারই জানা। নিরাপত্তার অজুহাত। ইংলিশরা শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়েই বাংলাদেশে আসছে। তবে দুটি ভিন্ন কারণে আলোচনায় দেশটির ভিন্ন ফরমেটের দুই অধিনায়ক এ্যালিস্টার কুক ও ইয়ন মরগান। যে কুককে নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল সেই তিনি আসছেন টেস্ট অধিনায়ক হিসেবেই। অথচ, নিরাপত্তা শঙ্কায় নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ওয়ানডে ও টি২০ অধিনাক মরগান। ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ তো বটেই, তাদের এই দিমুখী সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ব্যাপক আলোড়ন তোলে। চলতি মাসের শেষ দিকে দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হতে যাচ্ছেন কুক। কিন্তু টেস্ট অধিনায়ক সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে সতীর্থদের কীভাবে পাঠান? সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে দলের প্রয়োজনে তাই পরিবারকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন, দেশের ক্রিকেটের স্বার্থেই এই সফরে তাঁর আসাটা ভীষণ প্রয়োজন। ইসিবির নিরাপত্তা প্রস্তাবেও সন্তুষ্ট তিনি। কুকসহ শেষ পর্যন্ত প্রায় সব ক্রিকেটারই বাংলাদেশে আসতে রাজি হন (মরগান ও এ্যালেক্স হেলস বাদে)। মরগানের সরে দাঁড়ানোটাই তাই বেশি আলোচিত। ঢাকা ও মুম্বাইয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশ নিয়ে দুটি বিরূপ অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। ইংলিশ ওয়ানডে-টি২০ সেনাপতি বলেন, ‘আইপিএলে একবার ম্যাচ খেলার সময় বাইরে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছিল। তখন দ্রুত বিমানবন্দরে চলে যাই। আবার বাংলাদেশে যখন প্রিমিয়ার ডিভিশনে খেলতে গিয়েছিলাম, তখন সেখানে নির্বাচনী সহিংসতা ছিল ভয়বাহ। এ রকম পরিস্থিতি আমাকে বিক্ষিপ্ত কর দিয়েছিল। নিজেকেই প্রশ্ন করেছি, আবার এমন পরিস্থিতিতে পড়তে চাই কি না।’ ক্রিকইনফোকে দেয়া সাক্ষাতকারে এমন মন্তব্য করেন মরগান। যাতে সফরের ব্যাপারে তার নেতিবাচক মনোভাব ফুটে ওঠে। তবে ২৯ বছর বয়সী ইংলিশ তারকা সরাসরি ‘না’ বলেননি। ২০১৩ সালে গাজী ট্যাঙ্ক ক্রিকেটার্সের হয়ে প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেটে খেলতে মরগান ঢাকায় এসেছিলেন। নির্বাচনী সংহিংসতায় বাংলাদেশে তখন খুব বাজে অবস্থা। বিক্ষুব্ধ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পেট্রোলবোমায় সন্ত্রস্ত জনপদ। তার আগে ২০১০ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) রয়ল্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে খেলার সময়ও মরগানের এমন ভীতিকর অভিজ্ঞতা হয়েছিল। চিন্মস্বামী স্টেডিয়ামে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ম্যাচ শুরুর আগে স্টেডিয়ামের বাইরে দুটি বোমার বিস্ফোরণ হয়েছিল। পরে অবশ্য খেলাটি শেষ হয়েছিল। ‘আইপিএলে সেদিন ম্যাচ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের বিমানবন্দুরে নিয়ে যাওয়া হয়।’ বলেন মরগান। বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আমি নিরাপত্তা নিয়ে ওই দুটি ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। তখনই নিজেকে বলেছিলাম, আর কখনোই এমন পরিস্থিতিতে পড়তে চাই না। ক্রিকেট মানে তো অন্য কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা নয়। এটা হওয়া উচিত আপনার জীবনের সেরা আনন্দের সময়। উপভোগের। সারাক্ষণ মনের মধ্যে যদি ভয় কাজ করে, তবে কিভাবে খেলা সম্ভব?’ গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইংল্যান্ড দলের বাংলাদেশ সফর নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছিল। পরে ইসিবির পর্যবেক্ষক দল ঢাকা ও চট্টগ্রাম ঘুরে গিয়ে গ্রিন সিগন্যাল দেয়। ইসিবি সফরের বিষয়টি ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেয়। কুকসহ প্রায় সব তারকা ক্রিকেটার সফরে রাজি হয়। এমন কি দলটির প্রধান কোচ অস্ট্রেলিয়ান ট্রেভর বেইলিস, সহকারী পল ফারব্রেস সফরের জন্য চূড়ান্তভাবে তৈরি। বাস্তবতা মেনেই তারকা অলরাউন্ডার মঈন অনেক বেশি ইতিবাচক, ‘প্রত্যেক ক্রিকেটারের ভিন্ন মত থাকতে পারে। তবে কারও ওপর চাপ নেই। বাস্তবতা হচ্ছে, পৃথিবীর কোন দেশই এখন পরিপূর্ণ নিরাপদ নয়। যদি বাংলাদেশ সফরের দলে নির্বাচিত হই, তাহলে অবশ্যই সেখানে যাব। এজন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আমি শতভাগ ইতিবাচক।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘সফর সবার ব্যক্তিগত ব্যাপার। ইসিবি আগেই সেটি বলেছে। কেউ বাংলাদেশে যেতে না চাইলে সবারই উচিত তার পাশে থাকা। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ মরগানের বাংলাদেশ সফরে না আসার সিদ্ধান্তকে ‘অ-ক্রিকেটীয়’ আখ্যা দিয়ে তাকে অধিনায়কত্বের পদ থেকে সরিয়ে দিতে দেশটির মিডিয়ায় জোর দাবি উঠেছিল। কিন্তু ইংলিশ ক্রিকেটপ্রধান ও সাবেক তারকা ক্রিকেটা স্ট্রস জানিয়ে দিলেন আপাতত মরগানকে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করা হচ্ছে না। তবে রঙিন পোশাকের অধিনায়কের সিদ্ধান্তে তিনি খুব একটা খুশি হতে পারেননি, ‘সফরে না যাওয়ায় এ জুটির বিপক্ষে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না। তবে মরগানই বাংলাদেশর পর আসন্ন ভারত সফরে ওয়ানডে সিরিজে দলের নেতৃত্ব দেবেন।’ দলে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘দুজনেই বিশেষ করে মরগান গত এক বছর যাবত ইংল্যান্ডের হয়ে দারুণ পারফরমেন্স করে আসছেন। কেউ কেউ হয়তোবা দলে এসে অবিশ্বাস্য ভাল করতে পারে। তবে মরগান পুনরায় অধিনায়ক হিসেবেই থাকবেন এবং হেলসও দলে ফিরবেন।’ এর আগে ইসিবির প্রধান নির্বাচক হুইটেকার বলেছিলেন, অধিনায়ক হিসেবে ইয়ন (মরগান) ভাল করছে। গত কয়েক বছর দলকে সে দারুণভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তার কাজ দক্ষতার সঙ্গে করছে। আমি আশা করব ভারত সফরে অধিনায়ক হিসেবেই সে আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে। গত জুলাইয়ে গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর এ সফর নিয়ে কিছুটা সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল। তবে ইসিবির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা রেগ ডিকাসন বাংলাদেশ সফরে এসে নিরাপত্তার সার্বিক বিষয় দেখে সন্তোষ প্রকাশ করলে সফর চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় ইংল্যান্ড কর্তৃপক্ষ। তবে ডিকাসনের নিশ্চয়তার সিদ্ধান্তের প্রতি মরগান ও হেলস সম্মান না দেখানোয় খুশি নন স্ট্রস। অবশ্য উভয়ের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন তিনি। তিন ওয়ানডে ও দুটি টেস্ট খেলতে ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। এরপর ভারত সফরে ইংলিশরা পাঁচ টেস্টের দীর্ঘ সিরিজ (৯ নবে-২০ ডিসে’১৬) শেষে তিনটি করে ওয়ানডে ও টি২০ (১৫ জানু - ১ ফেব্রু ’১৭) খেলবে।
×