ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দালাল ও ভূমি কর্মকর্তাদের যোগসাজশ

কলাপাড়ায় ফ্রি স্টাইলে খাল দখল

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কলাপাড়ায় ফ্রি স্টাইলে খাল দখল

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২০ সেপ্টেম্বর ॥ স্থানীয় কৃষকদের ভাষায় নামটি কাছারির খাল। এখন পানিতে টইটম্বুর। খালটিতে শাপলা ফুটে বিচিত্র রূপ নিয়েছে। আশপাশের অন্তত পাঁচ বর্গকিলোমিটার এলাকার কৃষিজমির পানি ওঠা-নামা করে খালটি দিয়ে। শুকনা মৌসুমেও পানি থাকে। ধুলাসার ইউনিয়নের চাপলী বাজারের একটু পাশেই এ খালটির অবস্থান। খালটির শেষদিকে বাঁধঘেঁষা কয়েকটি বসতিও রয়েছে। তাদের দাবি, ১৯৮০ সালে তারা খালের পাড়ে বসতি গেড়েছেন। পুরনো নারিকেল গাছ রয়েছে। আর তখন খালটির গভীরতা ছিল অন্তত কুড়ি ফুট। অথচ ১৯৮৪ সালের দিকে ওই খালকে চাষযোগ্য কৃষিজমি দেখিয়ে ভূমি অফিস ১৩ জনকে বন্দোবস্ত দিয়েছে। তারা এতদিন ঘাপটি মেরেছিলেন। ২০১৪ সালের শেষদিকে খালটি দখল করে বাড়িঘর ও পুকুর করা হয়েছে। সেখানকার জামাল শিকদার, শহীদ শিকদার খাল দখল করে এসব করছেন। তবে বন্দোবস্তের মূল মালিক তাদের বাবা মোসলেম শিকদার। এমনকি খালের শেষাংশে বসবাস করা একটি পরিবারকে উচ্ছেদের জন্য তারা হুমকিও দিয়ে আসছে। খালটি দখলের কারণে দুই পাড়ের জমির মালিক ও প্রান্তিক চাষীরা চরম উৎকণ্ঠায় পড়েছেন চাষাবাদ নিয়ে। লালুয়া ইউনিয়নের মনিরগুঠিয়া গ্রামের নিমলার খালটি দখল করে বাঁধ দিয়ে করা হয়েছে মাছের ঘের। স্থানীয়রা জানালেন, ৬৪৮ ও ৭০১ দাগের অংশ দখল চলছে এভাবে। আলেফ মৃধার নেতৃত্বে সেলিম ফকির, ইয়াসিন ফকির, আনছারগং খালটি দখল করেছে। মিঠাগঞ্জের তেগাছিয়া বাজারের স্কুলের পাশের খালটিতে অন্তত ৩০টি বাঁধ দেয়া হয়েছে। একই দৃশ্য আজিমউদ্দিন-চরপাড়া সøুইস খালের। এ খালের আবার মানুষের বসতবাড়ি মিলিয়ে ছত্তার বয়াতী নামে একজনকে চাষযোগ্য জমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। গ্রামটির শতাধিক মানুষ এ অবৈধ দখলকাজ বন্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু ভূমি অফিসের কানুনগো সেখানে যেতে পারেননি। অন্তত দেড় বছর আগের অভিযোগ ছিল এটি। ময়ূরের খালটি তো যে যার মতো দখল করে নিয়েছে। আবগঞ্জের খালের দৃশ্য ওই। চরপাড়ার সøুইস খালটির আগার দিকে ভরাট করে চাষাবাদ করা হচ্ছে। নীলগঞ্জের টুঙ্গিবাড়িয়া, নিজকাটা, পাখিমারা, নবাবগঞ্জের একই হাল। হাজীর খালটি দখল করে মাছ চাষ করছে সেখানকার এক ছাত্রলীগের কর্মী। টিয়াখালীর অন্তত ১০টি খাল অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। ভরাট করে সেখানে বাড়িঘর তোলা হয়েছে। চাকামইয়ার তারিকাটার দীর্ঘ খালটিতে অন্তত ২৫টি বাঁধ দেয়া হয়েছে। ডালবুগঞ্জের খাপাড়াভাঙ্গা গ্রামের এক কোরালিয়ার দীর্ঘ সøুুইস খালটিতে সেখানকার দুলাল হাওলাদারগং আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে নিজের দখলে নিয়েছে। সেখানে এখন অন্য কেউ মাছও শিকার করতে পারছে না। মহিপুরের সুধিরপুর, মুলামের খালের একই দশা। চাকামইয়ার আনিপাড়ার দীর্ঘ খালটিতে বাঁধ আর দখল চলছে এক যুগ আগে থেকে। সøুইস সংযুক্ত এ খালটিতে এখন সাধারণ মানুষ মাছ শিকার করতে পারছে না। প্রভাবশালীরা যা খুশি তাই করছে। এভাবে ফ্রি স্টাইলে যে যার মতো খাল দখল করে চলছে। কিন্তু প্রতিটি তহশিলের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তারা সরকারের এ স্বার্থরক্ষায় ন্যূনতম আন্তরিক নয়। উল্টো কোন সচেতন কৃষক কৃষিকাজের স্বার্থে তাদের অবহিত করলে ধমক দেয়া হয়। বর্তমানে কলাপাড়ায় যেভাবে খাল দখল চলছে তাতে খাদ্যে উদ্বৃত্ত এ জনপদে কৃষিকাজে ব্যাপক বিপর্যয় শুরু হয়েছে। কৃষি উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। এ বছরই আউশের আবাদ ভেস্তে গেছে। উপজেলা কৃষি অফিসের দু’বছর আগের দেয়া তথ্যানুসারে কলাপাড়ায় বর্তমানে খাদ্য চাহিদার দ্বিগুণের বেশি খাদ্যশস্য উদপাদন হচ্ছে, যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। এর অন্যতম একটি কারণ খাল দখল ও ভরাট। কৃষক মৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট বালিয়াতলী ইউনিয়নের বাসিন্দা মোসাম্মৎ মর্জিনা জানান, খাল ভরাট এবং দখলের কারণে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। কৃষকের বীজতলা থেকে শুরু করে আমন চারা পচে যায়। আর দখলদাররা শুকনা মৌসুমে লোনা পানিতে তলিয়ে দেয় কৃষিজমি। রবিশস্য কিংবা শীতকালীন সবজির আবাদ করতে পারছে না। সকল খালের পানির প্রবাহ সচল রাখতে দখলমুক্ত করা প্রয়োজন বলে এ কৃষক নেত্রীর দাবি। আর এ কারণে কৃষিকাজে বিপর্যয় শুরু হয়েছে। কুয়াকাটার মাঝীবাড়ি এলাকায় জেএলনং ৩৪-এর লতাচাপলী মৌজার ১নং খাস খতিয়ানের ৪৭৫৬ ও ৪৭৫৭ দাগের একটি খাল ভরাট করে দেড় একর জমি দখল করে নবোদয় হাউজিং কোম্পানি তাদের প্রকল্পভুক্ত করে নেয় ২০০৪ সালের চারদলীয় জোট সরকারের সময়।
×