ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনা

রাজশাহীতে বাড়ছে শিল্প খাতে বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

রাজশাহীতে বাড়ছে শিল্প খাতে বিনিয়োগ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ ‘শিল্পহীন রাজশাহীতে’ ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে বিদেশী বিনিয়োগ। শিক্ষানগরী হিসেবে খ্যাত বিভাগীয় এ শহরে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী ছিলেন অনেকে। কিন্তু গ্যাস সংযোগ আসার পর এখানে বিনিয়োগ বেড়েছে শিল্প খাতে। দেশী-বিদেশী নাম করা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখন আগ্রহী রাজশাহীতে বিনিয়োগে। এরই মধ্যে অনেকে বিনিয়োগ করেছেন, আবার অনেকে বিনিয়োগের প্রাথমিক কাজ সেরে রেখেছেন। ফলে কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে রাজশাহীকে ঘিরে। কৃষি নির্ভর রাজশাহীর অর্থনীতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে ক্রমেই। ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানি রাজশাহীতে ইতোমধ্যে বিনিয়োগ করছে। ইতোমধ্যেই ভারতীয় একটি কোম্পানি তাদের মোটরযান কারখানা চালু করেছে। আর কোরিয়া কোম্পানিগুলোর রাজশাহী বিনিয়োগ করার প্রক্রিয়াও অনেক দূর এগিয়ে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি। এছাড়াও চায়নার একটি কোম্পানিও রাজশাহীতে বিনিয়োগ করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানান ব্যবসায়ী নেতা মনি। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি মোটরযান নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কর্তারা রাজশাহী এসে ঘুরে গেছেন। রাজশাহীতে অটোকার তৈরির কারখানা স্থাপনে রাজশাহী বিসিকে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি মোটরযান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। বিএমজি, কেআরডব্লিউ, জিনওয়া কোম্পানি লিমিটেড ব্যাটারিচালিত অটোকার তৈরি করবে, যা বাংলাদেশের বাজারের সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপ ও আমেরিকায় রফতানি করা হবে। এর আগে গত বছরের মার্চ মাসে টাটা মোটরসের সহযোগিতায় রাজশাহীতে প্রথম মোটর শিল্প প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন হয়। এখান থেকে বছরে ৪০ হাজার টেম্পো বডি তৈরির সম্ভাব্যতা রয়েছে। রাজশাহী বিসিক শিল্প এলাকায় সাত বিঘা এলাকাজুড়ে এই কারখানাটি স্থাপন করেছে নিটল-নিলয় গ্রুপ। আর এর ব্যবস্থাপনায় থাকছে মিতা কোম্পানি লিমিটেড। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি মোটরযান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বিএমজি, কেআরডব্লিউ, জিনওয়া কোম্পানি লিমিটেডের বিষয়ে এনা গ্রুপের চেয়ারম্যান এনামুল হক এমপি সম্প্রতি বলেন, গত বছরের ২৬ মার্চে এনা গ্রুপের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার ওই তিনটি মোটরযান নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী রাজশাহীতে এনা গ্রুপের জমিতে অটোকার তৈরির কারখানা স্থাপন করবে তারা। যার জন্য তারা ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। এছাড়া এরই মধ্যে রাজশাহীর দামকুড়ায় ফিশ ফিড কারখানাটি ১৫২ কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে তোলা হয়। আরও ৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগ অপেক্ষায় আছে। এসিআই ও ভারতের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গোদরেজ এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছে। নাহার অটো মোবাইল কারখানা ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এরই মধ্যে উৎপাদনে এসেছে। রাজশাহী বিসিকের শিল্পনগরী কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম জানান, হাশেম গ্রুপ, আবদুল মোনেম লিমিটেড নামের আরও দুইটি বড় শিল্প গ্রুপ রাজশাহীতে বিনিয়োগে আগ্রহী। তাদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শেষ হয়েছে। শীঘ্রই অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে। বিনিয়োগে ব্যবসায়ীদের আগ্রহের কথা মাথায় রেখে রাজশাহী বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণের প্রস্তাব সংবলিত ডিপিপি ইতোমধ্যে একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। সে মোতাবেক ৩০ একরের বদলে ৫০ একর জমির ওপরে ১৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ৩০৮টি নতুন শিল্পপ্লট তৈরি হবে বলেও জানান তিনি। রাজশাহী চেম্বারের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি বলেন, রাজশাহী কৃষি প্রধান অঞ্চল। এ অঞ্চল দেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক পিছিয়ে। এখানকার মানুষ কৃষিনির্ভরের কারণে অর্থনৈতিকভাবে অন্য অঞ্চলের তুলনায় পিছিয়ে আছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠিত হলে এ অঞ্চলের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। রাজশাহী বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আজাহারুল ইসলাম জানান, যেভাবে ব্যবসায়ীরা রাজশাহীতে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন, তাতে এ অঞ্চলে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। এতে করে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
×