ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কেন এত নৃশংসতা!

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কেন এত নৃশংসতা!

সমাজে কি নৃশংসতা বেড়ে গেল! গত কয়েকদিনের সংবাদপত্রে এমন কিছু নৃশংসতার সংবাদ বেরিয়েছে যেগুলো অপ্রত্যাশিত, অভাবিত। বিবিধ উপায়ে খুনখারাবির বিবরণ পড়তে পড়তে আমাদের অনুভূতি যখন প্রায় ভোঁতা হতে বসেছে, ঠিক সে সময় অত্যাশ্চর্য অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এসে আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি আবার বিচার-বিবেচনাবোধও যেন অসার হয়ে উঠছে। কত নির্মমতা সইবে মানবজীবন? প্রথমে আসা যাক প্রেম নিবেদনে সাড়া না পাওয়া ‘প্রেমিকদের’ নির্মম প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে। আগে সমাজে প্রেমে ব্যর্থ হলে ছেলেরা হয় নিজেকে নিঃশেষ করে দিত, তা না হলে সংসারবিরাগী হয়ে উঠত। তাদের অনেকেই সারা জীবনে বিয়ের পথ মাড়াতো না। কিন্তু কখনই সেইসব প্রেমিকরা বর্বরতার পথ বেছে নিত না। তারা প্রেমিকার কল্যাণই কামনা করত। হ্যাঁ, প্রেমাষ্পদার মুখে এসিড ছোড়ার মতো ঘটনা কিছু ঘটেছে বটে, এখনও ঘটে থাকে। কিন্তু সেসব সংখ্যায় কম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যর্থ প্রেমিকরা আক্রমণাত্মক না হয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। ইদানীং আমরা দেখছি প্রেম নিবেদনে সাড়া না পাওয়া ‘পুরুষেরা’ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হয়ে উঠছে। কদিন আগে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার নবগ্রামের কিশোরী মিতু ম-লকে কুপিয়ে খালে ফেলে যায় একই গ্রামের যুবক মিলন ম-ল। গ্রামবাসী তাকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে দিয়েছে। এ ঘটনায় আমাদের মনে পড়ে যাবে মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে রাজধানীর ব্যস্ত এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে স্কুলছাত্রী রিশাকে ছুরিকাঘাত করার ঘটনাটি। বৃহস্পতিবার বরগুনার আমতলিতে এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। প্রেমের উল্টোপিঠে থাকে ঘৃণা। এখন দেখা যাচ্ছে একতরফা প্রেমের বিপরীত পাশেই থাকে হত্যা পরিকল্পনা! কোমলমতি মেয়েদের এইসব পাষ- কুলাঙ্গারদের হাত থেকে রক্ষার উপায় বের করতেই হবে। পথে-ঘাটে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার বিষয়টি কমেছে বলে অনেকে মনে করেন। আসলে কি কমেছে? কোথায় চলেছে আমাদের সমাজ! কুপিয়ে সন্তান হত্যা করেছেন এক মা রাজশাহীতে। সাত বছরের ছেলে কাব্যকে মেরে তিনি নিজেও মরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হয় আত্মহত্যা প্রচেষ্টা। কাব্যর বাবা স্কুলশিক্ষক। আর রংপুর শহরে ২২ মাসের কন্যা সন্তানকে গলা টিপে মেরে রিক্সাচালক বাবা পলাতক! দেখা যাচ্ছে নিজ বাবা-মায়ের কাছেই তাদের সন্তানরা অনেক সময় নিরাপদ নয়। এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে। সন্তানও পিতা-মাতার ওপর হামলা চালাচ্ছে, হত্যা করছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে ছেলের আঘাতে বাবার মৃত্যু হয়েছে শুক্রবার। এসব ঘটনা গত কয়েকদিনের চিত্র মাত্র। সারা বছরের হিসাব নিলে রীতিমতো বাকরুদ্ধ হয়ে পড়তে হবে। মানুষের মাঝ থেকে মানবিকতা ও মূল্যবোধ কি হারিয়ে যেতে বসেছে! মানুষ প্রতিশোধ নেয়ার জন্য চরম পথটাই বেছে নিচ্ছে, অর্থাৎ টার্গেট ব্যক্তিকে খুন করছে। সে খুনটাও করছে অত্যন্ত নৃশংস পদ্ধতিতে। গোটা সমাজের সবাই নিশ্চয়ই অসুস্থ হয়ে যাননি। তাই করণীয় রয়েছে বহুকিছু। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকেই পরিত্রাণের পথ সন্ধান করতে হবে। শিক্ষককে তার শিক্ষাপ্রদানের মধ্য দিয়ে সমাজের এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে দিকনির্দেশনা দিতে হবে; পরিবারের প্রধান ব্যক্তি বোঝাবেন পরিবারের অন্য সদস্যদের। পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে পড়লে সেটি মেরামতের দায়িত্ব ছোটবড় সবাইকে নিতে হবে। সাহিত্য-সংস্কৃতির আলো ছড়িয়েও এ ধরনের হীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো জরুরী। প্রেম-ভালোবাসার গূঢ় তাৎপর্য ও এর সহনশীল সৌন্দর্যের দিকগুলো তরুণদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে সৃজনশীলতার মধ্য দিয়ে। প্রত্যেকেরই নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দের দিক আছে। ভালবাসায় জোরাজুরি চলে না। বখাটেদের ব্যাপারে আমাদের মত স্পষ্ট। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কোন বিকল্প নেই।
×