ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন

বানভাসির এই দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কমতি নেই। ভূমিকম্পও চোখ রাঙাতে শুরু করেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে হিসেব কষতে হচ্ছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমরা কতখানি সক্ষম। জাতিসংঘের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংক্রান্ত ‘বিশ্ব ঝুঁকি প্রতিবেদন-২০১৬’-এ দেখা যাচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৭১টি দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সামাজিক ঝুঁকি প্রবণতার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশের স্থান পঞ্চম সেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবস্থান সাতাত্তর। ঝুঁকি সূচকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে ঘূর্ণিঝড়, খরা, ভূমিকম্প, বন্যা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর ঘাটতি ও জরুরী উপকরণের দুর্বল ব্যবস্থাপনা প্রাকৃতিক যে কোন দুর্যোগকে বিপর্যয়ে পরিণত করার ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তোলে। কোন দুর্যোগে যখন ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজন হয়, তখন লজিস্টিক চেনের শেষ পর্যায়ে গিয়েই আসল চ্যালেঞ্জটি দেখা যায়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা, বিদ্যুত বিপর্যয়, ভবন ধসই শুধু মানবিক ত্রাণ সহায়তায় বিঘœ সৃষ্টি করে না বরং এসব ত্রাণ সরবরাহে বিলম্ব বিপর্যয়কে আরও প্রলম্বিত করে তোলে। অস্ট্রেলিয়া খরা, ভূমিকম্প ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো ঝুঁকির মধ্যে থাকা সত্ত্বেও ঝুঁকি সূচকে ১২১তম অবস্থানে রয়েছে। এর কারণ স্পষ্ট। যথেষ্ট বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশটি ইতোমধ্যে এসব ঝুঁকি প্রশমনে সফল হয়েছে। জাপানকে (১৭তম) প্রতিনিয়ত ভূমিকম্প ও বন্যার মতো দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হলেও উন্নত ব্যবস্থাপনার কারণে দেশটি এখন কম ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশ বর্তমানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তবে এর বড় একটি অংশই যে আগাম সতর্কতামূলক সে কথা স্বীকার করে নেয়া ভাল। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন জনগোষ্ঠীকে সতর্ক করার জন্য মোবাইল ফোনভিত্তিক তিন ধরনের প্রযুক্তিনির্ভর দুর্যোগ সতর্কীকরণ পদ্ধতি সম্প্রতি প্রচলন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫৪টি জেলা এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে বাংলাদেশের একাধিক চ্যালেঞ্জ যে রয়েছে সে বিষয়টি উঠে আসে কয়েক মাস আগে জাইকার একটি সভায়। এর সুপারিশগুলোর মধ্যে ছিল : নজরদারি ও আইন প্রয়োগ বৃদ্ধি; বড় দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি জোরদার করা; জরুরী অবস্থায় সাড়াদান ব্যবস্থা জোরদার করা এবং দক্ষ জনবল তৈরি। চলতি বছর দেশের কয়কটি অঞ্চলের বন্যা মোকাবেলা থেকে আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের প্রশাসন দক্ষ। কিন্তু প্রতিবার এ দক্ষতার পরীক্ষা দিয়েই উত্তীর্ণ হতে হয়। পূর্বপ্রস্তুতি থাকলে বন্যার সম্ভাব্য ক্ষতি কমিয়ে আনার সুযোগ থাকে। তাছাড়া বন্যাসংক্রান্ত বড় চ্যালেঞ্জ হলো বন্যাপরবর্তী পুনর্বাসন ও পরিচর্যা। এক্ষেত্রে যে আরও সক্রিয়তা জরুরী তা বলাই বাহুল্য। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণে পর্যাপ্ত বাজেট থাকা চাই।
×