ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

জাপা এমপি হান্নান ও তার ছেলেসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জ দাখিল ৩১ অক্টোবর

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জাপা এমপি হান্নান ও তার ছেলেসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জ দাখিল ৩১ অক্টোবর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ময়মনসিংহের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এমএ হান্নান ও তার ছেলেসহ আটজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিলের জন্য আগামী ৩১ অক্টোবর দিন ধার্য করেছে ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত কিশোরগঞ্জ ও ব্রাক্ষণবািড়য়ার দুই রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন ও মোঃ মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৩তম সাক্ষী গোপাল চন্দ্র দাশ জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষ্যর জন্য আজ বুধবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন ও মোঃ মোসলেম প্রধানের নেতৃত্বে নিকলী বাজারে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেককে গুলি করে হত্যা করা হয়। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এমএ হান্নান ও তার ছেলেসহ আটজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিলের জন্য আগামী ৩১ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়েছে। মামলায় আসামিরা হলেনÑ ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের সাংসদ এমএ হান্নান, ছেলে মোঃ রফিক সাজ্জাদ (৬২), ডাঃ খন্দকার গোলাম ছাব্বির আহমাদ (৬৯), মিজানুর রহমান মিন্টু (৬৩), মোঃ হরমুজ আলী (৭৩), মোঃ ফখরুজ্জামান (৬১), মোঃ আব্দুস সাত্তার (৬১) ও খন্দকার গোলাম রব্বানী (৬৩)। এর মধ্যে আসামি মোঃ ফখরুজ্জামান, মোঃ আব্দুস সাত্তার ও খন্দকার গোলাম রব্বানী পলাতক রয়েছেন। বাকিরা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। আদালতে শুনানি করেন প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম ও রেজিয়া সুলতানা চমন। প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম সাংবাদিকদের জানান, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ শেষ না হওয়ায় আমরা সময় চেয়েছি। আদালত ৩১ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা গত ১১ জুলাই এ আটজনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখায় জমা দেয়। পরদিন এর ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপক্ষ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য দুই মাস সময় চাইলে আদালত ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেয়। চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, হত্যা ও লাশ গুমসহ পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। ২০১৫ সালের ১৯ মে ত্রিশালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমানের স্ত্রী রহিমা খাতুন এ মামলা করেন। ময়মনসিংহের ১ নম্বর আমলী আদালতের বিচারক পরে এজাহারটি গ্রহণ করে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দেন। তদন্ত সংস্থা ওই বছরের ২৮ জুলাই তদন্ত শুরু করে এ বছরের ১১ জুলাই তা শেষ করে। ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করলে ওই দিনই হান্নানকে গুলশানের নিজ বাড়ি থেকে এবং ছেলে রফিক সাজ্জাদকে ওই এলাকার একটি অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয়। একই দিন গ্রেফতার করা হয় ডাঃ খন্দকার গোলাম সাব্বির, মিজানুর রহমান মিন্টু ও হরমুজ আলীকে। কিশোরগঞ্জের দুই রাজাকার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত কিশোরগঞ্জ ও ব্রাক্ষণবািড়য়ার দুই রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন ও মোঃ মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৩তম সাক্ষী গোপাল চন্দ্র দাশ জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষ্যর জন্য বুধবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন ও মোঃ মোসলেম প্রধানের নেতৃত্বে নিকলী বাজারে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেককে গুলি করে হত্যা করা হয়। সাক্ষীকে জবানবন্দীতে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। আসামিপক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আব্দুস সোবহান তরফদার। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম গোপাল চন্দ্র দাশ। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৭ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম-মোহাম্মদপুর, থানা- নিকলী, জেলা- কিশোরগঞ্জ। আমি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। বর্তমানে আমি মাছের আড়তদারির ব্যবসা করি নিকলী নতুন বাজারে। ১৯৭১ সালে আমি নিকলী সদরে কেশবপুর গ্রামে বসবাস করতাম। তখন আমি নিকলী পুরাতন বাজারে মাছের ব্যবসা করতাম। ১৯৭১ সালের ১৯ অক্টোবর ভোরবেলা আমরা কোবরা বাহিনীর সদস্যগণ কমান্ডার মতিউর রহমানের নেতৃত্বে নিকলী সদরের পূর্ব দিকে থেকে রাজাকারদের আক্রমণ করি। ওই সময় নিকলী থানা রাজাকার কমান্ডার ছিল আসামি সৈয়দ মোঃ হোসাইন এবং নিকলী থানা সদর ইউনিয়নের রাজাকার কমান্ডার ছিল আসামি মোঃ মোসলেম প্রধান। সাক্ষী জবানবন্দীতে আরও বলেন, একপর্যায়ে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে দুপুরের পর আমরা পূর্বগ্রামের পূর্ব দিকে পিছু হটে আশ্রয়গ্রহণ করি। ওই দিন বিকেলে পূর্বগ্রামের আমাদেরসহ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক তার স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে নিরস্ত্র অবস্থায় তার বাড়িতে যায়। ওই দিন বিকেল আনুমানিক সাড়ে পাঁচটার দিকে পূর্বগ্রামের পশ্চিম দিকের দেবেন্দ্র চন্দ্র নাথের বাড়ির দিক থেকে একটি গুলির শব্দ শুনতে পাই। এর কিছুক্ষণ পর লোকমুখে শুনতে পাই যে, রাজাকাররা দেবেন্দ্র চন্দ্র নাথের বাড়ির সামনে রাস্তার ওপর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেককে গুলি করে হত্যা করেছে। আব্দুল মালেকের স্ত্রী আমাদের জনায়, ওই দিন বিকেলে আসামি রাজাকার মোঃ মোসলেম প্রধানসহ আরও কয়েকজন রাজাকার তার স্বামীকে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায়।
×